“ভগবান শিবের দ্বারা সৃষ্টি” -শ্যাম সুন্দর চক্রবর্ত্তী

0
836
www.natorekantho.com

ভগবান শিবের দ্বারা সৃষ্টি

যখন সর্বত্র ছিল শুধুই অন্ধকার ; সূর্যও দেখা যাচ্ছিল না,চন্দ্র বা অন্যান্য গ্রহ- নক্ষত্ররও কোনো খোঁজ ছিল না; দিনও হতো না,রাতও নয়। অগ্নি,পৃথিবী,জল ও বায়ুরও কোনো অস্তিত্ব ছিলো না- সেই সময় একমাত্র সৎ ব্রহ্ম অর্থাৎ সদাশিবেরই বিদ্যমান ছিলো,যাকে অনাদি ও চিন্ময় বলা হয়।সেই ভগবান সদাশিবকে বেদ,পুরাণ ও উপনিষদ এবং সাধু-মহাত্মা প্রমুখ সকলেই ঈশ্বর ও সর্বলোকমহেশ্বর বলে মেনে চলেন।

একবার শিবের মনে জগৎ সৃষ্টির ইচ্ছা হয়।তিনি ভাবলেন যে আমি এক থেকে বহু হয়ে যাব।এই চিন্তা হতেই পরমেশ্বর শিব সর্বপ্রথম তাঁর পরাশক্তি অম্বিকাকে জাগরিত করে তাঁকে বললেন যে সৃষ্টির জন্য আমদের অন্য কোনো পুরুষ সৃষ্টি করতে হবে,যার ওপর সৃষ্টি -সঞ্চালনের মহাভার অর্পণ করে আমরা আনন্দপূর্বক বিচরণ করতে পারব।এরুপ স্থির করে শক্তিসহ পরমেশ্বর শিব তার বাম অঙ্গের দশম ভাগে অমৃত লাগালেন।

সেখান থেকে তৎক্ষনাৎ এক দিব্য পুরুষ উৎপন্ন হল।তাঁর সৌন্দর্য ছিলো অতুলনীয়। তাঁর মধ্যে সত্ত্বগুনের প্রাধান্য ছিলো।তিনি পরম শান্ত এবং অতল সাগরের মত গম্ভীর, রেশমী পীতাম্বরে তাঁর অঙ্গশোভা দ্বিগুন করছিল।তাঁর চারটি হাতে শঙ্খ,চক্র,গদা,পদ্ম সুশোভিত ছিলো।

সেই দিব্য পুরুষ ভগবান শিবকে প্রণাম করে বললেন-‘ভগবান! আমার নামকরন করুন এবং কি করতে হবে বলুন।’ তাঁর কথা শুনে ভগবান শংকর স্মিত হাস্যে বললেন- ‘বৎস! ব্যাপক হওয়ায় তোমার নাম বিষ্ণু হবে।জগৎকে পালন করা হবে তোমার কাজ।এখন তুমি উত্তমরূপে তপস্যা করো।’
ভগবান শিবের আদেশ লাভ করে শ্রীবিষ্ণু কঠোর তপস্যায় রত হলেন।

সেই তপস্যার শ্রমে তাঁর অঙ্গ থেকে জলধারা নির্গত হল,যার দ্বারা শূন্য আকাশ ভরে উঠল।তারপর তিনি পরিশ্রান্ত হয়ে সেই জলে শয়ন করলেন।জল অর্থাৎ ‘ নার ‘ এ শয়ন করার জন্যই শ্রীবিষ্ণুর আর এক নাম৷ ‘ নারায়ণ ‘।
তারপর শায়িত নারায়নের নাভি থেকে এক উত্তম কমল প্রস্ফুটিত হল।সেই সময় ভগবান শিব তার দক্ষিণ অঙ্গ থেকে চতুর্মুখ ব্রহ্মাকে উৎপন্ন করে সেই কমলের ওপর রাখলেন।মহেশ্বরের মায়ায় মোহিত হয়ে বহুদিন ধরে ব্রহ্মা সেই কমলের উদগমস্থানের খোঁজ করতে লাগলেন,কিন্তু তাঁর সৃষ্টিকর্তার সন্ধান পেলেন না।

তখন আকাশবাণীর দ্বারা তপস্যা আদেশ পেয়ে ব্রহ্মা তাঁর জন্মদাতার দর্শনের নিমিত্ত পুনরায় দ্বাদশ বর্ষ কঠোর তপস্যা করেন।তারপর ভগবান বিষ্ণু তাঁর সামনে উপস্থিত হলেন।পরমেশ্বর শিবের লীলায় সেই সময় শ্রীবিষ্ণু ও শ্রীব্রহ্মার মধ্যে বিবাদ শুরু হয়।সহসা তাঁদের দুজনের মধ্যে এক দিব্য অগ্নিস্তম্ভ প্রকটিত হয়।

বহু চেষ্টা করেও ব্রহ্মা এবং বিষ্ণু সেই অগ্নিস্তম্ভের আদি- অন্তের সন্ধান করতে পারলেন না। তখন ক্লান্ত হয়ে ভগবান বিষ্ণু প্রার্থনা করলেন যে, ‘মহাপ্রভো! আমরা আপনার স্বরূপ জানি না।আপনি যে-ই হন, আমাদের দর্শন দিন।’
ভগবান বিষ্ণুর স্তুতি শুনে মহেশ্বর সহসা দর্শন দিলেন এবং বললেন -‘ সুরশ্রেষ্ঠগণ! আমি তোমাদের তপস্যা ও ভক্তিতে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি।হে ব্রহ্মা! তুমি আমার আদেশে জগৎ সৃষ্টি করো এবং বৎস বিষ্ণু! তুমি এই চরাচর জগৎকে পালন করো।’

তারপর পরমেশ্বর শিব তার হৃদয় থেকে রুদ্রকে সৃষ্টি করেন এবং তাঁকে সংহার করার দায়িত্ব সমর্পণ করে অন্তর্হিত হলেন।-শিবপুরান

লেখক : পুরোহিত, শ্রী শ্যাম সুন্দর চক্রবর্ত্তী রাজবাড়ী, নাটোর। তথ্যসূত্র : শিবপুরান

বিঃদ্রঃ সকলে যেন বুঝতে সহজ হয় তাই ছোট গল্প আকারে সহজভাবে লেখা হয়েছে।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“নতুন বছর” কবি শিরিন আফরোজ‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধ“পিতার জন্য জায়নামাজটাই থাক” – আসাদজামানের কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে