ভাষা ও বাংলাদেশ -অলিউল্লাহ্ শোভন

0
726
nATORE KANTHO

 ভাষা ও বাংলাদেশ

অলিউল্লাহ্ শোভন

জন্মের পরে থেকেই আমরা যে ভাষায় কথা বলি সেটাই মায়ের ভাষা বা মাতৃভাষা। তবে বাংলা ভাষার প্রকৃত উৎপত্তিকাল নির্ণয় করা কঠিন। এই পৃথিবীতে আসার পর থেকেই মানুষ কথা বলে ভাষা সৃষ্টি করেছে। আদি মানবের যে ভাষা ছিলো তা মানুষের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে কালক্রমে বহু ভাষার রুপ পরিগ্রহ করেছে। আজকের পৃথিবীতে ৫০০ কোটি মানুষের ভাষার সংখ্যা ৩৫০০ বলে অনুমান করা হয়। সেগুলো থেকে প্রত্যেকের মাতৃভাষা সৃষ্টি হয়েছে।

আমরা যে ভাষা উচ্চারণ করছি তা কিন্তু এতো সহজে মাতৃভাষায় রুপান্তর হয়নি। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের (পূর্ব বাংলা হিসেবেও পরিচিত) বাংলাভাষী ৪ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ ৬ কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যাবিশিষ্ট নবগঠিত পাকিস্তানের নাগরিকে পরিণত হয়। কিন্তু পাকিস্তান সরকার, প্রশাসন এবং সামরিক বাহিনীতে পশ্চিম পাকিস্তানীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল।

১৯৪৭ সালে করাচীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাপত্রে উর্দুকে পাকিস্তানের (বাংলাদেশসহ) একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহারের সুপারিশসহ প্রচারমাধ্যম ও বিদ্যালয়ে কেবলমাত্র উর্দু ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। ওই সমাবেশে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের প্রবল দাবি উত্থাপন করা হয়।

কিন্তু পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন বাংলাকে তাদের অনুমোদিত বিষয়তালিকা থেকে বাদ দেয় ও সাথে সাথে মুদ্রা এবং ডাকটিকেট থেকেও বাংলা অক্ষর বিলুপ্ত করে। আজকের স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিলো বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনে। ’৪৮-এ যখন পাকিস্তানী জান্তা ঘোষণা করেছিলো ‘উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ তখন থেকে এই আন্দোলনের সূচনা। তখন জাতীয়তাবাদী মানুষ ধরেই নিয়েছিলো এদের সঙ্গে থাকা যাবে না। এরপর একে একে ’৫২-র ভাষা আন্দোলন, ’৬৬-র ছয়দফা, ’৬৯-র গণআন্দোলন, ’৭০ সালের নির্বাচন, সবশেষে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধ।

এসবই আমাদের জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার একেকটি সোপান। এই সিড়িগুলো একটা আরেকটার সঙ্গে শিকলের মত বাঁধা।এক শতাব্দীতে চারটি প্রজন্ম ধরা হয়। সেই হিসেবে এখন আমরা এই শতকের প্রথম প্রজন্মকে প্রত্যক্ষ করছি। সময় পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রজন্মের চিন্তা, চেতনায় পরিবর্তন আসে। একবিংশ শতাব্দী এসেও আমরা দেখতে পাচ্ছি একুশের চেতনাকে। আমাদের সামনে উদাহরণ হলো শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর। এখানে তারুণ্যের স্ফূরণের মাধ্যমে যে এই চেতনায় বাংলা ভাষা উচ্চারিত হবে।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে সমকাল-বিএফএফ জাতীয় বিজ্ঞান বির্তক উৎসব হয়ে গেল
পরবর্তী নিবন্ধভাষা আন্দোলনে নারীর ভূমিকা -সাফিয়া খন্দকার রেখা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে