নটোর কন্ঠ : বৈকালের আলোটাও তখন কমে আসছে, মাথায় এক বস্তা সবজি নিয়ে, আলেকজান বেওয়া রওনা দিয়েছে নিজ গন্তব্যে। আলেকজান বেওয়া নাটোর রেল স্টেশনে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন, অনেক আপন জন থাকলেও তারা এখন নির্বাসনে, অনুমানিক ৬৫ বছরের এই বৃদ্ধার একটি হাত নেই, নিজের রোজগার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন, তাই স্বাধীন এই পেশায় নিয়োজিত আছেন।
দৈনিক রোজগার প্রয় দুইশত টাকা যা দিয়ে ১২ বছর বয়সী এক নাতিকে নিয়ে চলছিল তার জীবন। স্টেশনে যাত্রী আর আসেনা যায় না! বাজেনা ট্রেনের ঘন্টা! মানুষ সমাগম গেছে কমে, তাই আলেকজান বেওয়ার রোজগার নেই বললেই চলে। সারাদিনের প্রতীক্ষার সাঁকো অতিক্রম করে, সন্ধ্যা নেমে আসার আগেই, ফিরতে হবে আপনালয়ে, ঠিক তখনই তার হাতে এক প্যাকেট সবজি তুলে দেয় জাগো বাহে কোনঠে সবায় সংগঠনের সদস্যরা।
জাগো বাহে কোনঠে সবায় সংগঠন তাকে সবজি দিলেন, এই আনন্দে আত্মহারা আলেকজান। সবজির প্যাকেটে পেয়েছেন লাউ, কাঁচামরিচ, টমেটো, পুঁইশাক, একফালি বিলাতি, করলা, মুলা ও কাঁচাকলা। বিনামূল্যে এই সবজি পেয়ে তিনি ফরিয়াদ করলেন- “হে আমার পালনকর্তা, হে আমার সৃষ্টিকর্তা, জাগো বাহে কোনঠে সবায় সংগঠনের সকলের, তুমি মঙ্গল করো।”
আলেকজান বেওয়ার মতো প্রাণখুলে শতশত মানুষ দোয়া করছেন এই জাগো বাহে কোনঠে সবায় সংগঠনের জন্য, কারণ তারা বিনামূল্যে স্বেচ্ছায় খাদ্য সামগ্রী অনেকের দ্বারে পৌছে দিচ্ছে বলে। আজ সংগঠনটি নাটোর শহরের তিনটি স্থানে রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, দুস্থ অসহায় ও কর্মহীন মানুষের মাঝে বিনামূল্যে সবজি প্যাকেট বিতরণ করেন।
সংগঠনের সদস্যরা জানান, একটি প্যাকেটে বাজার মূল্যর প্রায় ৬০ টাকার সবজি আছে। প্রায় তিনশত অসচ্ছল মানুষের মাঝে তারা অজ এই সবজি বিতরণ করেছেন। মাঝে মাঝে এই সবজি বিতরণ করা হয় এছাড়াও তাদের সংগঠন, যে বাড়িতে খাদ্য নাই, সেই বাড়ির কেউ ফোন দিলে, তাদের বাড়িতে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হয়। দুর্যোগকালীন সময়ে তারা, অসহায় মানুষের পাশে থাকার ওয়াদাবদ্ধ হয়েছেন, তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকলে মিলেই, বেঁচে থাকার এই যুদ্ধে, জয়লাভ করতে চান।