“মৃন্ময়ীর ভালবাসা”-আব্দুল মতিনের ছোট গল্প

0
507

– আমি মৃন্ময়ী। কৈশোর পেড়িয়ে এসেছি অনেক দিন। যৌবনেরও বেশ খানি পেড়িয়ে গেছে। ভালবাসা, আবেগ-অনুভুতিগুলো কমে এসেছে। আবেগের চেয়ে অনেক রূঢ় হয়ে ধরা দিয়েছে বাস্তবতা। অনেকেই বলে আমি নাকি খুব সুন্দর। আমি নিজেও জানি। সাজ-সজ্জা তাই খুব একটা করিনা। এমনিতেই নাকি আমাকে খুব ভাল দেখায়। ক্লাস নাইনে একজন বলেছিল। পাত্তা দেইনি। ইন্টার ফার্ষ্ট ইয়ারে দুটো ছেলে পিছু নিয়েছিল। সুকৌশলে এড়িয়ে গেছি।

সেকেন্ড ইয়ারে তাই কেউ খুব একটা কাছে ঘেষার সাহস পায়নি। একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে গ্রাজুয়েন করেছি। ছেলে -মেয়ে এক সাথে পড়লে যা হয়। দু’একজন প্রপোজ-ট্রপোজ করার চেষ্ঠা করেছিল। শালারা একেকটা কেমন গরিব গরিব ভাব। আর পাশ করেই কি চাকরি পাবে? পাবে না। তাহলে এ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি? সবাই যেহেতু বলে আমি সুন্দর, তাহলে এর চেয়ে অনেক ভাল কিছু আমি প্রত্যাশা করতেই পারি। আমি খুবই বাস্তববাদী মেয়ে। প্রত্যেকটা পা হিসেব করে ফেলি। আমি চাই একটা হ্যান্ডসাম, ভাল মাইনেওয়ালা একটা ছেলে। আর ওরা কিনা!!! ছ্যা! ছ্যা! একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে জয়েন করেছি বেশ কিছুদিন। ভালই ছিলাম। যদিও বেতন খুব একটা বেশি না। তবে চলে যায়।

বাবা-মা, বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। খুব একটা আমলে নিচ্ছি না। আরেকটু গুছিয়ে নেই। তারপর। হঠাৎ ও এল…. চোখ পড়ল ও চোখে…. ধাক্কা খেলাম। বেশ ভালই ধাক্কা খেলাম। ও সুন্দর নয়, কিন্তু হ্যান্ডসাম বটে। বেতন কিরকম জানিনা। তবে ভাল চাকরি করে। জানিনা, প্রথম কে কার প্রেমে পড়েছি। অথবা ও কি আমায় প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে? সেটাও জানিনা। আমার এখন ওকে ছাড়া ভাল লাগে না। বাসায় মন টেকে না। সারাক্ষন শুধু ওর কথা মনে পড়ে। মনে হয়, এই বুঝি সে এল। এসে বলল, হ্যালো মৃন্ময়ী, ভাল আছ? কিন্তু ও কখনো বলে না। আমার বুকটা ভেঙে যায়।

আমি নি:শ্বাস নিতে ভুলে যাই। হাসফাস করি। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। ও কেন আমায় কিছু বলে না। আমিতো মেয়ে, ওকি বোঝে না? মেয়ে মানুষের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না? ও এত অবুঝ কেন? তবে, ও যে অনেক ভাবেই আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্ঠা করেছিল, আমি তার সবই জানি। আমার সাথে কথা বলতে ও একটা ফেক আইডি খুলেছিল। ম্যাসেজও দিয়েছিল অনেকগুলো। আমি উত্তর দেইনি। কেন দেব? আমি কি ফেলনা নাকি, যে ভুয়া আইডি থেকে মেসেজ দিলেই রিপ্লাই দেব? আমি ব্লক করে দেই। পরে সে আরেকটা আইডি খুলে আমাকে মেসেজ দিত, কি করুন সুরে। আমার অবশ্য মজাই লাগত। আমার এক কেমনে কেমনে সম্পর্কে ছোট ভাই আছে।

ও আর আমি রসিয়ে রসিয়ে সেই মেসেজগুলো পড়তাম আর অট্টহাসিতে ফেটে পড়তাম। পরে অবশ্য ওর আইডি থেকে একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এসেছিল। আমি ডিলেট করে দিয়েছি। এত সহজে ধরা দেওয়ার বান্দা আমি না। আজ ওর গাঁয়ে হলুদ। ও চলে গেছে ওর গ্রামে। বাবা মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে। যাওয়ার সময় আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি। আমিও পিছু ডাকিনি। যাক, যে যাওয়ার সে যাবেই। তাকে আটকানো যাবে না। অথবা আমি তাকে আটকাবোও বা কি করে? আমি কি আদৌ তাকে কোন সুযোগ দিয়েছি? এখন নিজেই নিজের কাছে প্রশ্ন করি, খুব বেশি কিছু কি হারালাম? তাহলে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে কেন? কেন এত তৃষ্ণার্ত হচ্ছি বারবার। কেন খুব করে চাচ্ছি, ওর বিয়েটা যেন যে করেই হোক ভেঙে যায়? কেন ওর করুন মুখটা বারবার চোখের সামনে ভেষে আসছে? কেন? জানিনা, আমি কিচ্ছু জানিনা। শেষ।

বি:দ্র: এই গল্পটা লেখকের সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত। বাস্তবতার সাথে এর কোনই মিল নেই।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“আমন্ত্রণ” কবি সুরজিত সরকার‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধ“বিশ্ব ভালোবাসা দিবস”- স্বকৃত নোমান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে