রেইন কোট -সুপ্তি জামান

0
366
Shupti Jaman

সুপ্তি জামান : এপ্রিলের মাঝামাঝি কোভিড-১৯ এর কারনে লকডাউন চলছে। লকডাউনের মধ্যেও তৃণাকে সপ্তাহে তিন দিন অফিসে আসতে হয়। অফিস বেলা দুটা পর্যন্ত! অফিস থেকে নেমে এপ্রিল মাসের দুপুরের চকচকে রোদে রাস্তায় এসে দাঁড়ালেই তৃর্ণার খুব ভালো লাগে। স্বাভাবিক সময়ে দুপুরের রোদ কখনো দেখা হয় না। অফিসে সারাবছর দিনের বেলা বাতি জ্বলে।

তাই তৃণা সাধারন ছুটির দিনের অফিস শেষে দুপুর বেলা হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফেরে। তৃণা আয়েস করে হাঁটে। এমন একদিন হা্টা পথে ফুটপাতের এক দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায়। করোনা কালের নিরাপত্তা সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানি। তৃণা একটি পিপিই হাতে তুলে নিল। দোকানি বলল দাম ৮০০/- টাকা। তৃণা ভাবলো করোনা শেষ হয়ে গেলে এটাতো কোন কাজে আসবে না।

এছাড়াও পিপিইর ডিজাইনটাও বিদঘুটে মনে হলো। পিপিইটা যথাস্থানে রেখে দিল। দোকানি মরিয়া, আপা, আপনি এই রেইন কোটটা নেন। খুব ভালো। আগুন না লাগলে অনেক দিন ব্যবহার করতে পারবেন। এখন পিপিই হিসাবেও ব্যবহার করতে পারবেন। তৃণা রেইন কোটটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলো। দোকানি নিজের থেকেই বলল আপা এটা মাত্র ৬০০/- টাকা।

তৃণা অনেকদিন থেকেই একটা রেইন কোট কিনবে বলে মনে মনে ঠিক করেছিল, কিন্তু মার্কেটে কখনো খোঁজ করেনি। প্রতিবছরই বর্ষাকালে রেইনকোট কেনার চিন্তা করলেও আজ অব্দি কেনা হয়ে ওঠেনি। আজ হাতের কাছে পেয়ে কিনে ফেলল একটি রেইনকোট। এপ্রিল মাসের গরমে প্লাস্টিকের রেইনকোট পড়ে দিন কয়েক অফিসে যাতায়াত করে রেইনকোট ভাঁজ করে আলমারির মধ্যে তুলে রাখল।

এরপর দেখতে দেখতে বর্ষা চলে এলো। একদিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় তৃণা দেখলো বাইরে ঝুম বৃষ্টি । তৃণা আলমারি থেকে রেইনকোট বের করলো। গায়ে চাপিয়ে রাস্তায় বের হলো। মাথার উপর ছাতাও ধরলো। বৃষ্টির মধ্যেও কেমন নিশ্চিন্তভাবে তৃণা হেঁটে চলেছে বাস স্টান্ডের দিকে। নিজেকে কেমন অভিজাত লাগছে তৃণার! একটি রেইনকোট যে তৃণার থাকতে পারে এটাইতো কোনদিন ভাবনায় আসেনি তৃণার!

কতদিন বৃষ্টির দিনে কাকভেজা হয়ে ছুটে গেছে রাস্তার ধারের কোন দোকানের এক চিলতে ছাউনির নিচে। সেখানে আগে থেকেই ঠাসাঠাসি করে লোক দাঁড়ানো থাকতো। আজ তৃণা কোথাও আশ্রয় খুঁজবে না,কোন ছাউনির নিচে কারো গা ঘেঁষে দাঁড়াবে না। একটি রেইনকোট তৃণাকে অনেকের থেকে স্বতন্ত্র করে ফেলল, নির্ভার অনুভূতি ছুঁয়ে থাকলো তৃণাকে। বৃষ্টির কারনে বাস মিস হলো না, সময়মতো পৌঁছে গেল স্টাফ বাসে।

তৃণার মনে হলো এত দিন কেন কেনা হলো না রেইনকোট! বৃষ্টির দিনে কত স্বস্তিদায়ক একটা পোষাক, দামওতো খুব বেশি না। অনভ্যস্ততার জন্য কত সুলভ বস্তুও মানুষ ভোগ্য মনে করে না! একটি রেইনকোট নিজের করে পেতে তৃণার বিয়াল্লিশ বছর লেগেছে! তৃণা বাসে উঠেও রেইনকোটটি খুলল না, গরম লাগছে, তারপরও খুলল না,রেইনকোটটি গায়ের সাথে মিশে থাকুক।

অনভ্যস্ত সচ্ছলতার প্রতীক হয়ে তথাকথিত মধ্যবিত্তের জীবনে জড়িয়ে থাক একটি রেইনকোট। তৃণার ভাবনা এখানেই থামে না। জানালার ধার ঘেঁসে বৃষ্টির দিকে চেয়ে থাকে তৃণা। বর্ষায় একটি ছাতার মতো একটি রেইনকোটও পৌঁছে যাক সকলের হাতে। একটি রেইনকোটের জন্য বিয়াল্লিশ বছর লেগে যাওয়াটা খুবই হতাশাজনক।

Advertisement
উৎসShupti Jaman
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের নলডাঙ্গায় করোনা আক্রান্তরা পেলেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার
পরবর্তী নিবন্ধবিদায় -খন্দকার মাহাবুবুর রহমান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে