লকডাউন – ছিন্ন ভাবনা ৪- ফাল্গুণী মুখোপাধ্যায়

0
565
Falguni

লকডাউন – ছিন্ন ভাবনা ৪-ফাল্গুণী মুখোপাধ্যায়

বিশ্বব্যাপি করোনা মহামারির মৃত্যু মিছিলের আবহে আজ বিশ্ব বই দিবস ।বইই পারে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব ঘুচিয়ে দিয়ে তার নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠতে । মানুষের সৃজনক্ষমতার প্রকাশে বইয়ের কোন বিকল্প আজও নেই ।অথচ ইতিহাসের পরিহাস, মহামারির মোকাবিলায় এখন সামাজিক দূরত্ব হয়ে উঠেছে অবশ্যমান্য স্বাস্থবিধি ।এই সামাজিক দূরত্বের আবহেই এবারের বিশ্ব বই দিবস ।
সভ্যতার আদিমতম কালখন্ডে যখন মানুষ মাটির ঢেলায় পশু আর গাছের ছবি খোদাই করে মনের ভাব প্রকাশ করেছিল – সেটাই মানব সভ্যতার প্রথম বই । তখন কি কেউ জানতো বইয়ের কি অমোঘ শক্তি! পুরাণের গল্প – সমুদ্র মন্থন করে নাকি অমৃত উঠেছিল, আর সেই অমৃত পান করে দেবলোক অমরত্ব লাভ করেছে । মানুষ দেবতা নয়, কিন্তু তার সভ্যতার ইতিহাস, তার পথচলাটাও তার সমাজ ও সভ্যতার পাঁচ হাজার বছরের মহা মন্থনের ফল । সেই মহা মন্থনের কোন এক আদীমতম কালখন্ডে মানুষ তার মেধা ও সৃজন ভাবনায় নিজেই রচনা করেছিল অমৃতের ভান্ডার – বই, মানুষকে দিয়েছিল অমরত্বের অধিকার ।
বিশ্ব বই দিবসের মূল ধারণাটি আসে স্পেনের লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেসের কাছ থেকে। ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল মারা যান স্পেনের বিখ্যাত লেখক ‘ডন কুইকজোট’এর স্রষ্টা মিগেল দে থের্ভান্তেস। থের্ভান্থেসকেই আধুনিক উপন্যাসের জনক মনে করা হয় । আন্দ্রেস ছিলেন তার ভাবশিষ্য। নিজের প্রিয় লেখককে স্মরণীয় করে রাখতেই তাঁর মৃত্যুর তিনশো বছর পরে, ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে আন্দ্রেস স্পেনে পালন করা শুরু করেন বিশ্ব বই দিবস। আর একই দিন ২৩শে এপ্রিল ১৬১৬ উইলিয়াম সেক্সপীয়ারেরও প্রয়াণদিবস । অবশেষে ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং পালন করতে শুরু করে। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এসেছে ছাব্বিশতম বিশ্ব বই দিবস । ঘরবন্দি পাঠক পুস্তক বিপণিতে গিয়ে তার প্রিয় বই নেড়েচেড়ে দেখতে পাচ্ছেন না, মুদ্রিত বইয়ের ঘ্রাণ নিতে পারছেন না, কিংবা গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষে বইয়ের পাতা ওল্টাতে পারছে না । ছাপাখানা বন্ধ, বইয়ের দোকানগুলি তালাবন্দী, পুস্তক প্রকাশনা ও বিপনন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার শ্রমিক মানুষ কর্মহীন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ভাবনায় ক্লান্ত অবসন্ন ।তারা কবে দেখবে আলোর রেখা তা নিশ্চিত নয় এখনও । এই বেদনাময় আবহে এবারের বিশ্ব বইদিবস ।
মুদ্রিত বই কিনতে পারছি না বা পাঠকক্ষে গিয়ে পড়তে পারছি না সত্য, কিন্তু এই ঘরবন্দী দশা আমাদের বই পড়ার আকাঙ্খাকেও বন্দী করবে তার সাধ্য কি ? অন্তর্জালে বই পড়ার বাধাহীন সুযোগ নিতে এগিয়ে আসি । ঘরবন্দী থেকে নিভৃতে পালন করি বই দিবস । আজ অন্তত একটি বই পড়ি আর অন্ত একটি বই পড়তে বলি আমার প্রিয়জনকে । করোনা ত্রাশের বিরুদ্ধে আমাদের প্রবল সংগ্রামের সঙ্গেই পাঠকের সঙ্গে বইয়ের আরো একটু সংযোগ ঘটুক । করোনা ত্রাশের বিরুদ্ধে লড়াই জারি আছে, থাকবে সেই লড়াইয়ে বই ব্রাত্য নয় ।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধজায়েদ আল রাফি’র আজ জন্মদিন, নাটোরকন্ঠ পরিবারের শুভেচ্ছা
পরবর্তী নিবন্ধচলনবিলে ধান কাটা শ্রমিকদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করলেন জেলা প্রশাসক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে