“শিক্ষকদের সবাই পদানত করে রাখতে চায় “- সৈয়দ আনোয়ার সাদাৎ

0
568
biplob

।।শিক্ষকদের সবাই পদানত করে রাখতে চায় ।।
সৈয়দ আনোয়ার সাদাৎ

শিক্ষকদের নিকট জাতির অনেক প্রত্যাশা,অনেক চাওয়া।শিক্ষকদের আদর্শবান রূপে দেখতে চায়।কিন্তু শিক্ষকদের যে বিশেষ সম্মান আর মর্যাদা দেওয়া উচিত,এই বিষয়ে কারো উদারতা নেই।নাম মাত্র জাতির কারিগর বলে বটে,তবে উনিশ-বিশ হলেই যা তা বলে হেয় করতে ছাড়ে না।

শিক্ষকরাও যে মানুষ।তাদেরও জীবন আছে,তারাও ভালো থাকার স্বপ্ন দেখে।তারাও ছেলে-মেয়েদের ভালো স্কুল, কলেজে পড়াতে চায়।টানাপোড়ন জীবনের বাইরে গিয়ে স্বচ্ছল জীবন-যাপন করতে চায়।তাদের এই চাওয়া ও পাওয়াকে এই সমাজের অনেক মানুষ সহ্য করতে পারে না।শিক্ষকরা তাঁদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা তুললেই ফুঁসে উঠে অলস বেকার বেকুব।কটুক্তি করে সর্বস্তরের মানুষ।শুরু করে নানা খিস্তি- শিক্ষকরা ক্লাসে পড়ায় কম। প্রাইভেট নিয়ে মেতে থাকে।প্রাইভেট না পড়লে খাতা কঠিন করে দেখে ইত্যাদি ইত্যাদি। শিক্ষকদের পাশে কেউ থাকে না।যথাযথ কর্তৃপক্ষ শুধু ক্লাস করিয়ে নিতে চায়। ক্লাস করিয়েও প্রশ্ন তৈরি করিয়ে নেয়,বিভিন্ন পরীক্ষার ডিউটি করিয়ে নেয়।খাতা দেখিয়ে নেয়।ভোটার তালিকা তৈরি,আদম শুমারি,কৃষি শুমারি করিয়ে নেয়।,ভোটের ডিউটিও করিয়ে নেয়।বিভিন্ন দিবস পালন ও বিভিন্ন সভা- র ্যালি করিয়ে নেওয়া নেয়।কিসের ছুটি? শনিবার তো ছুটি নেই।ছুটির দিনে বিশেষ দিবস,জাতীয় দিবস পড়লে তো আর ছুটি নেই। এক কথায় শিক্ষকরা কী করে না? সব করেও নাম নেই,মান নেই,দাম নেই। ঠকিয়েই চলেছে যত ভাবে পারা যায়।

ডিউটিতে টাকা কম,খাতা দেখায় টাকা কম,ট্রেনিংয়ের ভাতা কম।বেতন কম।বেতন বেড়েছে,সবার বেড়েছে।কিন্তু বেতন বৈষম্যের শিকার হয়ে বিক্ষুদ্ধ মন নিয়ে যে জাতির সেবা করে চলেছে, কেউ তা খতিয়ে দেখে না । জাতিগড়ার কারিগর বলে সবাই চাপা মারে, কেউ খোঁজ রাখে না শিক্ষকেরা কত বঞ্চনা নিয়ে চাকরি করে।বিধি মোতাবেক আট বছর ছাড়িয়ে গেলেও টাইমস্কেল নাই,সিলেকশন গ্রেড নাই।সব পেশার মানুষের প্রমোশন হয়,বেতন বাড়ে,শিক্ষকদের প্রমোশন নাই।২৫,৩০,৩৫ বছর একই পদে চাকরি করে দীন দরিদ্র শিক্ষক রিটায়ার্ড করে।

চাকরি জীবনে নেই তাঁদের ব্যাংকারদের মত কোনো ঋণ সুবিধা,যার দ্বারা তাঁরা ভালো বাড়ি ঘর করতে পারে।সবার দ্বারা অবহেলিত,প্রবঞ্চিত শিক্ষকদের যখন এই অবস্থা,তখন কী করে জাতি তাঁদের থেকে আদর্শবাদ ও ভালো কিছু আশা করে?ক্ষুধার্থ লেবারকে দিয়ে কি ওজনসহি বোঝা বহানো যায়?পেটে পুষ্টিমান খাদ্য দিতে হবে,তাহলেই যে কোনো কাজ উদ্ধার সহজ হবে।নিরীহ শিক্ষক সমাজ যুগ যুগ অবহেলিত থেকে জাতিকে শিক্ষার আলো দিয়ে এসেছে,কিন্ত আজ পর্যন্ত তাঁদের হাতে গড়া শিক্ষিত সমাজ,ডিসি,সচিব, আমলা,কর্মকর্তা,মন্ত্রী,এমপি কেউই শিক্ষকের মর্যাদা বাড়াতে,শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে, সর্বোচ্চ বেতন বাড়াতে বা বেতন বৈষম্য কমিয়ে আনতে সে ভাবে কাজ করে নি।প্রমোশন দিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।তারা শিক্ষকদের ছত্রছায়ায় সার্টিফিকেট অর্জন করে বড় বড় কর্মকর্তা হয়ে শিক্ষকদের চাকর করে রাখতে চায়।শিক্ষক হিসেবে মাথার ওপরে রাখতে কেউই চায় না।বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষকদের পদানত করে রাখতে সবাই চাহে। এই জাতি সুসভ্য জাতি হবে কী করে?

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“নৃপতি ঘুঙুর হয় কবিদের পায়ে ও একজন আত্মনিমগ্ন কবি বান্দা হাফিজ”-চন্দ্রশিলা ছন্দা’র পাঠ প্রতিক্রিয়া
পরবর্তী নিবন্ধ“শকুন্তলা “- অনুপম সৌরিশ সরকারের কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে