শ্রী শ্রী জগদিশ্বরী মন্দিরের সম্পত্তি বেদখল ও নৃ-গোষ্ঠীদের উপর হামলা প্রসঙ্গ- কালিদাস রায়

0
578

শ্রী শ্রী জগদিশ্বরী মন্দিরের সম্পত্তি বেদখল ও নৃ-গোষ্ঠীদের উপর হামলা প্রসঙ্গ- কালিদাস রায়

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানার চৈত্রহাটি শ্রী শ্রী জগদিশ্বরী মাতার মন্দির এবং এর বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি দখলের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নামে মিথ্যা মামলা ও হতাহতের ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এই ঘটনায় স্থানীয় ভুক্তভোগী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় এবং আদিবাসী পরিষদের নেতৃবৃন্দের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে শনিবার দিনব্যাপী সরেজমিনে পরিদর্শনে যান জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা।

এসময় তারা উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কমকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এসময় তারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে লিখিত আবেদন জমা দেন । এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমানাথ মাহাতো, দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, নাটোর জেলা সভাপতি প্রদীপ লাকড়া, সাধারণ সম্পাদক কালিদাস রায়, পাবনা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিক বানিয়াস, আদিবাসী যুব পরিষদের রাজশাহী জেলা সভাপতি উপেন রবিদাস, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নকুল পাহান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিলীপ পাহান প্রমূখ নের্তৃবৃন্দ।

ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শনকালে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তাদের দুঃখ দুর্দশা, নির্যাতন, জীবনের নিরাপত্তা চাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনশেষে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নেতৃবৃন্দরা জানান, নাটোরের জমিদার হরেন্দ্রনাথ রায় শ্রী শ্রী জগদিশ্বরী মাতার মন্দির নির্মাণ করেন। এরপর জমিদারগণ কতর্ৃক এই মন্দিরের নামে প্রায় ৩৪২.১১ একর সম্পত্তি দেবোত্তর করে যান যা সিএস খতিয়ানে উল্লেখ আছে। এই বিপুল পরিমাণ দখলের জন্য অতিমাত্রায় তৎপর হয় স্থানীয় ভ্থমিগ্রাসী সাবেক চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন এবং দেলবার গং। সম্ভাব্য ১৯৯৮ সালে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট থেকে উল্লেখিত ভ্থমিগ্রাসীদেরকে এই মন্দিরের দেবত্তোর সম্পত্তির কিছু অংশ লিজ দেওয়ার মধ্য দিয়েই মূলত মন্দিরের সম্পত্তি বেদখলের সূত্রপাত। বর্তমানে মন্দিরটির নামে মাত্র ৪২ বিঘা সম্পত্তি দখলে আছে। এনিয়ে অনেক জল ঘোলা হলেও ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের এই মন্দিরের নামীয় সম্পত্তি এখনও বেদখল হয়ে আছে। এঘটনায় তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রেভিনিউ) তৈরী করা একটি প্রতিবেদনে মন্দিরের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি বেদখল এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন, বাড়ী ঘর জালাও পোড়াও, নারীদের শ্লীলতাহানি, হামলার ঘটনার চিত্র ফুটে উঠে। এর পর অনেকদিন অতিবাহিত হলেও এখনও এবিষয়ে কোন সুরাহা হয়নি। বর্তমানে একটি মিথ্যা হত্যা মামলা চলমান থাকায় চৈত্রহাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর গ্রাম এখন পুরুষশূণ্য। অমানবিক কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন তারা।
স্থানীয় ভুক্তভোগী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বাসিন্দা সনজিতা মুন্ডা, নরেন মুন্ডা জানান, চৈত্রহাটি শ্রী শ্রী জগদিশ্বরী মাতার মন্দির এবং এর বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি দখলের লক্ষ্যে আাদিবাসীদের নামে মিথ্যা মামলা-হামলা, হয়রানি, নির্যাতন করা হচ্ছে। মেয়েরা শ্লীলতাহানির ভয়ে একা কোথাও যেতে পারেনা, রাতের অন্ধকারে ভ্থমিগ্রাসীরা তাদের বাড়ীঘরে হামলা চালান। বর্তমানে মামলা চলমান থাকা এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ভ্থমিড়গ্রাসীদের ভয়ে পুরুষশূণ্য গোটা চৈত্রহাটি গ্রাম। এছাড়া সব সময় লুটপাটসহ প্রাণনাশের ঝুকিতে রয়েছেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে এই মন্দিরের সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ চলমান থাকলেও বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে এখনও কোন সুরাহা হয়নি। তারা দ্রুত মন্দিরের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া এবং মামলা মোকর্দমা তুলে নেওয়া সহ জীবনের নিরাপত্তা দাবি করেছেন।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক জানান, আদিবাসীদের উপর হামলা, মামলা, বাড়ী-ঘর জ্বালাও পোড়াও, উচ্ছেদ এবং মন্দিরের সম্পত্তি দখলের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এছাড়া, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি এবং স্থানীয় আদিবাসীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমেদ জানান, বিষয়টি অবগত হয়েছি। প্রশাসনিক এবং আইনগতভাবে সমস্যাটির সমাধনের উদ্যেগ নেওয়া হবে।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের দয়ারামপুর (বাউয়েট)এর দুই শিক্ষার্থী ২১ দেশের মধ্যে সেরা
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনকে জীবনে ধারন করতে হবে- পলক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে