স্রোতে ভাসা কচুরিপানা-১ – এম আসলাম লিটন

0
344
Aslam Liton

স্রোতে ভাসা কচুরিপানা-১ – এম আসলাম লিটন

অজস্র গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আমি। ভাবা যায় !
দোর্দান্ত সেসব একেকটি গল্প। অসম্ভব শক্তিশালী। উন্নত রসবোধসম্মন্ন। রচয়িতার কল্পনাশক্তি এত প্রখর; এত গহীন যে, তারা অতলান্ত বা প্রশান্ত সাগরের তলদেশের ক্ষুদ্র অনুজীবটিও কল্পনার চোখে হিমালয়ের মত বিশাল করে দেখতে পান।
গল্পগুলো স্রোতে ভাসা কচুরিপানার মত। অসম্ভব সুন্দর, অথচ কোন শেকড় নেই। ভিত্তি নেই। স্রোতের ধাক্কায়, বাতাসের দোলায় দোলায় ভেসে বেড়ায় এখান থেকে ওখানে। ওখান থেকে সেখানে। ঘাটে ঘাটে.. জনপদে…!
অথচ মজাদার… চটকদার.. মুখরোচক সেসব গল্প রচিত হয় নেপথ্যে। আড়ালে আবডালে, ঘুপচি কানাগলির অন্ধকার জগতে। এসব গল্পকাররা বসবাসও করেন নেপথ্যে। তাদের রচনাজগৎ নেপথ্যে। প্রচারণা ক্ষেত্র নেপথ্যে। রসে টসটস গল্পগুলো নিয়ে চর্ব-চৌষ্য-লেহ্য-পেয় কর্মকাণ্ডও চলে নেপথ্যে! এঁদো-সেঁদো নাগরিক বর্জের দুর্গন্ধময় কানাগলিতে।
গল্পকাররা গল্পগুলো কোথাও লিপিবদ্ধ করেন না। কোন হার্ডকপি, সফ্ট কপি থাকে না এসব গল্পের। মুখে মুখে.. কানে কানে.. ফুসফাস… ঘুসঘাস করে নির্মিত হয় গল্পগুলো। ঠিক লোকগল্পের মত। কোন একজন মিলে নয়, গণরচয়িতার সম্মিলিত প্রয়াস! মুখে মুখে কানে কানে ঘুরে বেড়ায়.. আর কান বদলের সাথে সাথে যোগ হতে থাকে আরো রস, আরো উপাদান, আরো মাল-মশলা।
এসব গল্পের স্রোতারাও বেশ সমঝদার। এতই সমঝদার যে, স্রোতারা নিজেই গল্প প্রচার প্রসারের জাতীয় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। শুধু কী তাই! প্রচারের সময় নিজেও কিছু টক-মিস্টি-ঝাল-সুগন্ধি চটকদার মশলা মিশিয়ে আরো বেশি লোভনীয় করে তোলেন। গল্পের প্রথম লাইন বলার সাথে সাথে স্রোতারা চৈত্র মাসের ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত কুকুরের জিহবা ঝুলে যায় এক হাত। টসটস করে নসিৃত হতে থাকে লালা। চক্ষু চড়কগাছে তুলে স্ট্রোরি টেইলারের মুখের কাছে ঝুঁকে এসে স্রোতা অস্ফুট ধ্বনি প্রস্ফুটিত করেন- ’তাই নাকি! বলো কী! তারপর?’
কানাগলির এই লোকগল্পগুলো অসম্ভব শক্তিশালী। করোনার চেয়েও মারাত্মক। ছোঁয়াচে, সংক্রামক। খুবই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে জনপদে। সংক্রমিত করে জনে জনে। চক্ষু-কর্ণ-নাসিকা-জিহবা-তক এই পঞ্চেন্দ্রীয় জর্জরিত করে তিরের বেগে ঢুকে পড়ে মগজে। পৃথিবীর কোন গণমাধ্যম এত দ্রুত এত গভীরে কোন কিছু করতে সক্ষম নয়।
ফলে মাঝে মাঝে এই সংক্রামক গল্পগুলো আমাকেও সংক্রমিত করে। কিন্তু ধরাশায়ী করতে পারে না। কেননা আমার বৈশিষ্টের মতই, আমার মগজ অনেক কর্মক্ষম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাকে সবাই এ্যান্টিবড়ি বলে, সেটা যথেষ্ট শক্তিশালী।
তবে গল্পগুলো শুনি আর শিহরিত হই। রোমাঞ্চিত হই। নিজের দিকে তাকিয়ে পুলক বোধ করি! কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে বুক। আর ভাবি এতসব শক্তিশালী, জনপ্রিয়, মুখরোচক গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আমি! এই ‘আমি’?! ভাবা যায়! কজনের ভাগ্যে জোটে এমন!
আর মাঝে মাঝে ভাবি. যদি গল্পকাররা গল্পগুলো লোকচক্ষুর সামনে আনতেন! নিশ্চিত অস্কার! নিদেনপক্ষে একুশে পদক অথবা বাংলা একাডেমি পুরস্কার তো বটেই!
সাথে আমিও হয়ে উঠতাম সুপার সেলিব্রেটি!

-এম আসলাম লিটন

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ দেবীর বোধন, নাটোরের মন্দিরে সাজ সাজ রব
পরবর্তী নিবন্ধনলডাঙ্গায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারি অনুদান বিতরণ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে