হরিশপুর টয়লেটে এতো মধু!! আওয়ামীলীগ নেতার টয়লেট ইজারা, ফুটপাথ দোকানে চাঁদা !

0
1018

হরিশপুর টয়লেটে এতো মধু!! আওয়ামীলীগ নেতার টয়লেট ইজারা, ফুটপাথ দোকানে চাঁদা !

বিশেষ প্রতিবেদক, নাটোর কণ্ঠ: নাটোর পৌরসভার বড় হরিশপুরের গোলচত্বরে পাশে নাটোর পৌরসভার পাবলিক টয়লেট। আর শহরের ব্যস্ততম এই চত্বরকে ঘিরে সড়ক ও জনপথের জায়গায় জীবনের ঝুকি নিয়ে চা পান, ফলমূলের ব্যবসা করে আসছে চারজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এসব দোকানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে টয়লেট থেকে। ৩৮ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা নিয়ে এসব দোকানের তিনটি থেকে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে আদায় করতে টয়লেটের ইজারাদার যুবলীগ কর্মী স্বাধীন এর নিয়োজিত আব্দুস সালাম। একটি দোকান আত্মীয় বলে ভাড়া দিতো হতো না । সম্প্রতি এই পাবলিক টয়লেটের দিকে নজর পরে কোটিপতি পরিবহন ব্যবসায়ী ও নবগঠিত ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার। তিনি চলতি বছরের শুরুতে নাটোর পৌরসভা থেকে পাবলিক টয়লেটটি ৭০ হাজার টাকায় ইজারা নেন।

গত শুক্রবার তিনি দোকানের মালিকদের ডেকে দৈনিক ১০০ টাকা হারে ভাড়া দিতে নির্দেশ দেন এবং টয়লেটসহ ৪ টি দোকান দৈনিক ১ হাজার ৩০০ টাকা চুক্তিতে জনৈক ওমর আলীকে ভাড়া দেন। সচেতন এলাকাবাসীর প্রশ্ন গোলচত্বরের টয়লেটে কি এমন মধু আছে যে, কোটিপতি ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ নেতার টয়লেট ইজারা নিতে হবে। দিনমজুর শ্রেনীর মানুষ ব্যস্ততম মহাসড়কের পাশে জীবনের ঝুকি নিয়ে সড়ক ও জনপথের জায়গায় চা পান এবং ফলমূলের দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করছে। টয়লেট ইজারা নিয়ে ফুটপাথের দোকান থেকে টাকা আদায় কি চাঁদাবাজি নয়?

সরজমিনে পাবলিক টয়লেট এলাকায় গিয়ে অভিযোগের সত্যাতা পাওয়া গেছে। টয়লেটে দায়িত্বরত ৭ বছরের এক শিশু জানান, আওয়ামী লীগের ওই নেতা কাছ থেকে দৈনিক ১হাজার ৩ শ টাকা চুক্তিতে তার বোন জামাই ওমর আলী নিয়েছে। শনিবার থেকে তারা ভাড়া দিচ্ছে। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও দৈনিক ১শ’ টাকায় সকাল ৭ টা সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টয়লেটে দায়িত্ব পালন করতে হয় এই শিশুটাকে।

টয়লেট লাগোয়া চা দোকানী জানান, এতোদিন দৈনিক ৬০ টাকা করে দিতাম যুবলীগ কর্মী স্বাধীনকে । কাল থেকে নতুন ইজারাদার আমার ১২০ টাকা আর বাঁকি তিনটি দোকান ১০০ টাকা করে দিতে হবে বলে জানিয়েছে। না দিলে এখান থেকে দোকান তুলে দিবে । তাই বাধ্য হয়ে দিচ্ছি।
অপর চা দোকানী জানান, “জোর যার মুল্লুক” তাঁর। তিনি আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সেক্রেটারী। অনেক ক্ষমতাধর ।। আমরা দোকান দেয় সড়ক ও জনপথের জায়গায়। তিনি পাবলিক টয়লেট ইজারা নিয়েছেন। সড়ক ও জনপথের জায়গা নয়। এটা তো রীতিমত চাঁদাবাজি।।

তিনি আরো বলেন, নাটোর সদরের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপি দেশের বাইরে থাকার কারণে আমাদের ফরিয়াদ জানানোর জায়গা নেই। মাননীয় সাংসদ নাটোরকে সন্ত্রাস চাঁদাবাজ মুক্ত করেছে।।সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর অবস্থানে। দেশে থাকলে তিনি বাবুল আখতারের অন্যায় আবদারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতো।

সেখানকার নামপ্রকাশে অনইচ্ছুক একজন একজন ফল ব্যবসায়ী জানান, পাঁচ বছর যাবৎ ব্যবসা করছি এখানে। কোন দিন আমাকে একটি টাকা দিতে হয়নি। আগের ইজারাদার আমার আত্মীয় তিনিও কখনো নেননি। এই আওয়ামী লীগ নেতা ইজারা নেওয়ার পর শুক্রবার ওয়ার্ড আওয়ামী কার্যালয়ে আমাদের ডেকে ১০০ টাকা করে ভাড়া দিতে বলেছে। আমরা কাল থেকে দিচ্ছি। না দিয়ে উপায় নেই। তাঁর অনেক ক্ষমতা।। আমরা প্রতিবাদ করলে রোজগারের পথটি বন্ধ হয়ে যাবে। আর টাকার জন্য এ হীন কাজ নেই যে তিনি করতে পারেন না।

নাটোর পৌরসভার সচিব সালাউদ্দীন জানান, ২০২০ সালে ৩৮ হাজার টাকায় টয়লেটটি ইজারা দেয়া হয়েছিল। এবার আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল আক্তারকে পৌরসভা ৭০ হাজার টাকায় পাবলিক টয়লেটটি ইজারা দিয়েছে। সড়ক ও জনপথের জায়গা তো আমরা ইজারা দিতে পারিনা। আমাদের এখতিয়ার নেই। তাকে আমরা শুধু পাবলিক টয়লেট ইজারা দিয়েছি।

অভিযোগের তীর যে নেতার বিরুদ্ধে সেই আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল আক্তার জানান, আমি সবেমাত্র লিজ নিয়েছি। এখন পর্যন্ত টয়লেটটি বুঝে পাইনি। আসলে এ দোকানগুলোর জন্য টয়লেটে নারীরা আসতে বিব্রতবোধ করে। তাই আমি তাদের দোকানপাট সরিয়ে নিতে বলেছি। আমি ভাড়া বা চাঁদা চায়নি। এটা মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ । দ্বিগুন মূল্যে ইজারা নেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি আমার কথা রেকর্ড করতে পারেন। দেখা করেন সামনাসামনি বলে ফোন কেটে দেয়।।

নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, বড় হরিশপুর গোল চক্করে ব্যাস্ততম মহাসড়ক ঘেষে গড়ে তোলা দোকানগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।। আমরা খুব শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান চালাবো।

এলাকাবাসী এবং আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, কথিত এই আওয়ামী লীগ নেতা হঠাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। পাঁচটি বাসসহ অঢেল ধনসম্পদ থাকার পর ও কোটিপতি এই পরিবহণ ব্যবসায়ী টয়লেট ইজারা নিয়েছে। ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক হওয়ার ৬ মাস হয়নি। এরই মধ্যে নানা অনৈতিক কাজের অভিযোগ উঠেছে চ্ছতার বিরুদ্ধে । কতখানি নিচু মানসিকতার মানুষ হলে টয়লেট ইজারা নিয়ে ফুটপাতের দোকানীদের কাছে টাকা দাবী করে ভেবে দেখুন । এ ধরণের লোক কিভাবে আওয়ামী লীগের পদপদবী পায়।।আমাদের বোধগম্য নয়। টাকাওয়ালা ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার মতো কোন যোগ্যতা তাঁর নেই। তিনি দলের এবং সাংসদ শিমুল এমপি ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। অবিলম্বে তাকে বহিস্কার করার দাবী জানাচ্ছি।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধছবি দিয়ে সংবাদ প্রকাশের কারণে নাটোর কন্ঠের নামে মামলার হুমকি।
পরবর্তী নিবন্ধবাগাতিপাড়ায় খাদ্যের নিরাপদতা শীর্ষক সেমিনার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে