নাটোর কন্ঠ : ইতিহাস ঐতিহ্যের লীলাভূমি নাটোরে করোনার প্রভাবে বন্ধ হয়ে রয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলি। নাটোরের রানী ভবানী রাজবাড়ী, প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাসভবন উত্তরা গণভবন, চলনবিল ও হালতি বিলের ডুবন্ত সড়কসহ বিল এলাকার বিশাল জলরাশিতে পর্যটকদের ভীর লেগেই থাকত।
কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে গত মার্চ মাস থেকে প্রর্যটকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখা হয়। ফলে গত প্রায় ছয় মাসে নাটোরে পর্যটন খাতে প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। এসব কেন্দ্রে কর্মরত কর্মকর্তা -কর্মচারীদেরও অলস সময় কাটছে। অপরদিকে এসব পর্যটন এলাকাকে ঘিরে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও মন্দা সময় কাটাতে হচ্ছে।
এদের অনেকেই প্রায় বেকার হয়ে পড়েছেন। লকডাউনে মানুষ রয়েছেন ঘরবন্দি। এদিকে লকডাউন শিথিল মনে করে অনেকেই নির্মল বিনোদনের উদ্দেশ্যে এসব দর্শণীয় স্থানে এলেও প্রবেশাধীকার না থাকায় তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠন সহ দর্শনার্থীরা নাটোরের ইতহাসখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলো খুলে দেয়ার দাবী জানিয়েছেন।
উত্তর জনপদের অর্ধ বঙ্গেস্বরী খ্যাত নাটোরের রানী ভবানীর রাজবাড়ী, প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাসভবন উত্তরা গণভবন (দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি) পর্যটকদের আকর্ষনের শীর্ষে। এছাড়া রয়েছে বর্ষা মৌসুমের মিনি কক্সবাজার খ্যাত হালতি বিল, চলনবিলের ডুবন্ত সড়ক,চলনবিলের বিলসা এলাকার সৌন্দর্য্যময় বিশাল জলরাশি,চলনবিলের পর্যটন কেন্দ্র ও লালপুরের গ্রীনভ্যালীসহ রাজা মাহারাজা ও জমিদারদের প্রাসাদকে ঘিরে গড়ে তোলা দর্শনীয় স্থানগুলোতে দর্শনার্থীদের ভির লেগেই থেকেছে।
অতীতে নাটোরে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটত। করোনা প্রভাবে হঠাৎ থেমে গেছ এসব দর্শনীয় স্থানসহ পর্যটন এলাকার জনসমাগম। দোকানীদের বেচাকেনা নেই। অলস সময় এখন তাদের। ব্যবসা বন্ধও করতে পারছে না তারা। দীর্ঘ ঘর বন্দি থাকার পর একটু প্রশান্তি নিতে পাশ্ববর্তী জেলা গুলোর অনেকেই ছুটে আসছেন নাটোরে।
কিন্তু করোনার কারনেএসব দর্শনীয় স্থানে প্রবেশাধীকার বন্ধ করে দেয়ায় ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। এসব দর্শনার্থীরা দুর্ভোগ ও ভোগান্তিসহ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দর্শনার্থীদের দাবী স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান সমুহ প্রবেশের অনুমতি দেয়া হোক।
নাটোর আইনজীবি সমিতির সাধারন সম্পাদক ও দৈনিক উত্তর বঙ্গবার্তা পত্রিকার সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মালেক শেখ জানান, সরকারী ও বেসরকারী সকল বিনোদন কেন্দ্র অতি দ্রুত খুলে দেয়ার দাবী করে বলেন, দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকার কারনে মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুরা মনস্তত্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যেখানে অফিস আদালত সহ সবকিছুই রেগুলার হচ্ছে,সেখানে বিনোদন কেন্দ্রগুলি খুলে দেয়া উচিত।
নাটোর পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি বলেন,কিছু কিছু ঐতিহাসক স্থান যেমন রানী ভবানী রাজবাড়ি ও উত্তরা গণভবন স্বাস্থ্যবিধি মেনে উন্মুক্ত করা যেতে পারে। তবে ব্যাপক জনসমাগম করা থেকে বিরত থাকার বিষয়টি সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এদিকে করোনার কারনে দর্শনার্থীদের প্রবেশাধীকার বন্ধ থাকায় গত ছয় মাসে কেবলমাত্র উত্তরা গণভবনের রাজস্ব হারাতে হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। উত্তরা গণভবনের হিসাব সহকারী নুর মোহম্মদ এই রাজস্ব ঘাটতির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান,দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়ায় গত মার্চ মাস থেকে এই রাজস্ব আসছেনা না।
সদর সহকারী কমিশনার (ভুমি) আবু হাসান জানান,গত ছয় মাসে রানী ভবানী রাজপ্রাসাদের রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ২০ লাখ টাকা। মার্চ মাস থেকে প্রবেশাধীকার বন্ধ থাকায় কোন রাজস্ব আদায় নেই। এছাড়া জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান সমুহে প্রবেশের অনুমতি না থাকায় রাজস্ব আদায় বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ জেলার পর্যটন খাতের রাজস্ব ঘাটতির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নাটোর হচ্ছে রাজা-মহারাজা ও জমিদার অধ্যুষিত ইতিহাস ঐতিহ্যের জেলা। এখানে রাজা মহারাদের রাজপ্রাসাদ, বিশাল চলনবিলসহ বিপুল সংখ্যক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
তিনি আরো জানান, করোনার কারনে গত মার্চ মাস থেকে দর্শনীয় স্থান সমুহ দর্শনার্থীদের প্রবেশাধীকার বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তি,জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠন সহ বিশিষ্টজনরা ইতিহাসখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলো উন্মুক্ত করার অনুরোধ করেছেন। এগুলো খুলে দেয়া যায় কিনা সে বিষয়ে কমিটির মিটিং আহ্বান করা হয়েছে। সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানালেন তিনি।