অদ্ভুত নিরবতা!
কবি নাজনীন নাহার‘এর কবিতা
পৃথিবীর সবটুকু শক্তি একাত্ম করে,
আমি তোকে বিদায় দিলাম আজও।
এবার তুই কাঁদলি না!
একেবারেই কাঁদলি না।
ইচ্ছে করেই দেরি করে বাসা থেকে বেরুলি,
যাতে শেষ সময়টা মন খারাপ আর চোখের জলের,
সময় না পাই।
হলোও তাই,
খুব তাড়াহুড়োয় বোডিং পাস, ইমিগ্রেশন,
চলেই গেলি আবার।
ফোনের ওপাশ থেকে কেবল বললি আমায়,
এবার কিন্তু আমি কাঁদিনি মা।
তুমিও কিন্তু কাঁদবে না!
আমিও কেমন,
গলার ভেতরে কান্নার দলাটা গিলে নিয়ে বললাম,
হুম বাবা।
নিজের যত্ন নিস।
এয়ারপোর্টের বাইরে এসে,
প্রচন্ড গরমের মধ্যেও ভীষণ শীত শীত লাগছিলো!
চারপাশটা কেমন নির্জন আর বিষন্ন।
জল ভরা চোখে আকাশের দিকে তাকালাম,
আকাশের রঙটাও কেমন ফ্যাকাশে মনে হলো।
গালে তখনো লেগেছিলো তোর শেষ চুমুটার আবেশ!
গালে হাতটা ছুঁয়ে চোখ বন্ধ করলাম,
টপটপ করে পানি,
গড়িয়ে পড়ছিলো সেই গাল বেয়ে।
তোকে রেখে একা একা গাড়িতে উঠে বসলাম,
ফিরতি পথে শহরটা,
বড্ড অগোছালো আর ফাঁকা লাগছিলো।
তোর ফোন এলো আবারও,
যাচ্ছি মা।
তুমি শুধু দোয়া করো।
বললাম অনেক দোয়া অনেক।
বুকের ভেতরটা কেমন মুচড়ে উঠলো!
ফোন কেটে মনে মনে বললাম,
আল্লাহ আমার খোকা কে নিরাপদ রেখো।
ভালো রেখো।
খোকা রে!
আমি তো পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন মা।
তোকে ছেড়ে ভালো থাকতে,
গল্প কবিতা লিখি ছবি আঁকি।
হাজার খেয়াল মাথায় নিয়ে,
হাজার কাজে ব্যাস্ত থাকি।
অনেক বড়ো স্বপ্ন নিয়ে,
তুই দূর দেশে থাকিস।
তুই বড়ো মানুষ হবি,
ভালো মানুষ হবি।
পৃথিবী মাঝে সৎকর্মে জীবন রচবি!
সান্ত্বনা এটাই।
তবুও!
বুকের ভেতর অস্থির জালাপোড়া।
চারপাশে অদ্ভুত নিরবতা!
নিঃশব্দ রাতের প্রর্থনা,
ভালো থাকিস খোকা।