ইভ্যালি কি আসলেই প্রতারক?- আব্দুল্লাহ আল সাফি

0
547

ইভ্যালি কি আসলেই প্রতারক?- আব্দুল্লাহ আল সাফি

টাঙ্গাইলের ‘ভুয়াপুর’ থেকে উৎপত্তি হয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ‘আইটিসিএল’ এর একাউন্টে মাসে মাসে ২০০ করে ২২০০ টাকা জমিয়েছিলাম… তারা ধরা খাওয়ার প্রায় ১ মাস আগে ভাগ্যক্রমে ২০০০ টাকা তুলে নিয়েছিলাম, দেড় মাস ঘুরিয়েছিল সে টাকা দিতে। এখনও ২০০ টাকা পাওনা আছি…

এরপরে কাকরাইল মোড়ে ‘ডেসটিনি’র অফিসের সামনে মাঝে মাঝে বাস থেকে দুয়েকবার নামা ছাড়া তাদের ধারেকাছে ছিলাম না। দৈনিক ডেসটিনি অফিসে গিয়েছি ৮/১০বার। ডেসটিনির চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে কয়েকবার দেখা হয়েছিল কিছু ইভেন্টে। আর শুধুমাত্র একবার এক ‘ডায়মন্ড/প্লাটিনাম’ টাইপ ‘টাই পরা’ ডেসটিনি সদস্যের সঙ্গে হালকা কথা হয়েছিল তাদের ব্যবসায়ীক মডেল নিয়ে, অল্পের জন্য লাঞ্চিত হতে হতে রক্ষা পেয়েছি। কাছের বহু মানুষকে দেখেছিলাম, ৮০০০ টাকায় ‘গাছ’ কিনতে। তাদের এখনও মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করে জিজ্ঞেস করি, ‘ভাই, আপনার গাছ কতোবড় হলো?’

পিরামিড স্কিম বা ডানহাত-বামহাত টাইপ মডেল নিয়ে বেশ খোঁজ নেয়ায় জেনেছিলাম, প্রথম দিকের বেশ একটা অংশ লাভবান হয়। কিন্তু শেষের দিকে যারা আসে, তারা ধরা খায়। আরেকটা গ্রুপ ধরা খায়, তারা হচ্ছে সাপ্লাইয়ার গ্রুপ (যারা র মেটেরিয়াল নয়তো রেডি প্রডাক্ট সরবরাহ করে)।

ডিজিটাল যুগে ই-কমার্সের মোড়কে ডিজিটাল পিরামিড স্কিম টাইপ শুরু করেছিল ইভ্যালি। ‘এ গ্রুপ’ এর টাকা নিয়ে অপেক্ষা করাবে, ‘বি গ্রুপ’ এর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ‘এ গ্রুপ’কে পণ্য দেবে। এভাবে একসাথে কখনো কখনো ‘সি গ্রুপ’ এর কাছ থেকেও টাকা নিয়ে ‘এ গ্রুপ’কে পণ্য দেবে। একই সাথে সরবরাহ করা মোটরবাইক, প্লাজমা টিভি, মোবাইল ফোন সরবরাহ করবে বিভিন্ন কোম্পানি, তাদেরও বেশ সময় অপেক্ষা করাবে। একটি মোটরবাইক নির্মাতা সরাসরি পণ্য বানিয়ে একটি পণ্যে যে পরিমান লাভ করতে পারে না, ইভ্যালি অনেকটা সেই লেভেলে ছাড়/ক্যাশব্যাক দিয়েছে। একটা জমে থাকা অর্থ আর সময়ের মারপ্যাচে এটি একটি প্রচ্ছন্ন প্রতারণা, অসম প্রতিযোগিতা।

মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন, ই-ক্যাব স্পন্সর, বিলবোর্ড দিয়ে সাময়িক কাভারআপ। অল্পসময়ে মালিকের কোটি টাকার দুই-তিনটি গাড়ি কেনা, বাজারে দেনা ৫০০ কোটি টাইপ নানা খবরের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ। জল অনেক ঘোলা হবার পরে কেন যে, তারা এটা করে! আগে কেন দেখে না!

একটা জিনিস খেয়াল করবেন, যারা এখন ইভ্যালির পক্ষে কথা বলছে তারা ইভ্যালির সরাসরি ও অগ্রগামী বেনিফিশিয়ারি। তারা বিজনেস মডেল নিয়ে চিন্তা করেনা, বাজারের ইকোসিস্টেম সর্ম্পকে জ্ঞান নেই, রিস্ক ফ্যাক্টর বোঝে না…কারণ তারা দিনশেষে লাভবান।

ইভ্যালির অনলাইনে একাউন্ট করে কক্সবাজার শপ টাইপ একটা দোকান থেকে ক্যাশ অন ডেলিভারি শর্তে বার্মিজ ড্রাই ফ্রুট অর্ডার করেছিলাম। কিন্তু আজও তা আসে নাই, দুই বছরের বেশি হবে। তবে ওই কক্সবাজার শপওয়ালা আমার ফোন নম্বর পেয়ে গেছে, ডিরেক্ট এসএমএস পাঠায় মাঝে মাঝে। এছাড়া আমি ৫০০০ হাত দূরে ছিলাম ইভ্যালি থেকে কিছু কিনতে।

জগতের সকল প্রাণি সুখী হোক, ‘মানসম্মত’ জীবন যাপন করুক।

সূত্র- লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধআমি চলে যাচ্ছি – কবি জুনান নাশিত এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধএ শহর তোমার আমার- রত্না চক্রবর্তী’র গল্প

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে