জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : নাটোরে চিকিৎসকের সাথে একান্ত ভিডিও ভাইরাল হওয়া আলোচিত সেই কলেজ শিক্ষিকা নাজমুন নাহার সাথীকে নৈতিক স্খলের দায়ে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কলেজ কর্তপক্ষ। বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ ডলার ও অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান স্বাক্ষরিত আদেশের মাধ্যমে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
গত তিন মাস থেকে নাটোর জেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার পর তাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেছে নাটোর সিটি কলেজ পরিচালনা পরিষদ। ৩ দফা নোটিশ করে সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দিলো কলেজ কর্তৃপক্ষ।
আগামী ১ অক্টোবর থেকে এই বরখাস্তের আদেশ কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন কলেজ পরিচালনা পরিষদ সভাপতি ও নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইসতিয়াক আহমেদ ডলার। এদিকে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি পাওয়ার কথা স্কীকার করে অভিযুক্ত নাজমুন নাহার সাথী এ ব্যাপারে পরে কথা বলবেন বলে জানান।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, গত জুন মাসের মাঝামাঝি শিক্ষিকা সাথীর সাথে নাটোরে বসবাসকারী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম লিপনের ৪০মিনিটের একটি পর্ণ ভিডিও শহরের লোকজনের মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় প্রায় দেড় মাস পর কলেজের ৭০জন শিক্ষক-কর্মচারী, কিছু শিক্ষার্থী ও অন্য একজন নারী ভুক্তভোগী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কলেজের অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খানের কাছে লিখিত আলাদা তিনটি আবেদন করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবী করেন।
পরে বিষয়টি কলেজ পরিচালনা পরিষদের মিটিং এ আলোচনা হওয়ায় পর তাকে তিন বার কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। এসব নোটিশের জবাবে শিক্ষিকা এই চিকিৎসককে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করার দাবী করলেও তার স্বপক্ষে কোন প্রমান উপস্থাপন করতে পারেননি।
এদিকে গত ১২ আগস্ট তারিখ ব্যবহার করে ওই শিক্ষিকা ঢাকা জজ কোর্টের মরহুম প্রবীণ আইনজীবী এম এ রেজার সিল স্বাক্ষর জাল ও স্ট্যাম্প ক্রয়ের তারিখ জালিয়াতি করে তালাকের একটি হলফনামা ও তালাকের নোটিশ প্রদানের অনুলিপি কলেজের কারণ দর্শানোর প্রথম নোটিশের জবাবের সাথে গত ২৫ আগস্ট কলেজে জমা দেন।
বিষয়টি কলেজের নজরে আসায় এবং তাকে পরবর্তি নোটিশে জালিয়াতির কারণ ব্যাখ্যা করতে বলায় তিনি মরহুম প্রবীণ আইনজীবী এম এ রেজার সিল স্বাক্ষর জালিয়াতির কথা স্বীকার করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর পুনরায় একই আদালতের আইনজীবী সোলায়মান হোসেনের সাক্ষরে নতুন আরেকটি হলফনামা জমা দেন।
কলেজ পরিচালনা পরিষদ সভাপতি ও নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইসতিয়াক আহমেদ ডলার বলেছেন, ‘এই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আসা অনৈতিক যৌনাচারের অভিযোগের সঠিক ব্যাখা এবং বিয়ের সঠিক প্রমান তিনি উপস্থাপন করতে পারেননি। উল্টো বিষয়টি ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য তিনি শেষ নোটিশের জবাবে নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আর্দশের সৈনিক দাবী করে ব্যক্তি স্বার্থে জাতীর জনকের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা করেছেন।
আগামী ছয় মাসের মধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে এই শিক্ষিকার বিষয়টি চুড়ান্ত ভাবে নিস্পত্তি করবেন বলেও তিনি জানান। তারা যদি স্বামী-স্ত্রীই হন তাহলে শহরের সবচেয়ে নিম্নমানের একটি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের চেম্বারে কেন যৌন সর্ম্পক স্থাপন করতে হলো!’
এসব বিষয়ে জানতে নাটোর সিটি কলেজের সমাজকর্ম বিষয়ের বহুল আলোচিত এই শিক্ষিকা নাজমুন নাহার সাথীর মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি জানান, ‘সাময়িক বরখাস্তের চিঠিটি তিনি হাতে পেয়েছেন।’ এ ব্যাপারে তিনি পরে কথা বলবেন।
নাটোর সিটি কলেজের অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান বলেছেন, জেলার অন্যতম প্রধান ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন একজন শিক্ষিকা গত ছয় বছর থেকে কর্মরত ছিলেন এটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। কলেজের সকল শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রী এমন শিক্ষিকার জন্য লজ্জিত ও বিব্রত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।