বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ও আমাদের অবস্থান- রেজাউল করিম খান
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস আজ (৩ মে)। এবারের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্লোগান, ‘মিডিয়া ফর ডেমোক্র্যাসি: জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকশন্স ইন টাইমস ডিজইনফরমেশন‘।
১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ মোতাবেক ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে তারিখটিকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যম কর্মীরা এ দিবসটি পালন করে আসছে। এই দিবসটিতে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার শপথ নেওয়ার পাশাপাশি ত্যাগী সাংবাদিকদের স্মরণ ও তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানো হয়।
উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, গণমাধ্যম হচ্ছে সংগৃহীত সকল ধরনের মাধ্যম, যা প্রযুক্তিগতভাবে গণযোগাযোগ কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গণমাধ্যমকে প্রধান ৮টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই সেলফোন, ভিডিও গেম এবং কম্পিউটার গেমসকে গণমাধ্যম হিসেবে উপস্থাপনা করায় বিতর্ক চলছে। বিংশ শতাব্দীতে সেভেন মাস মিডিয়া নামে গণমাধ্যম পরিচিত ছিল। সে ধারায় বর্তমান ৭টি গণমাধ্যম হলো –
১.মুদ্রিত (বই, পাম্পলেট বা ক্ষুদ্র পুস্তক, সংবাদপত্র, সাময়িকী প্রভৃতি)
মাধ্যম যা পঞ্চদশ শতক থেকে প্রচলিত হয়ে আসছে।
২.ধারণ যন্ত্র বা রেকর্ডিং (গ্রামোফোন রেকর্ড, ম্যাগনেটিক ট্যাপ, ক্যাসেট,
কার্ট্রিজ, সিডি, ডিভিডি ইত্যাদি) মাধ্যম যা ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে
প্রচলিত।
৩.সিনেমা যা ঊনবিংশ শতক থেকে প্রচলিত।
৪.রেডিও সম্প্রচারের মাধ্যমে যা ১৯১০ সাল থেকে প্রচলিত।
৫.টেলিভিশন সম্প্রচার ব্যবস্থা যা ১৯৫০ সাল থেকে প্রচলিত।
৬.ইন্টারনেট ব্যবস্থা যা ১৯৯০ সাল থেকে প্রচলিত।
৭.মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যা ২০০০ সাল থেকে গণমাধ্যম হিসেবে
স্বীকৃতি লাভ করেছে।
বিবিসি জানাচ্ছে, বাংলাদেশে গণমাধ্যম কিংবা এর কর্মীরা কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেটা নিয়ে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক বেশ পুরনো। ২০১৯ সালে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস নামে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানে ১৮০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এর আগের বছরের তুলনায় চার ধাপ নেমে ১৫০-এ দাঁড়িয়েছে।
অথচ গত বছর লন্ডনে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম খোদ ব্রিটেনের গণমাধ্যমের চেয়েও স্বাধীন।
পত্রিকায় কি সব খবর পান? এই প্রশ্নের জবাবে একজন পাঠক বলেন, “আমার কাছে মনে হয় সাংবাদিকরা চেষ্টা করে। কিন্তু তারা প্রশাসনের দিক দিয়ে বাধার মুখে পড়ে। যার কারণে সবসময় সঠিক খবর দিতে পারে না।” অনেকের মন্তব্যই অনেকটা একইরকম। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ঢাকায় সাংবাদিকতা করছেন উদিসা ইসলাম। অনলাইন গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রধান প্রতিবেদক মনে করছেন, সাংবাদিকদের উপর চাপ আছে। কখনো সেটা কর্পোরেট, কখনো বিজ্ঞাপন বা প্রভাবশালী কোন মহলের কাছ থেকে সেই চাপ আসে। কিন্তু এর বাইরেও আরো একধরণের চাপ আছে, যেটা অনেক সময় সাংবাদিকদের সেলফ সেন্সরশিপে বাধ্য করে।
এর বাইরে তৈরি হয়েছে এক শ্রেণির অনুগত সাংবাদিক। তাদের বক্তব্য শুনলে হাসি ও রাগ, দুটোই ধরে রাখা কষ্টকর।
যদিও সরকার এর বিপরীত মতই দিচ্ছে।