স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও একজন সংস্কৃতিকর্মীর ধিক্কার

0
212
Debashish Sarker

নাটোরের বিশিষ্ট সাংবাদিক, শিক্ষক, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেবাশীষ কুমার সরকার‘এর ফেসবুক ওয়ালে নাটোর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর উদ্দেশ্যে ধিক্কারজনক একটি পোস্ট করেন। সেই পোস্টে নাটোরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের মন্তব্যের ঝড় উঠে। নাটোর কণ্ঠের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।

‘বড় দুঃখ এবং কষ্ট নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী হিসেবে বলতে হচ্ছে শিল্পীরা বড় অসহায়, এর সাথে জড়িতরা সবসময়ই অবমূল্যায়িত হয়। বর্তমান করোনা পরবর্তী কালীন পরিস্থিতিতে সবেমাত্র মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

ঠিক এই সময়ে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি যা কিনা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, তারা সারাদেশ ব্যাপী একটি করে বধ্যভূমিতে পরিবেশ থিয়েটার নাটকের মঞ্চায়ন করতে যাচ্ছেন। নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ।

এখানে জেলার প্রতিষ্ঠিত প্রায় সকল সংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান থেকেই শিল্পীদের অংশগ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। এজন্য শিল্পকলা একাডেমি কে সাধুবাদ জানাতেই হয়। এবার আসি অন্য কথায়। যারা সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী কিংবা তথাকথিত জেলা সদরের সাংস্কৃতিক শিল্পী তারা কিন্তু নিজেদের পরিবারের কাছে সাংঘাতিক ধরনের অবমূল্যায়িত।

কারণ বনের মোষ তাড়ায় ওরা ঘরের অন্ন ধ্বংস করে। অথচ রোজগার করবার জন্য তাদের স্পৃহা কখনোই সাংস্কৃতিক চর্চার থেকে বেশি নয়। এর জন্য তারা অনেকেই সামাজিকভাবে একটি স্তরে কোন রকমে খেয়ে পরে বেঁচে থাকেন। বর্তমান সমাজে সামাজিকভাবে বিভিন্ন কাজ করে তাকে টিকে থাকতে হয়।

এমত অবস্থায় একটি নাটকের জন্য বিনা পারিশ্রমিকে, সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত যে সময়টাতে কিনা সে পরিবারের জন্য অন্ন জোগাড়ের জন্য কাজ করে থাকেন সেই সময়টাতে প্রায় ২০ দিন ব্যাপী তাকে নাটকের মহড়ায় অংশ নিতে হবে।

নাটোর থেকে লালপুর প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে একজন শিল্পীর প্রায় ২০ দিন ব্যাপী যাবেন নাটকের রিহার্সেল করতে তাও যাতায়াত ভাড়া ব্যতীত!!! তাহলে বুঝুন তারপর ভাবুন, এবারে কি হবে? শুধুমাত্র দুপুরে খাবার পাবেন ওই শিল্পী।

হায়রে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ, আর হায়রে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি। কি দরকার এসব নাটক পরিবেশন করে???, যে অর্থনৈতিক মুক্তি , যে স্বাধীনতার জন্য দেশকে স্বাধীন করেছিল আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের পূর্বপুরুষরা!!

সেখানে যদি সেই অর্থনৈতিক মুক্তি না আসে একজন শিল্পীর মর্যাদায় যদি প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে কেন এই বৃথা আয়োজন। আর কতো বলি হবে সাধারণ নিবেদিত ভালোবাসাময় শিল্প প্রাণ, আর কত সংসার উজাড় হবে গ্রামে-গঞ্জে পল্লী-বালার কোলে!!!!

তারপরও বিনা পারিশ্রমিকে স্ত্রী-সন্তানদের অভুক্ত রেখে হয়তো একদল শিল্পী নাটকে অংশ নেবে। পেটের ক্ষুধা কে নিরবে চাপা দিয়ে হাসি মুখে, বেদনা দগ্ধ হৃদয়ে মুখে রং মেখে অন্যদের করবে আলোড়িত। এই আমাদের স্বাধীনতা, এই আমাদের অর্জন ,এই আমাদের ৫০ বছর পূর্তি । ধিক শিল্পকলা একাডেমী ধিক দেশের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়।

দেবাশীষ কুমার সরকার
নাটোর
সদস্য সাকাম সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান’

মন্তব্য করেন- নাটোর ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, সমকাল ও একুশে টেলিভিশনের নাটোর জেলা প্রতিনিধি নবিউর রহমান পিপলু। ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং মাছরাঙ্গা টেলিভিশন টিভি ও দৈনিক বণিক বার্তার নাটোর জেলা প্রতিনিধি, মাহবুব হোসেন। ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক ও বাংলা টিভির নাটোর জেলা প্রতিনিধি মেহেদি হাসান বাবু।

ডিবিসি টেলিভিশনের নাটোর জেলা প্রতিনিধি পরিতোষ অধিকারী। নাটোরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সাকাম সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান’এর সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম নান্টু, নাটোরের শিল্প ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, এম আসলাম লিটন। এমডি ইসমাইল হোসেন , মৌমিতা ভট্টাচার্য ,কবি কাজী জুবেরী মোস্তাকসহ অনেকেই জেলা শিল্পকলা একাডেমীর এমন সিদ্ধান্তকে ধিক্কার ও নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন।

নাটোর জেলা শিল্পকলা একাডেমির যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নাটোরের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন নাটোরের সুশীল সমাজের নাগরিকরা।

Advertisement
উৎসDebashish Sarker
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে আ’লীগের সম্প্রীতি সমাবেশ
পরবর্তী নিবন্ধপবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন নাটোরে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে