টাইটানিকের মতো ডুবে যাচ্ছি ?
কবি সুপ্তি জামান
কোন এক বৈশাখে
আমরা রিক্সা ভ্রমণ করেছিলাম
বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম
বন্ধুকে জড়িয়ে ধরেছিলাম
আমরা ভালবেসে গাঘেঁসে বসেছিলাম
যতদূরেই থাকতাম
সপ্তাহান্তে ঠিক দেখা হতো।
তখন পৃথিবীর কোন প্রান্তে
লকডাউন ছিল না
এই শব্দটির নামই তখন শুনিনি।
একদিন মরে যাব জানতাম
তাই বলে কেউ আমাকে
মারার জন্য পিছু পিছু ছুটছে
এটা দূর কল্পনাতেও ছিল না।
কেমন করে পাল্টে গেল চেনা পৃথিবীটা!
মনে হয় আমি টাইটানিকে চড়েছি
দেখছি জাহাজটা ডুবছে
জাহাজের ক্যাপ্তেনের মতো
আমিও নিজেকে প্রবোধ
দিতে এই কবিতাটি লিখছি।
এই বিপর্যয়ের মধ্যেও
কেউ কেউ ঠিক কেলের মতো
স্বরুপেই আছেন দুর্বিনিত!
কেউ নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত
তৈল মর্দনে নেই পিছিয়ে।
মনে মনে ক্রূর হাসি হাসছেন
করোনা করবে না তাদের কেশাগ্র স্পর্শ!
কাউকে কাউকে মনে হয়
ঠিক যেন রোজের মতো
বিপন্ন জ্যাককে বাঁচাতে প্রাণপনে ছুটছে।
আমরা সকলে এ যাত্রায় বেঁচে যাব না
জ্যাকের মতো কেউ কেউ
হারিয়ে যাব কালের অতল গহ্বরে;
অনাগত ভবিষ্যতে একদিন কেউ
রোজের মতো লিজের কাছে কাঁদতে কাঁদতে
আমাদের এই লড়াইয়ের গল্পটা বলবে।
কেমন হবে সেদিনের পৃথিবীটা
মানুষ কি মনে রাখবে
সীমাহীন অত্যাচারে পৃথিবীকে অতিষ্ট করলে
পৃথিবী নিজেই একদিন রুখে দাঁড়ায়
দাবড়িয়ে ঘরে ঢোকায়!
একটি কথাই শেষ পর্যন্ত বলবো
লোভে পাপ পাপে মৃত্যু
এই কথাটি আমরা যেন ভুলেও ভুলে না যাই।
ছোট ছোট সহজ কথাগুলোর মর্ম বুঝলেই
মানুষ বাঁচবে, বাঁচবে ধরিত্রি।
যেমন “সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন”
আরও একটি কথা কভু যেন ভুলে না যাই
“মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।”
এসব ভাবতে ভাবতে আমার মনে হয়
আমি আটলান্টিকের বরফ
শীতল জলে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছি,
মানব প্রজাতি হিমে জমে যাচ্ছে,
না, এসব কেবলই ভাবনা।
বদলে যাওয়া পৃথিবীটা আরো সুন্দর হবে
মানুষ সব ধ্যানী হবে
ভোগের লালসায় হবে না আর মত্ত
এ যাত্রায় বেঁচে গেলে
মানুষ মানুষের মতো বাঁচবে।
কি করে এতটা আশাবাদী হবো
কেল যে বেঁচে গিয়েছিল!
এভাবেই কেলরা দুর্দান্ত প্রতাপে টিকে রয়
অণুজীবের মতোই নির্বোধ হলেও ওরা বিনাশহীন।
তাই মহামারিকেও ফিরে ফিরে আসতে হয়।
জ্যাকরা হেরে যায়
রোজরা হিমবরফ বেদনা বুকের পাঁজরে
লুকিয়ে রেখে নিরন্তর
জীবন সংগ্রাম চালিয়ে বেঁচে রয়
লিজদের কাছে গল্প বলার জন্য।