দিগন্ত সৌরভ : একটা সময় পর্যন্ত জানতাম ম্যাগনোলিয়া শীত প্রধান দেশের অভিজাত ফুল। কিন্তু ২০০৮ সালে অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা প্রমাণ করতে সক্ষম হলেন ম্যাগনোলিয়া শুধু বিদেশী ফুল নয়। এর একটি নিজস্ব ভ্যারাইটি বাংলাদেশেরও রয়েছে। তাও আবার তারই জন্মস্থান বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড়ে। দৈনিক প্রথম আলোয় এই ফিচারটি প্রকাশ হওয়ার পর উদ্ভিদ প্রেমিদের মধ্যে হইচই পড়ে যায়।
এরপর থেকে আমরা জানলাম বাংলাদেশেরও একটি বুনো ম্যাগনোলিয়া রয়েছে যার বাংলা নাম দেয়া হয়েছে- দুলিচাঁপা। অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা বেঁচে থাকতে এই ফুলের অনেক গল্প শুনেছি তার কাছে থেকে কিন্তু দেখার সুযোগ আর হয়ে উঠলো না। ২০১৮ সালে মে অথবা জুন মাসে যখন বড়লেখায় এসেছিলাম ওই সময় পাথারিয়া পাহাড় থেকে তথ্য তালাশ করে দুলিচাঁপা গাছের সন্ধান লাভ করি।
কিন্তু গাছের দেখা পেলেও হতাশ হলাম এই জন্য যে, কোন ফুলের দেখা পেলাম না। পরবর্তী বছরে ফুলের দেখা পাবো এই আশায় বাড়ির পথ ধরলাম। যান্ত্রিক ঢাকা শহরের ব্যস্থতার কবলে পড়ে ২০১৯ সালে আর বড়লেখায় আসা হয়ে উঠেনি। অবশেষে ২০২০ সালের বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি দুলিচাঁপা দর্শনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিল।
২০২০ এর মার্চ মাস থেকে বড়লেখাতে এসে দুলিচাঁপা পর্যবেক্ষণ করছি।
চৈত্র মাসের প্রথম দিক থেকে গাছে কলি এসেছে। কিন্তু কখন ফুল ফুটবে সেই চিন্তায় আর দিন কাটেনা। রতুলী থেকে একদিন পর পর গাংকুল, হরিপুর, খলাগাও, বিওসি হয়ে পাথারিয়ায় নিদৃষ্ট স্থানে গিয়ে অপেক্ষা করি কিন্তু ফুল ফোটার কোন লক্ষণ নেই। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ সন্ধ্যায় সেই মহেন্দ্রক্ষণটা কাছে আসলো। দুলিচাঁপা রাতের ফুল।
সন্ধ্যার সাথে সাথে ফোটে আর সারারাত সুগন্ধ বিলায়। চারদিকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যখন ইফতার আয়োজনে ব্যস্থ তখন পাথারিয়ার এক নির্জন গ্রামে আমি। মাটি থেকে ২০/২৫ ফুট উঁচু গাছের উপর উঠে ক্যামেরা নিয়ে ফুল ফোটার অপেক্ষায়। দীর্ঘ সময় গাছে দাঁড়িয়ে থাকাতে একদিকে পিঁপড়ার দংশন অন্যদিকে দুলিচাঁপা ফোটার অপেক্ষায় আমার সাথেে এক ঝাঁক মৌমাছির দল।