শাহিনা রঞ্জু : অনেক প্রতিক্ষার পর সেন্টমার্টিন্সের ঘাটে এসে পৌঁছলাম। ভ্যান ঠিক করা ছিল আর স্বাস্থ্য বিভাগের এখানকার লোকজন ফুল হাতে করে রিসিভ করার জন্য দাড়িয়ে আছে। শেখ মুজিব স্যার বললেন সেন্টমার্টিন্স থেকে ফোনে লোকজন বলছিল স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্মসচিব শাহিনা খাতুন আসতেছে অর্থাৎ স্যারের কথা কেউ বলছেনা।
আমার হাসি পাচ্ছিল অতিরিক্ত সচিব যে যাচ্ছে সে খেয়াল কারও নেই। আমি বললাম হ্যা তাইতো মানুষতো এস পি কে না খুঁজে দারোগাকে খোঁজে। প্লাস্টিকের ফুলের রিসিপশনে মন্দ লাগছিলোনা। ওরা গল্প করেছিল এখানে নাকি এটাই প্রচলন। তবে হাজারো মানুষের ভীড়ে ফুলের রিসিপশনে নিজেকে ছোট লাগছিল।
এ বিষয়গুলো আমি কখনোই উপভোগ করিনা কারন আমার দুদিনের জীবন দুদিনের চাকরী এর মধ্যে জোর করে নেওয়া সম্মান এর কোন মূল্য নেই।
ভ্যানে উঠে লোকজন সরিয়ে সরিয়ে একটা খাবার রেষ্টুরেন্টের সামনে গিয়ে ভ্যান থামালো। খাবার খেলাম।
আবার ভ্যানে করে নিসর্গ কুটিরে এসে পৌঁছলাম। কুটিরগুলো ভাল লাগলো কিন্তু লেপ কম্বল খুবই অপর্যাপ্ত। যা আছে খুবই পাতলা, গরমকালে ব্যবহার করার মত। ভাবলাম হয়তো রাতে ঘুমোবার আগে কোন ব্যবস্থা হবে। সবাই মিলে ফ্রেস হয়ে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখলাম।
বিভিন্ন পোজে ছবি তুললাম। রাত হয়ে গেল আমরা পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ দিকে হাটছিলাম। সমুদ্র সৈকত, ডাবের দোকান, মাছের দোকান, বিভিন্ন প্রকার শৈবাল দেখছিলাম। স্যামন, টুনা কোরাল, বিভিন্ন রঙের রূপচাদা মাছ, চিংড়ী, কাঁকড়ার দোকানগুলো যেন ছোট মেয়েটা দুরে দুরে থেকে ছবি তুলছিলো।
আমার খুব ঠান্ডা লাগছিল অথচ কেউ কেউ শুধু একটা শার্ট গায়ে দিয়ে ঘুরছিলো। ভাবছিলাম ওরা সুস্থ্য আর আমি কি অসুস্থ? অনেক পথ হাটলাম। পরে যারা বীরদর্পে শীত উপেক্ষা করে যারা হাটছিল। তারা সবাই চাদর কিনলো। শেখ মুজিব ভাবীর গলা বসে গেল।
ছোটবাবুর অতটা নয় কিন্তু গরম পানি খাচ্ছিল। হাসপাতালের কর্মচারী কাদের মনে হচ্ছিল আঁকাশের চাঁদটাও এনে দিতে চাচ্ছিল। বললো স্যার শহরে যাবেন? আমি বললাম এই দ্বীপে আবার শহর গ্রাম আছে নাকি?
কাদের-আছে আছে স্যার। চলেন আজ আপনাদের এক নতুন জিনিস খাওয়াবো।
কী সে জিনিস?
আমি ভেবেছিলাম কোন সামুদ্রিক মাছ টাছ হবে। কিন্তু না সে এক দোকানে নিয়ে অর্ডার দিল বার্মিজ ক্যালসিয়াম। শেখ মুজিব ভাবী বললেন আপা আপনারা খান আমি খাবোনা। ভাবী খুব ভাল রান্না করেন। স্যারকে দুপুরে যে খাবার পাঠান আমরা মাঝেমধ্যে তাতে ভাগ বসাই বলে জানি তিনি কত সুস্বাদু রাঁধেন আমরা জানি।
মূলত যিনি নিজে সুস্বাদু রান্না করেন তিনি উল্টাপাল্টা খাবার খেতে পারেন না। আমরা ৭/৮ জন বার্মিজ ক্যালসিয়াম খেলাম। সেটার টেস্ট বর্ণনা করলাম না। এখানে এসে খেয়ে যেতে নিমন্ত্রণ জানালাম।
রাতে কোরাল মাছ দিয়ে ভাত খেলাম, নামাজ কালাম পড়ে ঘুমোতে গেলাম।
তবে এই প্রচন্ড শীতে মাত্র দূটো পাতলা কম্বল দিয়ে ঘুমোবার চেষ্টা করলাম। মনে হচ্ছে রাতে ঠান্ডায় ঘুম হবেনা কারন দরজাটা ফাঁকা আছে আর সমুদ্র খুব কাছেই। কিছুই করার নেই একটা রাত এভাবে কাটবে। তবে সূর্যোদয় দেখবো বলে প্লান করে আবারও নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠলাম। নামাজ পড়ে ভাবছি একা একা সমুদ্র সৈকতে যাব নাকি ভাবীদের ডাকবো। গতরাতে দেখেছি ভাবী ঠান্ডায় কথা বলতে পারছেনা আবার ভোরের ঠান্ডাটা লাগলে অসুস্থতা বেড়ে যাবে ভেবে ডাকলাম না। একা একা সমুদ্রের কাছে গেলাম। তখনো অন্ধকার ছিল। সম্পা জেগেছিল তাই ওকে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করে আবার রুমে এলাম।
সমুদ্রে সূর্যাস্ত
১৪/২/২০২০