আমি মেঘ খাবো মা
কবি সুপ্তি জামান
ভীড়ের মধ্যে মানুষের গা ঘেঁসে হাটছিলাম কার্তিকের নিভে আসা বিকেলে
আশ্বিন মাস গত হলো গতকাল, আজ পহেলা কার্তিক, হেমন্ত এসেছে দ্বারে
আহাঃ হেমন্ত
প্রসন্ন এক ঋতু।
তখনও আকাশের কোলে ঝুলে ছিল শেষ বিকেলের শেষ আলোর আভাটুকু
আমার সম্মুখে মায়ের হাত ধরে হাঁটছিল একটি ছোট্ট পরির মতো মেয়ে
বছর পাঁচেক বয়স হবে ওর
আমরা কালি মন্দিরের কাছাকাছি
দূর্গাপুজা সমাসন্ন
মন্দির চত্বরে দূর্গা, লক্ষী, স্বরস্বতী, গণেশ, কার্তিকের মূর্তি মূর্তমান, সাজসজ্জা এখনও ঢের বাকী
মাঝারি ভীড় লেগে আছে মন্দির ও সন্মুখের রাস্তায়
ভীড়কে চমকে থমকে দিয়ে
মায়ের হাত ধরে হাঁটতে থাকা পরির মতো মেয়েটি বলে কিনা আকাশে কি সুন্দর মেঘ
আমি মেঘ খাবো!
তারপর থেকে আমার ভাবনার জগত দুলছে
আমি বার বার বলছি ‘ মা, আকাশে কি সুন্দর মেঘ, আমি মেঘ খাবো’
কেন জোছনা খেতে ইচ্ছে করে মানুষের!
কেন মেঘ খেতে ইচ্ছে করে পাঁচ বছরের মেয়েটির!
কেন কোন কোন দিন ঝলমলে রোদ আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকে!
হলুদাভ সোনালী রোদ দেখলেই আমার রৌদ্রস্নাত হেমন্তের সকাল হতে ইচ্ছে করে।
ভীড়ের মধ্যে এসব ভাবনা এসে আমার পায়ে পায়ে জড়িয়ে যায়,
তখন নিজেকে মনে হয় আমি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মতো প্রশান্ত একজন মানুষ
আমার সাম্রাজ্যে জুড়ে হেমন্তের প্রশান্ত দিন-দিনান্ত ছোট ছোট নীল, নীলাভ-বেগুনি, সাদা রঙের কানশিরা ফুল মাটির উপর একদল গ্রাম্য শিশুর মতো সজীব লাজুক স্বপ্নাতুর চোখে আপন মনে দিনমান রয়েছে নিমগ্ন।