উপন্যাসের পথে’র বর্ধিত সংস্করণ- স্বকৃত নোমান

0
267

‘উপন্যাসের পথে’র বর্ধিত সংস্করণ- স্বকৃত নোমান

একদিন সাকুরা রেস্তোরাঁ ও বারে এক আড্ডাশেষে বের হওয়ার সময় কেরু অ্যান্ড কোম্পানির হুইস্কি খেতে খেতে ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া জনৈক লেখক আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘লেখার তো সময় পাই না, আমাকে দিয়ে আর বুঝি লেখা হবে না।’ আমার বোধের গভীরে বেজে উঠল একটা টঙ্কার। কেন তিনি লেখার সময় পান না? কেন তাকে দিয়ে লেখা হবে না? একজন ঔপন্যাসিকের জীবনধারা কেমন হওয়া উচিত? জীবনটাকে কীভাবে সাজালে তিনি উপন্যাস লেখার মতো সময় বের করতে পারবেন?

বাসায় ফিরে লিখতে বসে গেলাম ঔপন্যাসিকের জীবনধারা নিয়ে, ‘দ্বিতীয় সত্তার সঙ্গে কথপোকথন’ শিরোনামে, উপন্যাসশিল্পের একজন কর্মী হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে। প্রায় দেড় হাজার শব্দের প্রথম পর্বটি লিখে মধ্যরাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে দেখি লেখাটিতে বিস্তর লাইক ও কমেন্ট। শেয়ারও শতাধিক। অনেকে প্রশংসা করলেন এবং লেখাটি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিলেন।

উৎসাহ পেয়ে লিখে ফেললাম দ্বিতীয় পর্ব। লেখা চলতে লাগল। একেকটি পর্ব লিখি আর ফেসবুকে পোস্ট করি। কেউ প্রশংসা করেন, কেউ নিন্দা করেন। লেখালেখির ক্ষেত্রে কোনো নিন্দা আমার গায়ে লাগে না। আমার কাজ লেখা, বেঁচে আছি লেখার জন্যই, লিখতে পারি বলে জীবনটাকে অর্থপূর্ণ মনে হয়। বিষয় যা-ই হোক, আমাকে লিখে যেতে হবে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শ এবং সপ্তাহে কমপক্ষে তিন হাজার শব্দ। বেশি লেখাকে আমি দোষণীয় মনে করি না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার সংখ্যা এত বেশি যে, এক জীবনে পড়ে শেষ করা অনেকের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তলস্তয়, দস্তয়ভস্কি, তরাশঙ্কর, মানিক, বিভূতির মতো লেখকগণও কম লেখেননি। বিপুল তাঁদের রচনা। লিখতে পারা একটা বড় ক্ষমতা। লিখে লিখে এই ক্ষমতার শাণ দিতে হয়, ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে তুলতে হয়। নিন্দা বরং আমার লেখাকে সুসংহত করে, আরো বেশি লেখার তাড়না তৈরি করে।

ফেসবুকে ‘দ্বিতীয় সত্তার সঙ্গে কথপোকথনে’র পর্বগুলো পড়ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতিজন শ্রদ্ধেয় নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। তাঁর সঙ্গে একদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে তিনি দ্বিতীয় সত্তার সঙ্গে কথপোকথনের প্রশংসা করলেন এবং আরো বিস্তারিতভাবে লেখার পরামর্শ দিলেন। বেড়ে গেল উৎসাহ। চালিয়ে যেতে লাগলাম লেখা।

এরই মধ্যে আমার বিরুদ্ধে একটি ভিডিও ভাইরাল হলো ফেসবুকে, যেখানে বেগমজাদী মেহেরুন্নেসা পারুল অভিযোগ তুলেছেন, আমি নাট্যকার সেলিম আল দীনের লেখা চুরি করেছি। বাংলা ভিশন টেলিভিশনের অনেক পুরনো ভিডিও ক্লিপ। মেহেরুন্নেসার জীবৎকালে ভিডিওটি ফেসবুকে আসেনি, যেই না তিনি প্রয়াত হলেন অমনি নিন্দুকেরা সেটি ভাইরাল করে দিল। ক্লিপটির সূত্র ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা আমাকে হেনস্তা করতে লাগল। তাদের মন্তব্য পড়ি আর হাসি। আহা বুদ্ধির মুক্তি না-ঘটা মানুষেরা! তারা বুঝতে পারে না গোলাপ আর কলমিফুলের সৌরভের ফারাক।

তখন মনে হলো, আচ্ছা, আমার উপন্যাস ও গল্পের বইগুলো রচনার পেছনে তো লুকিয়ে আছে অনেক ঘটনা, অনেক গল্প; অল্প কজন বন্ধু ছাড়া যা আর কেউ জানে না। আমি তো লিখতে পারি বইগুলো রচনার সেসব ইতিবৃত্তও। শুরু করলাম লেখা। এরই মধ্যে কবি তানিম কবিরের আগ্রহে দ্বিতীয় সত্তার সঙ্গে কথপোকথন ছাপা হতে শুরু করল দৈনিক ভোরের পাতার সাহিত্য সাময়িকী চারুপাতায়, প্রতি রোববার। পাঠকেরা প্রশংসা করলেন, এই ধরনের লেখা আরও লিখতে উৎসাহ জোগালেন।

সেই লেখাগুলো নিয়েই ‘উপন্যাসের পথে’। ঔপন্যাসিকের জীবনধারা এবং উপন্যাস সম্পর্কে বইটিতে অন্তর্ভুক্ত কথাগুলোতে আগামী দিনে আমি পুরোপুরি স্থির নাও থাকতে পারি, পরিবর্তন হতে পারে আমার চিন্তা। কেননা চিরন্তন সত্য বলে কিছু নেই পৃথিবীতে। আজ যা সত্য কাল তা মিথ্যায় পর্যবসিত হতে পারে। তবু তোলা থাকুক কথাগুলো। ৩৬-৪০ বছর বয়সে আমার চিন্তা-ভাবনা কী ছিল, কোন পথ কোন ঘাট পাড়ি দিয়ে আমি শিল্পতীর্থের দিকে একটু একটু করে অগ্রসর হচ্ছি, জানা থাকুক সবার। উপন্যাসশিল্পের কোনো পথিকের কাজে লাগলে তা হবে বাড়তি পাওয়া।

বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে, আলোঘর প্রকাশনী থেকে। ২০২০ সালের এপ্রিল-আগস্ট জুড়ে বইটি আবার সম্পাদনা করি। যোগ করি অনেক কিছু। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. থেকে প্রকাশিত হলো বইটির বর্ধিত সংস্করণ। পাঞ্জেরীর নির্বাহী পরিচালক কামরুল হাসান শায়ককে আন্তরিক ধন্যবাদ। আলোঘর থেকে প্রকাশিত বইটি বাতিল ঘোষিত হলো। বইটি রচনাকালে বিস্তর বই থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়েছি। সেসব বইয়ের ঋণ এবং লেখকদের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।

ভূমিকা, ‘উপন্যাসের পথে’র বর্ধিত সংস্করণ
স্বকৃত নোমান, ১৭ আগষ্ট, ২০২০

[বইটি প্রকাশিত হবে আগামী বইমেলায়]

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর আদর্শে সবাইকে উজ্জীবিত হতে হবে- লালপুরে বকুল এমপি
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতীক্ষার কূলে – সৈয়দ আনোয়ার সাদাৎ এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে