“একটি রোগের অজানা অধ্যায়” -মনিমূল হক

0
1317
Monimul-Hoque

 মনিমূল হক : আমেরিকায় ছয় মাস অবস্থান শেষে গত সপ্তাহে দেশে ফিরলাম । জানার, বলার বা দেখার অনেক কিছু আছে। যেটি বললে বা লিখলে অন্যরা উপকৃত হতে পারে সে বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আজ অতি সংক্ষেপে শেয়ার করবো এক অজানা রোগের অধ্যায় ও তা নিরাময়ের দিক নিয়ে। সব বয়সের মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তরা কষ্ট করে এটি পড়লে উপকৃত হতে পারেন। তাহলে শুরু করি। তবে কোন গল্প দিয়ে নয়, শুরু করবো আমার মত করে।

…….আমি আমার একটি বিষয় নিয়ে খুবই দোলাচলে ছিলাম। এটিকে আমি রোগ বলবো না আমার মস্তিস্কের মতিভ্রম বলবো সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। আমার এ সমস্যাটি শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। এক সময় আমি দৃঢ়মুল হলাম এটি আমার একটি মস্তিস্কের রোগ।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত কিছু চিকিৎসকের পরামর্শ নিলাম। প্রায় সব চিকিৎসকই দিলো রিভোট্রিল জাতীয় ঔষধ। কোনই কাজ হলো না। তারা স্পষ্টকরে কিছু বললেনও না। সুদুর আমেরিকায় ছেলের কাছে বেড়াতে এসে এর নিরাময়ের পথ খুজে পেলাম।

এবার আমার অসুখটা শেয়ার করি

ধরুন, আমি একটা নতুন জায়গায় গিয়েছি। জায়গাটি আমার কাছে সম্পুর্ন নতুন। কিন্তু হঠাৎ বিস্ময়করভাবে মনে হলো আমি এই জায়গাটা চিনি। জায়গাটি আমার পুর্ব পরিচিত। কিন্তু কখন কিভাবে এসেছি মনে করতে পারছি না, তথ্যগুলো ঝাপসা লাগছে।

আবার কোন কোন পরিস্থিতিতে হয়তো কোন অচেনা মানুষকে খুবই পরিচিত মনে হচ্ছে। মনে হয়- মানুষটিকে আমি এর আগেও বেশ কয়েকবার দেখেছি। সন্দেহ মেটাতে তার সাথে পরিচিত হয়ে দেখলাম, আমার ধারণাটি সম্পুর্ন ভুল। আবার হঠাৎ করে কখনও ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। যেমন ৫ জন বন্ধু একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। আমাদের একটি সিদ্ধান্তে পৌছাতে হবে।

আলোচনা চলছে। এক বন্ধু সে বিষয়ে একটি নতুন পরামর্শ দিলো। আমার হঠাৎই মনে হলো- এ ধরণের আলোচনা আগেও অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং একই কথা তারা পুনরাবৃত্তি করছে। মাঝে মাঝে আমার ভয় হতো। মনে হতো আমার কি পুনঃজন্ম হয়েছে ? তা না হলে নতুন জায়গা কেন চেনা মনে হবে ? নতুন আলোচনাকে কেন মনে হবে যে এটি আগেও শুনেছি ?

আবার কখনও কখনও মনে হয় আমি কি কোন আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যাচ্ছি ? যাই হোক, আমি আমার মনের এ অবস্থা নিয়েই ছেলের কাছে ভিজিট ভিসায় আমেরিকায় আসলাম । মনে করলাম নতুন জায়গা, সব ঠিক হয়ে যাবে। কারণ বাংলাদেশের এক জায়গার প্রকৃতির সাথে অন্য জেলার প্রকৃতির অনেক মিল থাকে। সুতরাং আমার মস্তিস্ক বিভ্রম তৈরী করতে পারে।

কিন্তু না। এখানেও একই অবস্থা। আমেরিকার কোন কোন স্থান দেখে মনে হতো এ জায়গায় আমি আগেও এসেছি। এবার মনে ভয় হলো। আমি তো আমার জীবনে প্রথম আমেরিকা আসলাম। তাহলে এখানে এসে এ ভ্রমের পুনরাবৃত্তি হবার কারণ কি ? বুঝলাম, এখন চিকিৎসার প্রয়োজন। এখন বলি, এ রোগ নিয়ে আমেরিকায় এসে যা জানলাম এবং যেভাবে নিরাময় হলাম।

বলবো এ রোগের প্রকৃতি নিয়ে

বিশ্বের তুলনায় আমেরিকায় চিকিৎসা বিজ্ঞান বহুদুর এগিয়েছে। তারপরও গবেষনায় শতভাগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমেরিকার চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা কোন বিশেষ Abnormality কে রোগ বলতে চান না। আমার এ বিষয়টিও তার মধ্যেই অর্ন্তভু্ক্ত।

তারা বলছেন The odd feeling you get when you sense you’ve already experienced something that you know you are doing for the first time”। জানলাম পৃথিবীর বহু মানুষ নাকি এ ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষরাই এ সমস্যায় বেশী ভোগেন।

এখন এটি তাদের অবচেতন মনের কোন কল্পনা নাকি মস্তিস্কের ভুল সংকেত সেটি এখন পর্যন্ত প্রমানিত হয়নি। তারা এটিকে এখনও কোন রোগের অর্ন্তভুক্ত করেননি। এদের বক্তব্য হচ্ছে- মানুষ যে বিষয় নিয়ে চিন্তা করে তার সাথে ঘটনাটি বাস্তবে ঘটলে যা হতো সেটি যদি কল্পনায় যুক্ত হয়,

অথবা একাধিক চিন্তা মাথায় জট পাকে তখন অবচেতন মন থেকে মস্তিস্কে একটি ভুল সিগনাল যায়। আর এ কারণেই এ ধরণের বিভ্রম তৈরী হয়। তবে এটিকে পুষে রাখলে বা Preventive Measure না নিলে এটি অন্য কোন জটিল অসুস্থতায় Convert হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

আমি এখান থেকে যেটা জেনেছি সেটি খুব ইন্টারেস্টিং। আপনি বিশ্বে কোন মাধ্যমেই এই অসুখের ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্য পাবেন না। তথ্য পাওয়া গেলেও সেটি সে কর্তৃপক্ষ বা চিকিৎসকের অনুমাননির্ভর। পৃথিবীর প্রখ্যাত গবেষকরা এখন পর্যন্ত সে কথাই বলছেন।

আর আমেরিকার চিকিৎসকরা বলছেন, এ সমস্যার বিষয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে,তবু কেন এটা ঘটে সেটার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তাদের গবেষনায় এই অনুভূতি নিয়ে আজ পর্যন্ত ৪০টিরও অধিক সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন আমেরিকার স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা।

মেডিকেল সায়েন্সের জন্য এটি একটি রেকর্ড। অথচ একটিরও প্রমাণ সম্ভব হয়নি। তবে সুখের কথা হলো,- যারা এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তাদের জন্য রয়েছে চমৎকার নিরাময়ের ব্যবস্থা। এ নিরাময়ে ঔষধের কোন প্রয়োজন হয় না।

নিরাময়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাঁরা বলছেন- ”আপনাকে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি কোলাহল মুক্ত কক্ষ বা এলাকায় সম্পুর্ন একাকী চুপ করে থাকতে হবে। এ সময় আপনার মস্তিস্কে যেন কোন সাংসারিক চিন্তা না আসে সেজন্য এখানকার বিশেষজ্ঞরা আত্মসমালোচনা করার উপদেশ দিয়েছেন।

অথবা আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া বড় সমস্যা এবং সে সমস্যা থেকে কিভাবে উত্তোরন পেলেন সে নিয়ে চিন্তা করতে উপদেশ দিচ্ছেন। তবে আপনার সব চিন্তাই হতে হবে ইতিবাচক। সবশেষে মনে করতে হবে, আপনার পৃথিবীর একজন জয়ী মানুষ।

ভবিষ্যতে যে কোন ধরণের সমস্যা আপনি শক্ত হাতে মোকাবেলা করার সাহস রাখেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনার কাছে যদি এগুলো কঠিন মনে হয় তাহলে শুধুই চুপ করে থাকলেও হবে। প্রতিদিন একই সময়ে ১ ঘন্টা। চলবে নুন্যপক্ষে দুই সপ্তাহ।

তাঁরা বলছেন,- এটি মানুষের জীবনে অস্থিরতা পরিহার করার মহাকৌশল। অবশ্য এ কৌশল ইসলাম ধর্মে বিদ্যমান। এ প্রক্রিয়ায় আমি নিজে সম্পুর্ন নিরাময় হয়েছি। আমার মত সমস্যা থাকলে আপনিও এ প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করতে পারেন এবং এ কারণেই বিষয়টি শেয়ার করার প্রয়োজন অনুভব করলাম।

এখানকার বিশেষজ্ঞরা সুনিশ্চিতভাবে ধারণা করছেন যে, এটা আমাদের মস্তিকেরই কোনো এক রহস্যময় অধ্যায়। এর মর্মার্থ বুঝতে হয়তো মনুষ্যপ্রজাতির আরো কিছু সময় দরকার।

এখন যা মনে করি-

এখন আমার মাঝে মাঝেই মনে হয় যে, বিশ্বে তো বৈচিত্রতার শেষ নেই। কতরকম অকল্পনীয় ঘটনাই তো ঘটে যাচ্ছে আমাদের এ দেহটায়, যার কিছু রহস্য উদ্ঘাটন করা যায়,- আর কিছু থাকে ব্যাখ্যার অতীত। এমনই এক অব্যক্ত অনুভূতির কার্যশক্তি হয়তো একদিন ধরা দেবে মানুষের কাছে অথবা অধরাই রয়ে যাবে। থাক-না কিছু রহস্য। ক্ষতিতো হচ্ছে না……

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“অনুভব” -লেখক নাজনীন নাহার‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধ“ফিরে এলাম” কবি রুমকি আনোয়ার‘এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে