কবি অসিত কর্মকার‘এর একগুচ্ছ কবিতা

0
491
Asit Karmakar

রক্তচোষা

দিনের পর দিন
উলটো দিক থেকে অসংখ্য সুবিধাভোগী রক্তচক্ষু এনে
গোপালভোগ আমগাছের সাথে কলম কেটে
বেজন্মাদের মিলন ঘটালে তোমরা-

তার ফলে রক্তচক্ষু বেজন্মা আমেরা
গোপালভোগ আমের সুমিষ্ট রস দান করার বদলে
আমজনতার রক্তরসই শুষে নিচ্ছে!

১৩-০৬-২০১৮ ইং

অপেক্ষা করো

আমার একটা অশ্লীল বাক্য শুনুন,
যারা আত্মীয় হয়ে আত্মীয় ঠাপায়,সেই সব
আত্মীয়র গুষ্ঠি ঠাপাই।
হে আত্মীয় ঠাপানো আত্মীয়
কাকে নেড়েছো তা তুমি নিজেও জানোনা
আর তোমার দোসরও জানেনা।
বয়ামের ভেতর থেকে
ঘি তুলতে আঙুলটাকে কী করতে হয়
তা আমার বেশ জানা।

২৩-০৬-২০২০ ইং

দেখতে পাচ্ছি

এক টুকরো কুটিল মেঘ
হারানো যন্ত্রণার দায় কাঁধে নিয়ে ইদানীং
অহর্নিশ কুমন্ত্রণার ঝুড়ি কাঁখে ছটফটিয়ে বেড়াচ্ছে
স্পষ্টই বুঝতে পারি।
এটাও বুঝতে পারি যে-
ঝুড়ি থেকে কুমন্ত্রণা ঢেলে দিচ্ছে স্বজন মেঘের কানে,
স্বজন মেঘটাও ঝাঁঝালো কালিতে বুনে দিচ্ছে
মুখগ্রন্থের মাঠ জুড়ে শান্তি ভঙ্গের বীজ!
তার ফলে যে অঞ্চলে শান্তি ছিল,
সেই অঞ্চলে কুটিল মেঘের হারানো যন্ত্রণার বীজে
উৎপন্ন হবে নতুন এক জ্বালাময়ী ফসল আর
তাতেই জ্বলতে থাকবে নিরীহ সম্প্রদায়।
তোমরাও দেখে নিও
হারানো যন্ত্রণার ঝুড়ি কাঁখে ছটফটানো
স্বার্থপর মেঘ।

২৩-০৬-২০২০ ইং

একটা প্রাণ

একটা প্রাণ-
একটা ছোট্ট প্রাণ
একটা বাবার প্রাণের মতো,
প্রাণের মৃত্যু হয়না
বাবারও মৃত্যু হয়নি
দেহ ম’রে যেতে যেতেও
রেখে গেছে মায়ের জঠরে
তার-ই একটা প্রাণ।
একটা সূর্য-
একটা দীপ্তিমান সূর্য
নিস্তেজ হতে হতে
ঢুকেপড়ে যামিনীর জঠরে
সতেজে ফেরার অঙ্গিকারে
ঠিক তেমন-ই
একটা প্রাণ।

০৯-১১-২০১৮ ইং

ভাবমূর্তি

যদি দ্যাখো সমাজের সারমেয় গোছের তৃতীয় চক্ষুরা
অকারণে নিরীহ লোকদের বিরুদ্ধে ঘেউ ঘেউ করছে
তবে জেনো সমাজের-ই কেউ না কেউ উসকে দিচ্ছে
খাসির বা গরুর এক টুকরো হাড্ডির লোভ দেখিয়ে।
এমনতর সারমেয় গোছের তৃতীয় চোখেদের বিরুদ্ধে
রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের প্রভুরা সহজে ব্যবস্থা নিতে পারে
যদি তারা ঐ হাড্ডির অংশীদার না হয় ,তো কমরেড
ধৈর্য ও শান্তির সাথে এদের মোকাবেলা করুন আর সমাজের ভিতরে তৃতীয় চোখের উসকানি দাতাদের চিহ্নিত করে সামাজিকভাবে চিরতরে বয়কট করুন
এবং নিজ নিজ এলাকার ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখুন।

২১-০৬-২০২০ ইং
সাইলোসিয়া ২০০

বন্ধুকে থরেবিথরে লেখা চিঠি

আমি যা হিজিবিজি লিখি তা আমারই লেখা
সেগুলো কবিতা-টবিতা হয়ে ওঠে কিনা জানিনা,তবে
কিছু শুদ্ধ মনের মানুষ তা পড়ে মন্তব্যও করে-
তখন আমার মনের ভিতরে বাসকরা
যে নিদ্রিত আমি তা ধীরে ধীরে আমিত্বে জাগ্রত হয়
ইদানিং তা স্পষ্টই বুঝতে পারি আমি-
আমার এই আমিত্ব উপলব্ধির ব্যাপারটা
ধীরে ধীরে আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে প্রথিতযশা কবি
আবু হাসান শাহরিয়ারের কবিতা পড়ে পড়ে-
এরপর আমি আমি করতে করতে একদিন
হারিয়ে যাই ঘাটপাড়ে পাগলির ছেলে রতনের ভিতরে
ওর মধ্যেও দেখি একটা বিশেষ আমি নিদ্রিত-
যে আমিটা হয়তো একটু ঘষামাজা করলেই
হয়ে উঠতে পারতো একেকটা শিবনাথ বসাক অথবা
আমিত্বের বড়াই করা একেকটা মগা-টগা-
যাই হোক,আমার এই বলিষ্ঠ আমিত্ব থেকেই
জাগ্রত হয় প্রাঞ্জল শব্দ,যে শব্দে শব্দে বেঁধে ফেলি
একেকটা অর্থহীন হিজিবিজি কবিতা-
যে কবিতাগুলি লিখতে লিখতে জন্মে যায়
আমার দেশের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা,যেখান থেকে
উপলব্ধি করি আমারও একটা বন্ধু আছে-
সে বন্ধু শুধু বন্ধুই না,সে আমার প্রভুও
তার কথা আমার মুখ থেকে বলার জন্যই বলছি না
সে কথা জানে আমার বন্ধু-স্বজনেরা –
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা,শুধু বন্ধুত্বের স্থলে যেন
আমার ভিতরে জন্মা আমিত্বকে বলিদান করতে পারি;
বাচ্চা আমার বন্ধু,যেন বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে পারি।

১৯-০৬-২০২০ ইং

শাস্ত্রের গেঁড়াকল

বেড়ে যাক বামাকণ্ঠের সংখ্যা তাতে কী,
সংখ্যার কল্যাণে যদি হয় বিস্ময়ে বিহ্বল ক্ষতি নেই,
শুধু জেনো পুরুষের হাতে শাস্ত্রের গেঁড়াকল।
তবুও মাথাপিছু সপ্তরমণীর দায় নিতে;
দেখবে ময়েজ-কানার মতো চিত্তবৈকল্যা পুরুষঢল
এর কারণ শাস্ত্রেই আছে বহুবিবাহের চল।
অবগুণ্ঠিত তোমরা দাসত্ব ভালোবাসো,
মনেপ্রাণে বিশ্বাস করো যে স্বর্গই পতিদেবের পদতল,
তাহলে সংখ্যা বাড়লে হও ক্যানো বিহ্বল?
হে কাগুজে বাঘিনী উত্তর দাও…

১৬-০৬-২০২০ ইং

বিশেষ বন্দনা

ঘরে বসে বসে মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছে,
গতর খাটানো ভুলেই গেছে স্থূলদেহীরা, গা-ছেড়ে মনিটারে সাঁতরাতে সাঁতরাতে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে গেছে
বুঝতেই পারেনি আধুনিক সাঁতারুরা।
আজ এই স্থূলদেহীরাই যদি একদিন
কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষধ সেবন বন্ধ রাখে,নিশ্চিত জেনো
শৌচাগারও মুখ ফিরিয়ে নেবে এদের থেকে।
তোমরা লিখে রাখো খাতার ভিতরে
কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষধটাই হবে আধুনিক সাঁতারুদের
প্রত্যহ সকালের বিশেষ বন্দনা।
ঔষধ দে মা
ঔষধ দে মা
ঔষধ দে মা

১৩-০৬-২০২০ ইং

নিরপেক্ষ হও

অসংখ্য নেতা উপনেতা
অতিদ্রুত উজ্জল নক্ষত্রের মতো হতে চায়
লাইমলাইটের সহযোগিতায়,
এতে দোষের কী ?
অথচ এ দোষের বিপরীতে,
যুবকের উদ্যত ছুরিকায় খুন হয় অন্য যুবক
জর্জ ফ্লয়েডের মাথা থাকে পুলিশের হাঁটুতলে
যে- দৃশ্যে বিশ্ব হবে তোলপাড়
যে দৃশ্য মুহূর্তেই হিলাবে সরকার,তেমনই দৃশ্য রেখে
কৃষ্ণদোষ কেটেছেঁটে লাইমলাইটও
বিশ্বমানের বেণে হতে চায়,
এতে দোষ নেই ?

০৫-০৬-২০২০ ইং

সঁপে দিয়েছি

যারা লাইম লাইটের অপেক্ষায়
মৌলিক অধিকারের ফিরিস্তি হাতে গলা শাণাচ্ছে,
যদি আবারও ক্ষমতায় যায় কোনোদিন,তারাও
হিমঘরে গলা জিরাবে কিছুদিন ।
এরপর অবলীলায় ছিঁড়ে খাবে
মৌলিক অধিকারের ফিরিস্তি,আর ক্যান্ডেল লাইটে ওল্ডমঙ্ক রাম গালধঃকরণের পর উগরে দিবে
রুলিংদের মতই সপ্তম অনুচ্ছেদ।
শাঁখের করাতের কাছে সঁপেছি;
নিজেকে বিশ্বায়নের যুগেও ভেবে নিয়েছি পেণ্ডুলাম,
কারণ রাষ্ট্রের মালিকরাই যেখানে
ক্ষমতার তোড়ে দোদুল্যমান।
বাঁশ ফুটো করলেই বাঁশি
অভিব্যক্তি যতই পরিবর্তন হোক
সুর তো বেরয় একই।

০১-০৬-২০২০ ইং

Advertisement
উৎসAsit Karmakar
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে আবারো একই দিনে ৩১ জন করোনা আক্রান্ত,মোট আক্রান্ত ২৪৭, সুস্থ ৬৬ জন, রেড জোনের দ্বারপ্রান্তে
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে ডা: রাজেশ, ডা: মাহবুবের স্ত্রী,কাজের মেয়ে ও দুই পুলিশসহ ২৯ জন করোনা আক্রান্ত আজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে