কবি আজাদুর রহমান‘এর একগুচ্ছ কবিতা

0
411
আজাদুর রহমান

ভয়ে ভয়ে পা ফেলি

প্রত্যেক সুন্দরের সাথে চরিত্রহীন হবার
একটা ভয় থাকে,
ভয়ে ভয়ে পা ফেলি।
অচেনা সৌগন্ধে গোলাপ থেকে
সরে গিয়ে হাসনাহেনার পাশে গিয়ে দাঁড়াই।
বকুলকে ভালবেসে
জুঁই বেলীর পায়ে জল দান করি।
ক্রমে ফুল থেকে আরেক ফুলে
সোপর্দ হতে হতে একদা আমরা
পুরোপুরি মিথ্যাবাদী হয়ে যাই।
কিছুদিন গাছে গাছে থাকি,
পাখি হয়ে উড়ে যাই,
ভ্রমরের গান গাই,
কিছু দিন পাহাড় থেকে পাহাড়ে
জুমচাষে আদিবাসী মন……
ফিরে আসি, দেখি, পথের পাশেই
ফুটে আছে সম্পর্কের আঙুল
-অন্যমনস্ক বাড়ি।
ভয়ে ভয়ে পা ফেলি
মৃত্যুকে বলে আসি,
আর কয়টা রাত আমাকে দিও।
আমরা সত্য ভুলে যাই।
কেউ ভুল করে সত্য বললে,
আমরা তাকে অপদস্থ করি,
গায়ে হাত তুলি।

এক জীবন

প্রেম
ভালবাসা
পরমায়ু
যশ
সন্তানাদি
অর্থ
বিত্ত
সুখ
শান্তি
সুস্বাস্থ্য
স্বর্গ
সম্মান
সন্তুষ্টি…
আরও যা যা এই মুহুর্তে তোমার মনে আসছে না!
সব, সব
চেয়ে বসে আছো
জীবনের কাছে..
এত চাইতে তোমার লজ্জা করে না!
এক জীবনের কাছে আর কত চাও!

আপনি

জ্ঞানী ভাবা মাত্রই
আপনি আলাদা হতে শুরু করবেন,
চেনাজানাদের থেকে
ক্রমেই সরে সরে যাবেন।
দূরে যেতে যেতে,
ছোট হতে হতে,
একা হতে হতে,
আরও দূরে গিয়ে, একদা,
আপনি কালো বিন্দু,
চোখগুলো এত ছোট,
আপনি তখন নিজেকে ছাড়া
আর কাউকে দেখতে পাবেন না।

আটচল্লিশ বছর

যখন মদগ্রস্থ কোষগুলো তন্দ্রাচ্ছন্ন,
ঘুমের আসর থেকে বেরুলেই
সোজা চলে যাবে সরাইখানায়,
যখন শরীর বেয়ে রমারম
হেঁটে বেড়ায় গোঁয়ার এক মাস্তান,
যখন আঙুলে কাম এবং ক্ষুধার হরণবিদ্যা,
বইয়ের ভাঁজে লুপ্ত হয়ে যায় চ্যাপ্টা মন।
যখন বাল্য স্বভাবে হাত চলে যাচ্ছে বুকে,
মাতৃকুলে দুগ্ধপানের নেশায়।
যখন মৈথুন মগ্ন এ হস্তদ্বয় ছুঁয়ে ফেলে
আনকোরা এক পৃথিবী,
যখন রাজনীতি এবং ধর্মের বাইরে ঝরে পড়ে বৃষ্টি,
মানুষের স্বাধীনতার মত।
যখন সুযোগের অভাবে ন্যাপথলিন চরিত্র,
লুকোনো থাকে জিহবার তলায়।
যখন অতিশয় ধার্মিক,
ইটের নিচে চাপা পড়া হলুদ ঘাস,
সামাজিক আবাল ভাল ছেলে সেজে
মিথ্যে ব’লে ব’লে, তাকাচ্ছে না সবুজে।
যখন ঝিনুকের মধ্যে আটকে আছে
ষোল আনা ইচ্ছে, বেশ্যার ভাত।
চোখে শরমকলা নিয়ে আটচল্লিশ বছর
তখন কী জবাব দেবেন৷ !!!
যখন পিছু নিয়েছে হারামজাদা ব্লাডপ্রেসার,
কুত্তার মত খামছে ধরেছে ঘাড় পিঠ,
বুকের নরম মাংস।
কি আর বলতে পারে আটচল্লিশ,
সব ছেলেমানুষি নিয়ে
তিনি বড় জোর বলতে পারেন,
কোন কিছুই
আসলে কোন কিছু না,
-জীবন এক ষড়যন্ত্র।

কার কাছে যাব!

মাওলা,
তুমি কি স্টেশন!
বাতি জ্বলে। নেভে।
গাড়ি আসে, গাড়ি যায়
কু ঝিঁক ঝিঁক, চাঁদ জ্বলে।
কব্জিজুড়ে অন্ধকার ঘ্রাণ,
পৃথিবীর প্যান্ডেলে গান হয়,
মাছি ওড়ে, ভাতের অভাবে
এখানে ওখানে পড়ে, মরে।
কার কাছে যাব,
যার কাছে ক্ষমা চাই,
সেও ক্ষমাপ্রার্থী।
আলো কমে গেলে,
অন্ধকার নিয়ে থাকি।
খেতে ভাল লাগে না,
হাঁটতে ভাল লাগে না,
কারও সাথে দেখা করতে
মন টানে না।
শরীর থেকে নেমে যায়
জীবনের বন্দনা।
পৃথিবীর জানালাগুলো
বন্ধ হতে থাকে।
সব খানে ছড়িয়ে পড়ে
ষড়যন্ত্রের মানুষ।
পথ আগলে রাখে,
তেতো চোখ বিছিয়ে রাখে।
কেউ কারও কথা শোনে না।
মাওলা।
তুমি কি স্টেশন!
বাতি জ্বলে। নেভে।
গাড়ি আসে, গাড়ি যায়
কু ঝিঁক ঝিঁক, চাঁদ জ্বলে।
কোথায় এলাম
কেন এলাম
কার সাথে এলাম
কিভাবে এলাম
আর আসব না!

কিছু দুঃখ

কিছু দুঃখ দীর্ঘজীবী গাছেদের মত
পিতৃতুল্য। আর কিছু যেন
সিদ্ধিবাক্যের গভীর খাদ,
অধিক গুহ্যপন্থী।
তারা আগুনের আশায়
চুপচাপ বসে থাকে,
হাসে না, কাঁদে না।
কাউকে কিছু বলে না।
কবে আগুন এসে বলবে,
দুঃখ কিসের, বলো।
পোড়াবার আর বাকি নাই,
এবার নিজেরা পুড়ি, চলো।
-আগুনের আশায়
তারা বসে থাকে, চুপচাপ
হাসে না, কাঁদে না।
কাউকে কিছু বলে না।

পৃথিবীর প্যান্ডেল

যে কোন দরজা দিয়েই
ঢুকে যাওয়া যাচ্ছে!
মাছেদের মন নিয়ে,
টানেলের মত হেলেদুলে,
পিছলে, আলতো গড়িয়ে,
ঢেউয়ে ঢেউয়ে…
এখানে গোলাপবাগ, বিস্তির্ন ফুলেরা,
সখিদলে বিদ্যাপাঠরত,
অনুরোধের আসর, গানের মকবুল,
ভেসে আসে দূরহ সংগীত।
আরও দৃশ্য খুলে গেলে,
বালি আর বালি, ধুধু মরু,
সেখানে তাঁবুর দরজা নেই,
আফিম সুঘ্রাণে নিভু নিভু সুদুর!
কথার মধুতে খুলে যাচ্ছে
বেদুইন খোঁপা।
ভারতবর্ষের এক রমনী স্নান করে সিন্ধুজলে
সে খবর উড়ে যায়
আরব সাগর পাড়ি দিয়ে।
কামশব্দে জেগে থাকে সারারাত
-উত্তেজনায় ভরা কিশোর।
অথবা, ধরা যাক, কম্পমান অসহ্য সিনেমা
পাখা থেকে খসে যাচ্ছে প্রজাপতি।
শস্য, তামাক, মদ, সুবাতাস ফুল
কাংখিত নর বা নারী… সব কিছু
অস্থির, গলে গলে যাচ্ছে দৃশ্য থেকে।
পালাবার পথ নাই,
পৃথিবীর অনেক দরজা, কিন্তু
বের হবার একটাই দরজা
মৃত্যু।

Advertisement
উৎসআজাদুর রহমান
পূর্ববর্তী নিবন্ধখাবে সবাই না-হয় খাবে না কেউ -কবি অভি ওসমান‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরের নলডাঙ্গা থেকে হারিয়ে গেছে আরিফা, এক সপ্তাহ হলেও সন্ধান পায়নি পুলিশ!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে