কবি রহমান হেনরী’র একগুচ্ছ কবিতা

0
551
রহমান হেনরী

বড়দিনের রাত ।। রহমান হেনরী

.
অনিদ্র অসাড় দেহ, শুয়ে আছে— ক্লান্ত খাটে খাটে

হয়তো নিহত নদী, আজ কারও
জানালার প্রান্ত ছুঁয়ে হাঁটে—
দৃশ্য তো প্রাচীন; কিন্তু নবরূপে দেখছি আবারও

জানালায় মা’র চোখ রাত্রির আলো হয়ে জ্বলে

মাঠের ভিতরে মাঠ, তারও ভিতরে মাঠ। সেই কেন্দ্রমাঠে
আমরা সকলে,
বাহির হবার পথ খুঁজে দেখছি— চোখ নাই। আরও
অনেক অবশ এসে— ঘিরে ধরছে প্রত্যেকের হাত

—সকল জানালা ঘেঁষে মা’র চোখ, সবার জানালাজুড়ে রাত

ঋতু এলো,
হাতির চোখের মত মায়াবী, নির্জন;
উদ্ভিজ আমিষ-মাখা সবুজ সুপুষ্ট হাওয়া, সচ্ছন্দ
স্রোতের বেগে বয়ে যাচ্ছে: সুরেলা, বঙ্কিম—

খরস্রোতা, আহ, তোমার কেশনদী
আবারও গোপনে উড়তে চায়; রাত্রি আজ
ভূপৃষ্ঠের নব-মহাদেশ;

অনেক শতাব্দী গেল— পয়া ও অপয়া বলে
যে সকল জনশ্রুতি আফ্রিকা মহাদেশ থেকে
পৃথিবীর সবখানে পৌঁছে গিয়েছিলো— হঠাৎ বৃষ্টির মতো
তারা সব একযোগে এবার লাফিয়ে পড়বে
পুনর্জন্মসম্ভাবনাহীন এক কবরের শান্ত অন্ধকারে

ঋতু এলো,
মর্মান্তিক গণিতে; ও বিজ্ঞান হাতে, অতি অপরিশ্রুত—
জোড় বা বিজোড় বলে কিছু নাই। এক ও শূন্য ছাড়া
সংখ্যারও অন্যকোনও ধারণাই নাই। তোমার উড়ন্ত নদী
আর কোনও আড়ালের প্রশ্রয় পাবে না।

আলোকরেখার কাছে ফেঁসে গেছে— অবগুণ্ঠন
স্থিতির প্রশান্তি থেকে মুহূর্তে লাফিয়ে উঠবে
গতির বিক্রম; বাঘ ও সিংহীর মধ্যে বৈবাহিকলগ্ন নিয়ে

উপস্থিত হলো আজ— সাহসী পঞ্জিকা

আমরা আমাদের কবর খুঁজে পাচ্ছি না

মনোবিকারগ্রস্ত সেই নারী। প্রকাশ্য পথে, আমাকে
তার বন্ধু দাবী করছে। কেননা, তার ধারণা: আমিও
ভুলে গেছি উৎসবিন্দু আর গন্তব্যের ইতিহাস— কেননা,
তার বিশ্বাস: আমাদের দুজনেরই উচিত
দুটো পিরামিডের মালিকানা অর্জন করা;

সে এখন আমাকে নিয়ে ঢুকে পড়তে চায়
অচেনা শহরের অলিগলিতে। অধিবাসীদের কাছে
ধার নিতে চায়: স্নানঘর। কেননা, পালাক্রমে
স্নানের ভেতর দিয়েই আমরা ফিরে পেতে পারি
নিজ নিজ স্মৃতি এবং আমাদের বাড়ির ঠিকানা পুনরুদ্ধারে
অন্য কোনও পথও খোলা নেই। অতএব
স্নানের সিদ্ধান্ত। কিন্তু স্নানকালে সবকিছু মনে পড়লেও,
স্নান শেষে, কিছুই আর স্মরণে আসছে না!

তার ধারণা: মৃত্যুর পর, কবর ছেড়েও
উঠে আসবো আমরা। ঘুরতে থাকবো
শহরতলির নির্জন সড়কে; আর
চিৎকার করে বলবো:

—আমরা আমাদের কবর খুঁজে পাচ্ছি না—

গোলাপ গো, আমি ঘাসফুল
——-
ধরো, হাঁটতে গিয়ে, পথিপার্শ্বের একটি ঘাসফুল দেখে, তুমি বলে ফেললে: ‘সুন্দর।’ … গোলাপ প্রতিবাদ করলো। বললো, ‘‘কী এমন সুন্দর?’’ তখনও, সুন্দরের তূল্যমূল্য: তুমি জানো না।… কিন্তু তোমাকে দাঁড়াতে হবে, ওই ঘাসফুলের পাশে; লড়াই করতে হবে— যতক্ষণ না তোমার হৃদয়াবেগের পাশে পৌঁছে, প্রতিবাদী গোলাপ স্বীকার করছে যে, ‘হ্যাঁ, সত্যিই, ঘাসফুলটি সুন্দর’।

হতে পারে: ঘাসফুলটি [প্রচলিত অর্থে] গোলাপের মতো সুন্দর নয়; তাতে কী? তোমার মনে হয়েছিলো: সুন্দর; অতএব, গোলাপের সাথে লড়তেই হতো তোমাকে।

এমন কিছুরই নাম যুদ্ধ…

এখানে, কোনও এক পক্ষের পরাজয় ব্যতিত অন্যপক্ষের জয় অসম্ভব।

‘অচিরেই ভোর ফুটবে

অভুক্ত থাকতে থাকতে
মধ্যরাতে
নিজের ক্ষুধাকেই চেটেপুটে খেলাম; আর
ক্ষমা করে দিলাম সেই নারীকে— একদা, যে আমাকে
রান্নাবান্না ও সুস্বাদু সব খাবারের গল্প শুনিয়েছিলো

সেই নারী
রঙের ভিতর দিয়ে তাকাতো; এবং
সময়ভেদি তার চাহনি মুহূর্তেই
পৌঁছে যেতো— বহু দূরের এক বিপুলায়তন ভূখণ্ডে

রাত্রি যখন বহুভাঁজ কাগজের মতো
খুলে ফেলতো— অন্ধকারের অগণিত পরল,
একটা ক্যালেন্ডারের নিচে লুকিয়ে থাকা
‘ন’-অক্ষর-চিহ্নিত বাঁধাই ছবির সেই নারী
শব্দহীন কক্ষের সমগ্রতায়
আলোকসঞ্চারী মোমবাতি হয়ে উঠতো—

এবং সেদিকে তাকিয়ে অস্থিরতার স্রোতস্বিনীতে
স্থাপন করতাম ধৈর্যের বাঁধ; যেন রন্ধনশৈলীর গল্পগুলো
আরও একবার শুনতে পাওয়া যায়; গতরাত ছিলো এরকম।

হঠাৎ মহাশূন্য ফুঁড়ে, উড়ে উঠলো— হলুদ একটা শাড়ি—
এবং বিউগল বাজিয়ে,
পাখিরা ঘোষণা করলো: ‘অচিরেই ভোর ফুটবে, বদ্বীপে’…
——————–

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“আমার গল্প”-জান্নাত লাবন্য
পরবর্তী নিবন্ধ“কতকিছুই তো ঘটে!”-জাকির তালুকদার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে