“আমার গল্প”-জান্নাত লাবন্য

0
719
জানানত এনকে

আমার গল্প

জান্নাত লাবন্য

ঝিনাইদহ জেলা শহরে বড় হয়েছি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, এলাকার সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সাথে জড়িত ছিলাম। পড়াশোনায় ছিলাম মাঝামাঝি শ্রেণির। এইচএসসি পাশ করে স্বপ্ন দেখতে লাগলাম ঢাকা শহরে পড়তে হবে আমাকে। আর্টসের ছাত্রী। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোন সুযোগ আমার সামনে ছিল না। কেননা বাড়ি থেকে বলে দিয়েছিল, পড়লে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে, না হলে পাত্র রেডি আছে। বিরাট হুমকি। আগেই বলছি আমি ততোটা পড়ুয়া ছিলাম না। ঢাবির জন্য পড়লাম। আর জাবিতে তখন সব বিষয়ের ভিন্ন ভিন্ন লিখিত পরীক্ষা হয়। বিগত প্রশ্ন দেখে ঘাবড়ে গেলাম। কিন্তু ঢাবির উপর ভরসা পাচ্ছি না।

কয়েক বছরের প্রশ্ন ঘেঁটে ঠিক করলাম বাংলা, নাট্যতত্ত্ব আর প্রত্নতত্ত্বের প্রশ্ন কিছুটা আমার আওতায় আসে আর কি। আমার অভিভাবকরা কখনোই আমার উপরে কিছু চাপিয়ে দেয়নি এবং প্রচন্ড স্বাধীনতা দিয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল হলো । চান্স হলনা ঢাবিতে। কিন্তু ডাক এলো জাবিতে। নাট্যতত্ব ও বাংলা বিষয়ে চান্স হয়েছে। আমি নাচতে নাচতে নাট্যতত্বে ভর্তি হয়ে গেলাম। বাসার থেকে কোন চাপ নেই, যা ভালো লাগে পড়। কিন্তু ক্যাম্পাসের অনেক সিনিয়রই বললো, বাংলা পড়। তখন বাংলার সেশনজট নেই বললেই চলে।কিন্তু নাট্যতত্বে বেশ জট ছিল। মতটা পরিবর্তন হয়ে গেল অনেকের কথাই।

আবার বাংলাতে ভর্তি হলাম। স্নাতকোত্তর প্রায় শেষের দিকে হল ছাড়তে হবে। কিন্তু আমি ঝিনাইদহে ফিরতে চাই না। ঢাকাতে চাকরি পেলে তবেই না থাকতে পারবো। তাই নিয়মিত টিভি রুমে গিয়ে পত্রিকাতে চাকরি খুঁজতে লাগলাম। আমার মামা চাচা কেউ নাই। কিন্তু থাকা খাওয়ার খরচ উঠে এমন একটা চাকরি আমার তখন খুবই দরকার। ছোটখাটো কোন চাকরির বিজ্ঞাপন চোখ এড়ায় না। যেটা মনে হয় পারবো, সেটাতেই আবেদন করতে লাগলাম। অবশেষে যেদিন স্নাতকোত্তরের ভাইভা দিলাম, সেদিন যোগদান করলাম একটি এ্যাডফার্মে। স্নাতকোত্তরে আমার একটি বিষয় ছিল ক্রিয়েটিভ রাইটিং।

সেখানে আমি ছোটগল্প জমা দিয়েছিলাম। আর আমার ফলাফলও বেশ ভালো হয়েছিল। যাইহোক এ গল্পগুলি জমা দিয়ে আমি পেলাম স্ক্রিপ্ট রাইটিং এর কাজ। ৫০০০/ টাকা বেতন। বলছি ২০০৯ সালের কথা। চাকরিটা আমি ছয় মাস পরে ছেড়ে দিলাম। কেননা আমার আইডিয়া নিয়ে সিনিয়র যখন কোন স্বিকৃতী দেয় না, মেনে নেওয়াটা বেশ কঠিন মনে হলো। তখনও জীবনের জটিল বিষয় গুলো থেকে আবেগটাই বেশি ছিল। এরপর আবার চাকরি খোঁজার পালা। তিনমাস বেকার থেকে অবশেষে এমপিওভুক্ত সলিমুল্লাহ ডিগ্রী কলেজে অস্থায়ী প্রভাষকের চাকরি পেলাম। বেতন সেই ৫০০০। এ বেতনে আমার চলছে না।

বাসা থেকে টাকা চাইতেও লজ্জা লাগে। কিন্তু চাকরি বেশ আরামের। খুঁজতে লাগলাম আরেকটু বেশি বেতনের চাকরি। আট মাস পর চাকরি হল স্কলারস স্কুল এ্যান্ড কলেজ, ধানমন্ডি। বেতন ১০০০০। এর মাঝে আমার বিয়ে হয়েছে। দেড় বছর এই প্রতিষ্ঠানে ছিলাম।এরপর চাকরি হয়ে গেল সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে। আমার বাসা থেকে চাপ ছিল বিসিএস দেওয়ার। চাকরির পড়াশোনা ভালোই লাগে না। তবুও পরীক্ষা দিলাম ছয়টি সরকারি চাকরির। ভাগ্য জোরেই বলতে হয়, চাকরি হয়ে গেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এর মাঝে মেয়ে হলো। কিন্তু আমি মানসিক ভাবে অস্থির হয়ে গেলাম। কিছুতেই মন বসে না। নিজের কিছু একটা করতে মন চাই। কি যে চাই তাও জানিনা। হঠাৎ একদিন মনে হলো, আমিতো লিখতে পারি। সেটাই কেন চেষ্টা করিনা? ছোটগল্প লেখা শুরু করলাম। বন্ধু পরিজন অনেককে পড়তেও দিতাম।

কেউ খুব উৎসাহ দিল, কেউ বললো তেমন কিছুই হচ্ছে না। তবু লিখতে থাকলাম। এভাবে পার হয়ে গেল কয়েকটা বছর। শিশুতোষ গল্পও লিখি। একসময় মনে হলো, কোন প্রকাশককে গল্প গুলো দেখালে কেমন হয়? কিন্তু আমি কাউকে চিনি না। কই পাঠাবো? কীভাবে পাঠাবো? শুদ্ধর জন্য কেনা গল্পের বই থেকে কয়েকটা মেইলের ঠিকানা পেলাম। পাঠিয়ে দিলাম গল্প। কিন্তু কোন খবর নেই। অবশেষে দুজন কল দিয়ে বললো, খরচ দিলে বই বের হবে। আমার মনে হলো, থাক দরকার নেই। তবে মনটা খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ এক দুপুরে ফোন এলো শিশুপ্রকাশ থেকে, তারা বই প্রকাশ করতে ইচ্ছুক। আমার মতো অতি সাধারণের জন্য এ এক বিশাল ব্যাপার। অবশেষে ২০১৯ সালের বই মেলাতে প্রকাশিত হলো আমার প্রথম বই
” কাঠ পেন্সিলের আনন্দ “। এখন আমি লিখি, যা ভাবি তাই লিখি। যাদের ভালো লাগে তারা ছাপে। না উল্লেখযোগ্য কোন কাজ আমি করিনি। কিন্তু নিজের মনের শান্তির জন্য লিখি।
আমি সবসময় বিশ্বাস করি চেষ্টা করাটা কখনো বন্ধ করা উচিৎ না। চাচা মামা নেই, চল্লিশ জায়গায় আবেদন করেন, দশ জায়গা থেকে ডাকবে, এক জায়গায় নিশ্চয়ই চাকরি হবে। হয়তো সেটা পছন্দের নাও হতে পারে। কিন্তু চেষ্টাটা চলমান হওয়া উচিৎ। আর রেফারেন্স না থাকলেও লেগে থাকলে কিছু না কিছু হবেই। অনেক কথা বলেছি, কী বলতে চেয়েছি আশা করছি বুঝতে পেরেছেন। তবে জীবনে অপূর্ণতা থাকবেই। আমারো আছে। এমন কিছু করুন যা আপনার ভালোলাগে। কথাগুলো এ কারনে বললাম, আজকাল অনেক তরুণই হতাশার কথা বলেন।ভবিষ্যত নিয়ে খুব বিচলিত।
সকলের জন্য শুভকামনা।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“মিথিলা সংক্রান্ত জটিলতা-১,৩,৪-“-সালেহীন বিপ্লবের কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধকবি রহমান হেনরী’র একগুচ্ছ কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে