কবি শাহিনা খাতুন‘এর একগুচ্ছ কবিতা

0
512
Shaheena Ronju

যে অনল দেখেনা কেউ

যদি সহযাত্রী হতে চাও
তবে ঝড়ের কবলে পড়তে হবে
যদি অনুগামী হতে চাও
বিপদের হাতে হাত রাখতে হবে
যদি ভরা বাজারে বলে ফেলো কিছু
নিন্দুকেরা কিংবদন্তি বানাবে।
তার চেয়ে বরং অদৃশ্য নিয়ে তৃপ্ত থাকো
সাধু সেজে হাটে বাজারে ঘুরোনা।
ভালবাসা খুব পোড়ায়
প্রেম খুব আনন্দ দেয়
প্রেম ভালবাসা অমূল্য ধন
এসব পেতে গেলে
তোমায় পুড়ে যেতে হবে।
যে অনল দেখেনা কেউ সেতো
ঢুকে আছে তোমার মধ্যে
দেখতে পাওনা বলে ভেবোনা
তার কোন অবয়ব নেই।

অপূর্ব গল্প

মৃত্যু সে এক অপূর্ব গল্প
সে গল্পের নায়ক তো তুমিই
সেখানে সবাই হেরে যায়
তুমি জিতে যাও
এক কারাদণ্ডাদেশের শেষ দৃশ্য
সে এক মুক্তির দৃশ্য।
তোমরা দেখো মাটি গ্রহণ করে
সময়ের অবয়ব জানা নেই বলে
আসল আমি পর্দান্তরিত।
কাকে ভালবেসেছিলে?
কে তোমায় আদরিত?
মৃত্যুর দৃশ্যপটে তুমি থেক
আনন্দিত ছন্দিত নন্দিত সুরে সুরে।

কী তার নাম দেবো

তোমার প্রলম্বিত দীর্ঘ দেহের উপর সিড়ি
লাল রঙের ইট
কোথাও কোথাও ক্ষয়ে যাওয়ার চিহ্ন
যত্রতত্র কলার খোসা চিপসের খালি প্যাকেট
কয়েকটি গাছ মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে
যেন সব অহংকার শুধু ওদেরই জন্য।
আমি খালি পায়ে হেঁটেছি অনেক
পরম আদরে তোমার ধুলো মেখেছি গায়ে
যে জ্বরাগ্রস্থ বৃদ্ধ প্রতিদিন ঘুমায় তোমার কোলে
তারতো আর ভালবাসার কেউ নেই।
যে পাগল মাকে তার সন্তানেরা বাড়তি ভেবে
ফেলে চলে গেছে কবে জানেনা কেউ
তার তরে আর আসবেনা কোনদিন
তোমার প্রলম্বিত দীর্ঘ দেহের উপর তার ঘর
দরজা নেই জানালা নেই ছাদ নেই
তবুও সে ঘরে ভালবাসা আছে।
কী তার নাম দেবো বল?
দাক্ষিণ্য, অনুগ্রহ, অনুকম্পা, মায়া?
ঠিক বুঝতে পারিনা
ঘুম ভেঙে ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হয়ে গেছে
মৃত্যঞ্জয়ী কোনো এক বৃহস্পতিবার।

ভুলের সমাহার

এই ধরো কোনো এক বৃহস্পতিবারে
তুমি জেনে গেলে খুব বোকা তুমি
ধরে নাও এই যে জীবনের এতগুলো বছর
ভুলভাল যাপন করেছো তুমি।
ধরে নাও সমস্ত বিফলতার দায়
তোমার একার রূহের অবাধ্যতা, ইন্দ্রিয়ের গোলামী
তোমায় ভুলের অতলে গহ্বরে নিয়ে গেছে।
তখন তোমার আর কী করার আছে?
সংসারের এসব প্রেম ভালবাসা
এসব ছোট ছোট ইচ্ছের সমাহার
আহারে ভুলের সন্ধ্যা প্রদ্বীপ জেলেছি কতবার!
ভাড়াকরা ঘর তবুও বইয়ের সমাহার
বিদ্যা নেই অথচ বইয়ের ভার আছে খুব।
তবুওতো আজ বৃহস্পতিবার
তুমি জেনে গেলে কত বোকা তুমি!

ঘর নেই বৃক্ষ নেই

অবশেষে একদিন
বহুদিন পর
যদি জেনে যাও
মৃত্যু হলো শান্তির দেশ।
খাঁচা ছেড়ে প্রাণপাখি
একদিন চলে যাবে
পরমের দেশে
প্রিয়তমের দেশে।
হে পরম প্রিয়
প্রেমের পরখ করতে
কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে
পাঠিয়েছিলে তুমি শেষমেশ
এই ধরাধামে।
এই ধরাধাম কামিনী কাঞ্চন
ভরা নরকের নগর আর গ্রাম
এ গ্রামে আমার কোনো
ঠিকানা নেই।
এখানের শহরে আমার কোন
ঘর নেই বৃক্ষ নেই।

গেরুয়া

বাঁশ বাগানের ধার ঘেঁষে ব্যক্তিগত ঘাস
হেরিংবন্ডের রাস্তা কয়েক ঘর প্রতিবেশী
দিন রাত বা মান অপমানের ভয় ভুলে
কতদিন চলে গেছে সে তার খোঁজে
সে সময় সে সব প্রেম ছিল
এখন সবই ভুলের গল্পগাথা
সে সব দুঃখের ভারে নুয়ে থাকা মন
প্রেমের গাছ তলায় ঘুমিয়ে আছে।
সে কথা ভুলতে বসেছিল সে
তাও গ্রহের হিসেবে বহুদিন।
কী এক নতুন প্রেমাবেগের ঝর্ণা ধারা
আবারও সে সব সময় আর
পুরনো একলা পথের বাঁক
সামনে এনে দেয়।
ভালবাসার অপেক্ষায় তৃষ্ণার্ত ছিল মন
কোন সে প্রেম?
সেই সে প্রেম যার জন্য জাতিশ্বর হয়ে
আবারও আসবো একদিন
যে জন্য বসে আছি বৃক্ষ তলায়
বিশ্বাস কর কোন পাপ নেই
বিশ্বাস কর কোন ক্ষুধা নেই
বিশ্বাস কর কোন ক্ষোভ নেই
বিশ্বাস কর কোন ভুল নেই
শুধু প্রেম আছে বিশুদ্ধ প্রেম
লালনের সুরের সাথে সুর মেলানো যায়
কবে সাধুর চরণ ধুলি মোর লাগবে গায়।
চরণ ধুলি ভেঙে ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হয়ে
নতুন রঙ হয়ে গেছে
কী অপরূপ সে রঙ!
গভীর রাতে গভীর ঘুমের ঘোরে সে রঙ
সুর হয়ে সামনে এসে বসে
বারবার জিজ্ঞাসে প্রস্তুত রয়েছোতো?

Advertisement
উৎসShaheena Ronju
পূর্ববর্তী নিবন্ধনিষিদ্ধ আলাপ -বনশ্রী বড়ুয়া‘এর ছড়া
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরের লালপুরে গাছের সাথে শত্রুতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে