কবি শাহিনা খাতুন‘এর একগুচ্ছ কবিতা

0
529
Shaheena Ronju

বদলে দিয়েছি

কবি শাহিনা খাতুন

এখনো কিছু উৎকন্ঠা বাকি রয়ে গেছে
পূর্বপুরুষের দাগ মুছে ফেলা সহজ নয়
তারপর আবার
প্রেম আর কাম বুঝতে ঢের দেরি
কেউ কেউ গঙ্গা স্নানে গিয়েও
কামিনী কাঞ্চণের মোহে মশগুল।
আমি শুধু বিরহকে প্রেমে বদলে দিয়েছি।

এখানে এখন

কবি শাহিনা খাতুন

এখানে এখন প্রেমের বেচাকেনা হয়
গাছের পাতা পথের ধুলো মোমের আলো
সবকিছুই প্রাণোচ্ছল হয়ে থাকে
কী গভীর আনন্দ আছে চারপাশে
সে খবর পাওয়ার জন্য শুধু ভিখিরি হয়ে যাও।

ফুল মালী

কবি শাহিনা খাতুন

সে কোন জনমে তুমি ছিলে ফুল
ছিলাম আমি ফুল মালী
আলো মাটি জল খুঁজে ফিরতাম
হ্রদয় প্রদ্বীপ জ্বালি।

ঠিক নেই

কবি শাহিনা খাতুন

একটা গোল সার্কাসের মাঠে ঢুকে পড়েছি
এখানে সবই গোল
সময় মাপন যন্ত্রটাও গোল
সবাই ঠিক আছে শুধু তুমি আর আমি ঠিক নেই
অথবা তুমি আর আমি ঠিক আছি
আর কিছুই ঠিক নেই।

তোমার দরবারে

কবি শাহিনা খাতুন

অনেক কথা আছে
যা বলা হয়ে ওঠেনি এখনো
কিছু কথা আছে
যা কোনদিন বলা হবেনা
নিরবে সঞ্চারিত হতে হতে
পৌঁছে যায় কিছু শব্দ
প্রাণ থেকে প্রাণে।
যে উৎসস্থল ছেড়ে
সস্তা প্রেমে এ জীবন
সেখানে ফিরে যেতে যেতে
আবর্জনার স্তূপ জমা হয়ে গেছে।
তাই ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে
চলে যাই দ্বার থেকে দ্বারে
তোমার দরবারে।

তোমার আশায়

কবি শাহিনা খাতুন

পলকে পলকে জীবন
পলকে পলকে বিরহ
প্রতি নিশ্বাসে কি যেন হারাই
প্রতি পলে শুধু খুঁজিয়া বেড়াই
মিলনের আশায় দুঃখ ভুলেছি
তোমার আশায় জন্মাবো বারবার।
তোমাকে পাওয়ার অপেক্ষা করে
কাটাবো হাজার জীবন
সম্মুখে এলে সুধাবো তোমারে
এই যে এত জনম
রইলে আড়ালে কী সুখ পেলে?
নাকি দুঃখ পেয়েছো
হাত ধরে বল সোনা।
যত ভুল করি যত ভুলে যাই
যত ব্যথা দাও সরে যেতে চাও
তোমায় আর হারাবোনা।

বৃত্তে

কবি শাহিনা খাতুন

তুমি আমায় ত্যাগ করে
কী দেখতে চেয়েছো?
তোমায় ভুলেছি কিনা
এ তোমার কেমন খেলা প্রভূ?
আমিতো ভুলে গেছি
আমিতো হেরে গেছি।
পাঠালে মায়াময় ভুলের জগতে
ভুলের সংসারে বসে তোমার মালা গাঁথি।
নিজস্ব একটা পাহাড় আছে আমার
ভুলের পাহাড় যার স্রষ্টা আমি নিজেই
তোমাকে দেখার সময় আর নেই
একটা কোদাল হাতে নিয়ে
এ পাহাড় কাটতে বসেছি।
হয়তো একদিন পাহাড় কাটা শেষ হয়ে যাবে
আমি দেখবো
আমি দাঁড়িয়ে তোমার বৃত্তে
তুমি দাঁড়িয়ে আমার বৃত্তে।

তুই আমার

কবি শাহিনা খাতুন

কোন এক বৃহস্পতিবার
তিনি ভালবাসার দাবী করেন
সেই থেকে বৃহস্পতিবারে সুগন্ধি মেখে
পবিত্র হতে চেষ্টা করি।
অতঃপর বিড়বিড় করে বলি
আমি তোমায় ভালবাসি
তুমি আমার হও আমি তোমার হই।
ভুলিয়ে দেওয়ার আনুষাঙ্গিকতা
আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে আছে অনুক্ষণ
যদি দেখো অসংখ্য মানুষ তোমার কীর্তন করছে
তবুও আমি নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছি
চলে যায় যাক হাজার কোটি বছর
তুই আমার হয়েই থাকবি।
কোন একদিন গ্রীষ্মের ভর দুপুর
খাঁ খাঁ রোদ্দুর চারিদিকে
পিপাসার্ত হাপিত্যেশে ক্লান্ত সবাই
আমি রোজকার মতোই এলোচুলে
দুচোখ মুদে তোমার অপেক্ষায় আছি
তুমি এসে বলবে দেখতো কে আছে তোর সামনে?
আমি চোখ খুলে দেখবো তোমায়
তোমার অভিবাদনের ফুল খুঁজবো
এলোমেলো ছোটাছুটি দেখে তুমি বলবে
এই দেখ চারিদিকে কত ফুল!
আজ আমার ফুল চাইনা
আজ আমি তোকে বলতে এসেছি
তুই আমারই ছিলি, তুই আমার।

অপেক্ষা

কবি শাহিনা খাতুন

কোন গিরিশৃঙ্গে বসে আছো
সাগর অপেক্ষায় আছে ভুলে গেছো নাকি?
এখানে কি অপেক্ষা করে থাকতেই হয়?
কেউ কোনদিন আসেনি বলে কি কোন পথ নেই?

গ্রাসরুট ক্যাফে

কবি শাহিনা খাতুন

কনে দেখার পর্বটি কিছুটা অস্বস্তিকর ছিল
স্বলাজ হবার চেষ্টা ছিল প্রাণপণ
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর কোকের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে
আড়চোখে দেখে নিচ্ছিলেন দুজন দু’জনকে।
মেকাপে যা দেখাচ্ছে তাতে সুন্দরী মনে হচ্ছে
কি জানি হয়তো যা দেখেছে তা ভুল
চাইনিজ রেষ্টুরেন্টের আবছা আলোয়
দেখাটা ঠিক যুৎসই হচ্ছেনা
এসব ভাবতে ভাবতে দুচারটা প্রশ্ন হয়ে যায়।
কী করছেন এখন?
রাস্তায় কি ট্রাফিক ছিল খুব?
কী পছন্দ করেন? গরম না ঠান্ডা?
আজকের আবহাওয়াটা ভালোই, কি বলেন?
একা এসেছেন? আপনার ফেইসবুক আইডিতে কী নাম দেওয়া আছে?
এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে মেয়েটি আর একটু দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে গেছে।
আর একটু ভালো করে দেখে নিতে মন চাইছে
এত উচু করে প্যান্ট পরেছে
মনে হচ্ছে মফস্বল শহর ছেড়ে এই ক’দিন ঢাকায় এসেছে।
এখনো এমন দিন আসেনি যে
ছেলেটাই প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে পারে
কিন্তু মেয়েটির খুব ইচ্ছে করছে জেনে নেয়
এ পর্যন্ত কতগুলো প্রেম করেছে?
হিজাব পরা কি ম্যান্ডেটরি?
ঘুরে বেড়াতে পছন্দ কি না?
মাঝে মধ্যে চকবার আইসক্রিম আর ফুচকা খেতে আপত্তি আছে কি না?
মুন্নীদের বাড়িতে হুটহাট চলে গেলে আপত্তি করবে কি না?
না না এসব ঠিক নয়
তার চেয়ে বরং চুপচাপ বসে বোঝার চেষ্টা করা যাক।
ওয়েটারের অনুরোধে সম্বিত ফিরে পায় মুন
কী খাবেন থাই নাকি কর্ণ স্যুপ?
ভাই তোমাদের স্পেশাল কিছু নেই?
না স্যার এ মুহূর্তে নেই
যে ছেলেটা স্পেশাল স্যুপ স্যুসি এসব বানাতো
সে কয়েকদিন আগে করোনায় মারা গেছে।
আমি এতক্ষণ ওদের পাশের টেবিলে বসে ওদের দেখছিলাম আর আধুনিক সম্পর্ক নিয়ে মনে মনে তুলনামূলক আলোচনা করছিলাম।
হঠাৎ মনে হলো একটা দুরন্ত স্বভাবের যুবক
যে শ্রেষ্ঠ শেফ হবে বলে স্বপ্ন নিয়ে শহরে এসেছিল
কতশত পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে গ্রাসরুট ক্যাফের শেফ হতে পারা
শ্রমসাধ্য সব তবুও কে এফ সি ম্যাগডোনান্সের মতো কিছু একটা হতেও পারে একসময়
এসব স্বপ্ন বুকে নিয়ে আজমল এখন শুধু দীর্ঘশ্বাস।

Advertisement
উৎসShaheena Ronju
পূর্ববর্তী নিবন্ধমানুষের জন্য মানুষ -কবি অনামিকা দত্ত‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধলালপুরে মোবাইলে গেম খেলতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে