গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি, প্রাইভেট গাড়ির রোড ট্যাক্স বাড়েনি কেন?

0
484
Violet Halder

ভায়লেট হালদার : সংখ্যালঘুরা বরাবরই নিম্নগামী। জন্ম থেকে নয় বরং সমাজের সিস্টেম তাকে নিম্নগামী করে রাখে। সংখ্যালঘুরা সিস্টেমের জালে আটকা পড়ে ক্রমশ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকে, ফলে উপরে উঠার সিঁড়ি তারা দেখতে পায় না। আর তাদের দেখতে দেয়াও হয় না।

পৃথিবীর ইতিহাসে অর্থবিত্ত, খ্যাতি থেকে বঞ্চিত সংখ্যালঘুরা সংখ্যায় তারা সংখ্যাগুরু হয়েও তারা সংখ্যালঘু হয়ে বাঁচে। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে প্রতি পদক্ষেপে তারা জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকে। অর্থবিত্ত, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা, স্বাধীনতা এসব শব্দগুলোর সঙ্গে তারাও পরিচিত কিন্তু এসবের স্বাদ তারা পায় না। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বে তো নয়ই, এই বিশ্বদ্বয়ে এদের জন্য আশা আছে ভরসা নেই।

বাংলাদেশে এক লাফে ৬০% গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি! কি অদ্ভুত! যারা দৈনিক বাস বা গণ পরিবহনে যাতায়াত করেন, যারা সরকারী কিংবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তাদের আয় উপার্জন কত শতাংশ বেড়েছে? দৈনিক কারা গণপরিবহনে যাতায়াত করেন? নিশ্চয়ই উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বাসে যাতায়াত করেন না। মন্ত্রী, আমলা, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, ধনী পরিবারের লোকেরাও বাসে যাতায়াত করেন না।

বাংলা ট্রিবিউন এ প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়, ‘২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচলকারী ছয় শতাংশ মানুষ ঢাকার ৭৬ ভাগ সড়ক দখল করে আছে। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোট সড়কের ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ থাকে ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। গণপরিবহনের দখলে থাকে ৬ থেকে ৮ শতাংশ। সড়কের বাকি অংশ বিভিন্নভাবে অবৈধ দখল ও অবৈধ পার্কিয়ের দখলে থাকে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. সরওয়ার জাহান এবং বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিচার্জ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেছেন, ‘ব্যক্তিগত গাড়িতে প্রতি ১০ স্কয়ার ফুট জায়গাতে মাত্র দু’জন মানুষ চড়তে পারেন। অন্যদিকে, গণপরিবহনে একই পরিমাণ জায়গায় বসে ও দাঁড়িয়ে ১৫/১৬ জন যাত্রী চলাচল করতে পারেন।

সেই হিসেবে যে পরিমাণ ব্যক্তিগত গাড়ি, তা ঢাকার রাস্তার অর্ধেকের বেশি দখল করে। বাকি অংশ থাকে গণপরিবহন ও অবৈধ দখলে।’অর্থাৎ ঢাকার ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ সড়ক দখল করে রাখে ব্যক্তিগত গাড়ি। আর গণপরিহন দখল করে মাত্র ৭ শতাংশ রাস্তা। বাকি অংশ দখল করে আছে অন্যান্য গাড়ি, অবৈধ দখল ও অবৈধ পার্কিং।’

এ থেকেই অনুমান করা যায় গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কত এবং গাড়িতে চড়ে যাতায়াতকারী কারা?

করোনা মহামারীর সময়ে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই কমবেশী আক্রান্ত। অনেক দেশেই লকডাউন শিথিল করেছে। বাস, ট্রেন সহ অন্যান্য যানবাহন চলছে, বাস ও ট্রেনের সীটের সারিতে কেবলমাত্র একজন যাত্রী বসতে পারে। বড়জোর উন্নত দেশগুলোর মানুষ সচেতন বিধায় সে সব দেশের মানুষেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাসে যাতায়াত করছেন। বাংলাদেশ ছাড়া আর কোন দেশে সরকার বাস ভাড়া বাড়িয়েছেন?

বাংলাদেশ সরকার করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানুষকে সচেতন থাকার জন্য বাণী দিয়ে যাচ্ছেন। নিম্নবিত্ত মানুষের অর্থনৈতিক দুর্দশা লাঘবের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ত্রাণ হিসেবে চাল ও অর্থ সাহায্য দিয়েছেন। বিভিন্ন ছোট বড় ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ/প্রণোদনা হিসেবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।

দেশের সকল মসজিদে ১২২ কোটি ২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করছেন প্রধানমন্ত্রী। করোনার কারণে সারাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার জন্য এক হাজার ২৫৭ কোটি টাকা দিচ্ছেন। সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। এবং এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ সরকার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

সরকারী অনুদান, ত্রাণ, ৫০ লাখ পরিবারকে এককালীন দান হিসেবে ২৫০০টাকা নিয়ে চুরি, কেলেংকারী হয়েছে ও হচ্ছে। যাদের জন্য সরকারের এই সাহায্য সহযোগিতা তারা প্রকৃত অর্থে কতটুকু পেয়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন তা বলা মুশকিল। পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালে অবশ্য দেশের মানুষ ও তাদের ক্ষুধা খুব সহজেই ভেসে ওঠে। একদল জঠরের জ্বালা নিয়ে সাহায্যের জন্য হাত পাচ্ছে।

আরেকদল খেয়েদেয়ে ঢেঁকুর তুলে হাত বাড়িয়ে নিচ্ছে সরকারী সব দান অনুদান। এই ঢেঁকুর তুলে বাড়িয়ে দেয়া বলিষ্ঠ ও শক্তিশালী হাতগুলোর নীচে চাপা পড়ে গেছে জীর্ণ শীর্ণ ক্ষুধার্ত হাতগুলো। এই বলিষ্ঠ, শক্তিশালী, মোটাতাজা হাতগুলো সরিয়ে কে দেখছে বা বের করে আনছে চাপা পড়া দরিদ্র হাতগুলো? সরকার জানেন সব কথা। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও জানেন এসব। এরপরেও আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও অর্ধভগ্ন হয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলোর উপরই যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা চাপিয়ে দিলেন গণপরিবহন ভাড়া ৬০% বৃদ্ধি করে।

কিন্তু কেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? ৬০-৭৬ ভাগ রাস্তা দখল করে প্রাইভেট গাড়ীতে চলাচলকারী ব্যক্তিদের রোড ট্যাক্স বাড়েনি কেন? মাত্র ৬-৮ ভাগ সড়ক দখল করা গণপরিবহনে গাদাগাদি করে যাতায়াতকারী মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের উপরে আপনার দয়া নেই কেন মানবতার জননী? এর কারণ কি আমরা এটাই ভেবে নেবো, আপনার দেয়া ত্রাণ, দান-অনুদান, ঋণ এবং আপনার দয়া ও অনুগ্রহ হাতিয়ে নেওয়া শক্তিশালী হাতগুলো গণপরিবহনে যাতায়াত করেন না!?

Advertisement
উৎসViolet Halder
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের লালপুরে মাজার কমিটি নিয়ে আওয়াামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আটক ৪
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বাগাতিপাড়ায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে