“ছেড়া দ্বীপ” শাহিনা রঞ্জু‘এর ভ্রমণ কাহিনী

0
869
www.natorekantho.com

শাহিনা রঞ্জু : কাদের, জামাল, রেজাউল, শাহিন ওরা বেশ কিছুক্ষণ দেন দরবার করে ১০/১২ জনের ক্যাপাসিটি আছে এমন একটা স্পিডবোট ভাড়া করলো। আমরা একে একে বোটে উঠলাম। লাইফ জ্যাকেট পরে নিলাম। বোট স্টার্ট নিলো। আমরা যাচ্ছি শেষ পর্যন্ত।

আমাদের ছোট একটা দেশ, অনেক মানুষ, আমরা সব মানুষকে মানব সম্পদে পরিনত করতে পারিনি। প্রকৃতির উপর অত্যাচার চলে প্রতিক্ষণ। তবুও স্রষ্টা উজাড় করে দিয়েছেন। সাগর, পাহাড়, দ্বীপ, সমতল, আরও কতকিছু! শুধু মনে হয় জীবনটা অনেক ছোট, দেশের জন্য কিছুই করতে পারলাম না।

www.natorekantho.com

এই মাটি কত শষ্য দানা খাইয়েছে! কত কিছু দেখিয়েছে! কত ভালবাসা সবখানে ছড়াণো আছে! আমি শুধু দুহাত ভরে নিয়েছি। কিছুই দিতে পারিনি। এজন্য প্রতিনিয়ত ক্ষমা চাই আল্লাহর কাছে। সাগর বেশ শান্ত ছিলো। মূলত সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ থেকে হেটে বা সাইকেলে চেপে ছেড়া দ্বীপ যাওয়া যায়।

জোয়ার ভাটা খেয়াল করতে হবে। যারা চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে তারা হেটে বা সাইকেলে করে ছেড়া দ্বীপ এ চলে আসে। অথৈ সাগরের কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে ছেড়া দ্বীপে এসে পৌঁছলাম। তবে যেখানে নেমে হাটতে হবে সেখান পর্যন্ত স্পিড বোট যায়না। কারন শৈবালে ধাক্কা লেগে বোট ভেংগে যেতে পারে।

www.natorekantho.com

তাই নিরাপদ দুরত্বে থাকে। কাঠের নৌকা এসে কিনারে নিয়ে যায়। আমরাও তাই করলাম। সব মিলিয়ে ভিষণ আনন্দের মধ্যে আছি। নৌকা থেকে নেমে শৈবালের উপর দিয়ে হাটছি। কাদের সাবধান করে দিল। বললো যেন বড় পাথর দেখে পা রাখি নাহলে পা পিছলে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেতে পারি।

আসলেই কাদের সত্য বলেছে সাবধানে না হাটলে যে কোন সময় বিপদ ঘটতে পারে। যাহোক আমি আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে ছেড়া দ্বীপ গিয়ে ওখানকার ডাব খাবো যে ডাবের ভিতর কিছুটা নারকেল হয়েছে। কাদেরকে বললাম কারন বুঝতে পারছিলাম ও যেটা খাওয়াবে সেটা হবে বেস্ট।

www.natorekantho.com

সত্যি ও একটা দোকানে নিয়ে গেল প্লাস্টিকের চেয়ারে বসলাম। ডাব কেটে স্ট্র দিয়ে একে একে সবার হাতে দিল। আমি ডাবের পুরো পানিটা খেলাম। কমপক্ষে দুই গ্লাস পানি হবে। তবে এত মজার ডাবের পানি আমি জীবনে খাইনি। আমি সবাইকে এ আনন্দ উপভোগ করার অনুরোধ করলাম।

আসলেই এটা যে না খেয়েছে সে কিছু মিস করেছে। ডাব খাওয়ার পর ডাবের ভিতরের শ্বাসটা অর্থাৎ অপরিপক্ব নারকেল তুলে খেতে দিলো। কী যে মজা খেলাম তা লিখে ব্যক্ত করতে পারলাম না। এ বলে আমারটা মজা। আর একজন বলে চেখে দেখো আমারটা বেশী মজা। একেকজন আর একজনেরটা খেয়ে টেস্ট করে দেখলাম।

www.natorekantho.com

ডাব খাওয়া শেষ হতে না হতে কেনা হলো তরমুজ। তরমুজ ফালি করে স্লাইস করে খেলাম। আসলে অবাক বিষয় হলো এত মজার তরমুজও কোনদিন খাইনি। খাওয়া শেষ করে হাটতে শুরু করলাম। কখনো শৈবালের উপর বসে, কখনো সাগরের পানিতে পা ডুবিয়ে ছবি তুলছে সবাই।

শেখ মুজিব স্যার আর ভাবীকে মনে হলো সত্তুর দশকের নায়ক নায়িকা। আমার হয়েছিল আর এক ঝামেলা। তা হলো টুম্পাকে সামলানো। ও কারো কথা শুনছিল না। দৌড়ে এখানে ওখানে যাচ্ছিল আর আমি চিৎকার করছিলাম টুম্পা টুম্পা করে। মনে মনে কান ধরলাম যে ওকে নিয়ে আর কোথাও বের হবোনা।

www.natorekantho.com

কোন কোন গ্রুপ গিয়েছিল সবাই একরকম কষ্টিউম পরে। তারা আবার সবাই মিলে গান গাইতে গাইতে হাটছিল। সেটা ছিলো আরও আনন্দদায়ক। আমার মনে হচ্ছিলো যদি ঐসব গ্রুপের সদস্য হতাম তাহলে আরও মজা পেতাম।

এর মধ্যে কাদের পাঁকা পেপে নিয়ে হাজির। একটা চামুচ আর অর্ধেক করা একটা পেপে হাতে দিয়ে বললো সে ফোন করে এটা জোগাড় করিয়ে রেখেছে আমাদের জন্য। আসলে মনে হতে পারে বাড়িয়ে বলছি। এমন মজার পেপেও আমি কোনদিন খাইনি। পেপে খেলাম সবাই মিলে।

www.natorekantho.com

খাচ্ছি, হাটছি, ছবি তুলছি আর ভাবছি আর কি আসা হবে এখানে? হয়তো হবে নয়তো নয়। এই ছোট জীবনের কখন যে সময় ফুরায় সেতো জানা নেই! তবুওতো ভালবাসি সেই দয়ালকে।
ফকির লালন বলেছেন – “এমন দয়াল মিলবেনা।”

বাংলাদেশের সবচেয়ে দক্ষিণের পয়েন্টে যাবো দ্রুত হাটছিলাম। কেয়া গাছগুলোর পাশে দাড়িয়ে ছবি তুললাম। আর কতদুর ভাবছিলাম। অনেকে দেখি পৌছে গেছে। শেখ মুজিব স্যার ভাবী তারাও পৌছে গিয়ে ছবি তুলছে। কিন্তু আমি পৌঁছাতে পারিনি কারন টুম্পার খেয়াল রাখতে গিয়ে আমার সময় লেগে যাচ্ছিল আর ওখানে যাওয়ারর আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিলাম।

www.natorekantho.com

ইতোমধ্যে টুম্পা দুই জায়গায় হাত কেটে ফেলেছে রক্ত পড়েছে। সম্পার আছে চোখের সমস্যা। আলোতে ওর কষ্ট হচ্ছিলো। ওর জন্য একটা সানগ্লাস কেনা জরুরী ছিলো। কেনা হয়নি। আসলে কতদিক আর খেয়াল করা যায়? অফিসের কাজের চাপ সামলিয়ে যে আসতে পেরেছি শেষ পর্যন্ত এটাই বা কম কিসে!

ছেড়া দ্বীপ
১৫/২/২০২০

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“কাদেরের দ্বীপ” শাহিনা রঞ্জু‘এর ভ্রমণ কাহিনী
পরবর্তী নিবন্ধ“দেখা দাও” কবি শাহিনা রঞ্জু‘এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে