ধর্মীয় গোঁড়ামি ও বর্তমান প্রেক্ষিত – বুলবুল আহমেদ

0
580
Bulbul Ahmed

ধর্মীয় গোঁড়ামি ও বর্তমান প্রেক্ষিত – বুলবুল আহমেদ

এক সময় মুসলমান বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার ছিলো বিশ্ব নন্দিত। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম দেশগুলোতে বিজ্ঞান চর্চা করা, বিজ্ঞানমনস্ক হওয়াকে ধর্মীয় নানান ব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যা দিয়ে কতিপয় লোকে বিরোধিতা করায় মুসলিম দেশগুলোতে বিজ্ঞান চর্চা হয়না বললেই চলে!

যার ফলে পরাশক্তি বা পরাক্রমশালী কোন দেশের তালিকায় মুসলিম প্রধান কোন দেশ নাই। মুসলিম দেশগুলোতে সম্পদ থাকলেও বিজ্ঞান চর্চা কম থাকায় বিশ্ব জুড়ে মুসলমানরা মার খাচ্ছে বলে আমার মনেহয়।

কিছুদিন আগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের সময় কতিপয় আলেম হয় না-বুঝে নাহয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গাদের এই দেশে আশ্রয় দেয়া জন্য তীব্র আন্দোলন করেছেন। এমনকি মিয়ানমারকে হামলা করার দাবিও করছিলেন। আজকে তারাই বলছে রোহিঙ্গা তাড়াও! রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী, কেউ বলছে এই দেশে রোহিঙ্গারা যে সুবিধা পাচ্ছে আমরা তা পাচ্ছি না!

এক শ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ী আছেন যারা নিজেদের গোঁড়ামি, ধর্মান্ধতা আর অজ্ঞতার কারণে সমাজ প্রগতির বাঁধা সৃষ্টি করেছেন যুগযুগ ধরে। দেশে শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে সেচ দেয়া শুরু হয় তখন বলেছিলো আল্লাহর উপর দিয়ে হাত খেলাচ্ছো, বৃষ্টির পানি দিয়ে আবাদ না করে সেচ দেয়া গুনাহ! এখন তারা ট্যাপের পানি ছাড়া অজু করে না।

ব্রিটিশ আমলে এই শ্রেণির আলেম নামধারীরা ইংরেজি শিক্ষার বিরোধী ছিলো, বাংলাকে বলতো হিন্দুর ভাষা” এখনও তাদের অনেকে ‘বাবা’ না বলে ‘আব্বা’; ‘মাংস’ না বলে ‘গোসত’; ‘জল’ না বলে ‘পানি’ বলতে শেখান!

আজকে যারা ভাষ্কর্যের বিরোধিতা করছে তাদের কাছে এটা শুধু ভাষ্কর্যের প্রশ্ন নয়! তারা জয়ী হলে তারা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান যাওয়া, শোভাযাত্রা করা, কপালে টিপ পড়া, নারীদের চাকরী করা, সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার দেয়ার বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধিতা করে আবার সোচ্চার হবে।

এক সময় এরাই বলেছিলো মাইকে আযান দেয়া যাবে না, ছবি তোলা যাবেনা, টিভি শয়তানের বাক্স! কিন্তু এখন তারাও মাইকে আযান দেয়! টিভিতে টকশো করে! ছবি তোলে! ইউটিউব, ফেসবুকে ভিডিও দেয়! তাদের প্রয়োজনে সব জায়েজ। কিছু লোক না বুঝে এসব বলতেই পারে! কিন্তু দেশের নীতিনির্ধারকেরা, রাজনৈতিক দলগুলোও যখন তাদের সমর্থন দেয় ধর্মের দোহায় দিয়ে তখন আর কিছু বলার থাকে না!
বিদ্রোহী কবির কবিতার কথা মনে পড়ে, “ বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে, আমরা তখনও বসে- বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি, ফিকাহ ও হাদিস চষে ”

আমার মনেহয় শুধু মাত্র রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য যারা এসব সমাজ-প্রগতি বিরোধিতা করছেন তাদের বয়কট করা জন্য তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতেই হবে। দেশের জন্য আলেম সমাজেরও দায়িত্ব আছে নিশ্চয়।

যারা সচেতন এবং শিক্ষিত আলেম তাঁরা অন্তত কে কি ভাবলো না চিন্তা করে এইসব গোঁড়ামির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন বিশ্বাস করি। নাহলে উগ্রবাদীরা শক্তিশালী হবে, দেশ পিছিয়ে পড়বে! পাকিস্তান, সিরিয়া, আফগানিস্তান হয়ে যাবে! আর রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব নিতেই হবে তা নাহলে সাময়িক সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও ইতিহাস ক্ষমা করবে না!

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধসিংড়া পৌর শহরে ১০ টি পয়েন্টে ফ্রী ওয়াই-ফাই স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিলেন পৌর মেয়র ফেরদৌস
পরবর্তী নিবন্ধ“গাহি সত্যের গান” এম,উদ্দিন এর কবিতা 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে