নাটোরে পুকুর খনন কারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সাঁড়াশি অভিযান হলেও, বন্ধ হচ্ছে না পুকুর খনন

0
3387
nATORE KANTHO

ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পঞ্চম পর্ব

নাটোর কণ্ঠ : নাটোরে ফসলি জমিতে চলছে, অবৈধভাবে পুকুর খনন। প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারানোর আশঙ্কার পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলবদ্ধতা সৃষ্টির নতুন পথ। যদিও প্রশাসন প্রতিনিয়ত চালাচ্ছেন অভিযান, তবুও বন্ধ হচ্ছে না পুকুর খনন।

চলতি বছরে খননকৃত পুকুরের পাশে, আগামী বছর সৃষ্টি হবে জলবদ্ধতা। তারপরেই সেই জমিটি অনাবাদি জমি হিসেবে খনন করা হবে পুকুর। তাছাড়া কৃষকরা কৃষি কাজ করে দিনের পর দিন নিরবিচ্ছিন্ন লস কিংবা আশানুরূপ উন্নতি করতে না পারে পুকুর থেকে মাটি কিক্রির নগদ লাভ আর মাছ চাষ করে লাভের অর্থের কথা ভেবে ঝুকে পড়ছে পুকুর খনন তথা মাছ চাষের দিকে।এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে চাষের জমি। আর এমনি করেই একদিন নাটোর থেকে হারিয়ে যাবে অনেক বিল, এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল।

অপরদিকে গ্রামীণ সড়কের মাটি ভর্তি ট্রাক্টর চলাচলের কারণে বিনষ্ট হচ্ছে সড়ক। সৃষ্ট যানজটে বিঘ্ন ঘটছে পথে চলাচল কারীর। তবে এইসব ট্রাক্টর এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না, এমন অভিযোগ পথ চলাচলকারীদের।

নাটোর সদর উপজেলার বড় হরিশপুর ইউনিয়নের পাইকরদল গ্রাম। পাইকরদল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে খৌলসামারি বিল। এই বিলে খনন করা হচ্ছে পুকুর। জমির মালিক মো. ফারুক হোসেন নাটোর কণ্ঠকে জানান, তার ছয় বিঘা জমিতে  ফসল হয় না। পরিত্যক্ত হিসেবেই মিন্টু এবং জাহাঙ্গীর নামের দুইজনকে, তিন বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে।

গ্রামবাসী মো. ইয়াকুব আলী নাটোর কণ্ঠকে জানালেন, এই পুকুর যে আশাতে খনন করছেন জমির মালিক, সেই আশা পূরণ হবে না কারণ এত গভীর করলে সেখানে মাছের আবাদ হয় না। মাটি বিক্রেতাদের কাছে লিজ দিয়েছে। মাটি বিক্রেতারা মাটি বিক্রি করছে। মাছ চাষ হোক আর না হোক তাতে মাটি বিক্রেতাদের কিছু যায় আসে না।

গ্রামবাসী মো. তাহের হোসেন নাটোর কণ্ঠকে জানান, ওই জমিতে বছরে দুই থেকে তিনটা ফসল হয়। মাছ চাষ আরো লাভজনক, তাই জমির মালিক পুকুর খনন করছেন।

ঐ গ্রামের ভ্যান চালক আনোয়ার হোসেন নাটোর কণ্ঠকে জানান, সরকারিভাবে এই পুকুর কাটা বন্ধ করেছেন দুই-তিনবার। গ্রামের চিকন রাস্তা দিয়ে ভ্যান গাড়ি চালাতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। মাটি ভর্তি ভাড়ি ট্রাকটর চলাচলের কারণে, অনেক জায়গায়ই ভেঙে গেছে রাস্তা।

কথা হয় পুকুর খনন কারী জাহাঙ্গীর এর সঙ্গে, অবৈধভাবে পুকুর খননের কারণে, প্রশাসন কয়েকবার আপনার খনন কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন ? এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিনের চাবি, ব্যাটারি যব্দ করেছেন তারপরেও কিভাবে খনন কাজ চালাচ্ছেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে মাটির বেপারী জাহাঙ্গীর নাটোর কণ্ঠকে জানান, সবই আল্লাহর ইচ্ছা। উপর আল্লার হাত থাকলে সবই সম্ভব বলে তিনি জানালেন।

সরেজমিনে দেখা যায় পাইকরদল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নোয়াখালী পাড়ার দিকে সরু এই পথ জুড়ে মাটি পড়ে আছে। সামান্য একটি বৃষ্টিপাত হলে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাবে।

গ্রামের দুইপাশের বিভিন্ন স্থানে উঁচু নিচু করে রাখা আছে মাটি। ভিটা বা ভরাটের কাজে ব্যবহার করার জন্য তারা ক্রয় করছেন অনেকেই।জানা যায় ভাটায় মাটি বিক্রি করার চেয়ে বাইরে মাটি বিক্রি করলে নগদ তিনগুণ অর্থ পাওয়া যায়।

এলাকাবাসীরা বলছেন, চলমান এই পুকুর খননের মাটি, কোন ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে না। স্থানীয় এলাকাবাসীর নিকট বিক্রি করা হচ্ছে মাটি।

প্রশাসনিকভাবে দফায় দফায় অভিযান করা হয়েছে। কখনো এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিনের ব্যাটারি জব্দ। কখনো এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিনের চাবি জব্দ করা হয়েছে। তারপরেও থেমে থেমে কিভাবে ফসলি জমিতে পুকুর খনন চলমান রয়েছে? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর কি পাওয়া যাবে?

নাটোর সদর উপজেলার নির্বাহি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম নাটোর কণ্ঠকে জানান, ফসলি জমিতে যারা অবৈধভাবে পুকুর খনন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।  আবাদি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খননের সংবাদ পাওয়া মাত্র খনন কারীদের বিরুদ্ধে, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে, তিনি জানালেন।

চলবে…

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধগুরুদাসপুরে ব্যতিক্রমী সেপাক টাকরো খেলার শুভ উদ্বোধন
পরবর্তী নিবন্ধতৃতীয় দফায় নাটোরের সিংড়া পৌরসভায় ভোট গ্রহন শুরু

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে