নাটোরে প্রণোদনা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ : মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষরেও সরকারি সার-বীজ উত্তলন !

0
106
nATORE KANTHO

নাটোর কন্ঠ : গত পাঁচ বছর আগে মারা গেছে, বাছের শেখ। তবুও তার স্বাক্ষরে, তার নামে বরাদ্দকৃত ২০২২/২৩ রবি মৌসুমের প্রণোদনার সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তালিকায় একই পরিবারের দুই বা তার বেশি সদস্য এই প্রণোদনা পেয়েছেন বলে, অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এমন অভিযোগ নাটোরের লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসের সার ও বীজ বিতরণে। আর এই অনিয়ম ও স্বজন প্রীতিতে ক্ষুব্ধ, প্রান্তিক কৃষকরা। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এবছর ২০২২/২৩ রবি মৌসুমের প্রণোদনার আওয়াতায় উপজেলার ৩ হাজার ৫শত প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৯৫ থেকে ৯৭ শতাংশ বিতরণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, ‘মৃত ব্যক্তিসহ, যার কোন জমি নেই, কৃষক নয়, এমন ব্যক্তিও সরকারি প্রণোদনা পায়। কিন্তু আমরা মাঠে ফসল ফলাই আমাদের কিছুই দেওয়া হয় না। রাজনৈতিক ব্যক্তি আর প্রভাবশালীদের, সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হয়।’

প্রভাবশালীদের ভয়ে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের, জোতদৈবকী গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, ‘মৃত কাবিল শেখের ছেলে বাছের শেখ। গত ৫ বছর আগে মারা গেছেন। মৃত বাছের শেখ‘এর ছেলে এখন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের অনুসারি।

তিনি তার মৃত পিতাসহ পরিবারের ৫ সদস্যের জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে সার ও বীজ নিয়েছেন। এছাড়া বর্তমান লালপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ইসাহাক আলীর অনুসারী জাহাঙ্গীর আলম। তার পরিবার ও স্বজন মিলিয়ে অনন্ত ১১ জন তার বরাদ্দকৃত সার ও বীজ উঠিয়ে নিয়েছেন।’

কৃষকদের দাবি, ‘এবার কৃষি প্রণোদনা থেকে বাদ পড়েছেন প্রকৃত প্রান্তিক কৃষকেরা। তালিকায় যারা রয়েছেন তারা ক্ষমতাশীন দলের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। অনেকে কৃষকই না। সরকারি প্রনোদনার এসব সার বীজ তারা উত্তলন করে কম মূল্যে কৃষকদের কাছে, কেউ ডিলারদের কাছে বিক্রি করে দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে টাকা।’

এবিষয়ে মৃত পিতার নামে সার-বীজ উঠিয়ে নেওয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির নামে সার বীজ নেওয়া যাবে না, বিষয়টি আমার জানা নাই। কৃষি অফিস থেকে আইডি কার্ড চাওয়ায় ৮ টি আইডি কার্ড দিয়েছি।

পরে কৃষি অফিস থেকে ফোন দিয়ে সার ও বীজ নিয়ে আসতে বললে, আমি গিয়ে সার আর বীজ নিয়ে আসি। আর আমার পিতার টা আমি নিজেই, পিতার নাম স্বাক্ষর করে ছোট এক বস্তা গমের বীজ ও ২০ কেজি সার উঠিয়ে নিয়ে আসি।’

লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক পলাশ বলেন, ‘এবার এমপি মহাদয়, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কৃষি অফিস সম্বনয় করে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ করছেন। এভাবে ভূয়া কৃষকরা প্রণোদনার সার বীজ উঠিয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে সম্বনয় না করে, প্রণোদনা বিতরণ না করায় প্রান্তিক পর্যায়ে, প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হয়েছে।’

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, ‘সকল কৃষক আমাদের পরিচিত, আর এটা তো নির্বাচনের ভোটার তালিকা করছি না। তাই কৃষি প্রণোদনা বিতরণের তালিকা যাচ্ছাই বাচাইয়ের প্রয়োজন নেই। আর প্রণোদনার বিষয়ে কথা বলতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিষেধ আছে।

মৃত ব্যক্তিকে প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আর এমন হওয়ার সুযোগও নেই। তবে এতালিকায় কিছু কৃষক আছে, কিছু রাজনৈতিক নেতারা আছে। এমপি মহাদয় ও উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকেরা আছে। তারা তালিকা দিয়েছেন। এভাবেই তো তালিকা হয়।’

একই পরিবারের একাধিকবার সদস্য প্রণোদনা পাওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘একই পরিবারে একাধিক কৃষক থাকতে পারে। এতে একই পরিবারের একাধিক কৃষক প্রণোদনা পেতে পারেন। তারপরও কোন অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব।’

লালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রণোদনা বিতরণ কমিটির সভাপতি ইসাহাক আলী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে মৃত ব্যক্তি বা একই পরিবারের একাধিক সদস্য প্রণোদনার সার ও বীজ পেলে এটা মারাত্মক অনিয়ম হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে সড়ক দূ্র্ঘটনায় আহত বৃদ্ধের দেহে মিলল ফেন্সিডিল
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে আখ ক্ষেত থেকে মৃতদেহ উদ্ধার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে