নাটোর মুক্ত দিবস আজ, পালিত হচ্ছে নানা আয়োজনে

0
345

নাটোর মুক্ত দিবস আজ, পালিত হচ্ছে নানা আয়োজনে

নাটোর কণ্ঠ:
আজ ২১ ডিসেম্বর, নাটোর মুক্ত দিবস। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে নানা আয়োজনে পালন করবে নাটোরবাসী। সকালে নাটোর প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি বিজয় মিছিল ও রেলি বের করবেথ্র মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড। বিজয় শোভাযাত্রাটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্বাধীনতা চত্বরে গিয়ে শেষ হবে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রাজনৈতিক সংগঠন ও প্রশাসন নানাভাবে দিবসটি পালন করছে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও দেশের অনেক স্থানেই ছিল তখন শত্রুদের দখলে। ধীরে ধীরে সে সমস্ত এলাকায় দখলমুক্ত হয়। তেমনই একটি এলাকা নাটোর। যা ছিল পাকিস্তানী বাহিনীর দুই নম্বর সেক্টর। তাই ১৬ ডিসেম্বর নয় নাটোর শত্রুমুক্ত হয় তারও পাঁচ দিন পর২১ ডিসেম্বর। এদিন নাটোরের উত্তরা গণভবনে ভারতীয় বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে নাটোর মুক্ত হয়। পাকিস্তান বাহিনীর নাটোর ব্যারাক কমান্ডার পিএ ১৭০২ ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ ভারতীয় বাহিনীর আইসি ৪৫৫১ ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিং পান্নুর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নাটোর ছিল পাকিস্তান হানাদারদের ২ নম্বর সেক্টরের হেড কোয়ার্টার। এখান থেকেই দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যুদ্ধ পরিচালনা করতো শত্রু বাহিনী। ১৬ ডিসেম্বর দেশের অন্যান্য স্থান শত্রুমুক্ত হলেও ২১ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের আগ পর্যস্ত পুরো নাটোর ছিল পাক বাহিনীর দখলে। নাটোরের উত্তরা গণভবন ছাড়াও আনসার কোয়ার্টার, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজ, নাটোর রাজবাড়ি, পিটিআই, নাটোর মহারাজা জেএন উচ্চ বিদ্যালয়, ভোকেশনাল স্কুল, দিঘাপতিয়া কালিবাড়ি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ কার্যালয় ছিল পাক সেনাদের ঘাঁটি।

এ সময় পাক হানাদার বাহিনী নাটোর সদর উপজেলার ফুলবাগান, ছাতনী, দত্তপাড়া, মোহনপুর, লালবাজার, কাপুড়িয়াপট্টি, শুকলপট্রি, মল্লিকহাটি, বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া ক্যাথলিক মিশন, গুরুদাসপুর উপজেলার নাড়িবাড়ি, সিংড়া উপজেলার হাতিয়ানদহ, কলম এবং লালপুর উপজেলার গোপালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল চত্বরসহ ২০টি জায়গায় গণহত্যা চালায়।

১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী, নবাবগঞ্জ থেকে পাক সেনারা নাটোরের পিটিআই স্কুল, আনসার হল, রিক্রিয়েশন ক্লাব, এনএস সরকারি কলেজ, নাটোর রাজবাড়ি ও দিঘাপতিয়া উত্তরা গণভবনে (তৎকালীন গভর্নর হাউস) আশ্রয় নেয়। এরপর ২১ ডিসেম্বর উত্তরা গণভবন চত্বরে পাকিস্তান বাহিনীর নাটোর ব্যারাক কমান্ডার পিএ ১৭০২ ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ ভারতীয় বাহিনীর আইসি ৪৫৫১ ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিং পান্নুর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

এ সময় পাকিস্তান বাহিনীর ১৫১ জন অফিসার, ১৯৮ জন জেসিও, পাঁচ হাজার ৫০০ সৈনিক, ১ হাজার ৮৫৬ জন আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য তাদের ৯টি ট্যাংক, ২৫টি কামান ও ১০ হাজার ৭৭৩টি ছোট অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে।

নাটোরের মুক্তিযোদ্ধারা জানান, পাকিস্তান বাহিনী নাটোরের যেসব স্থানে গণহত্যা চালিয়েছিল তার কিছু জায়গায় গণকবর ও শহীদ মিনার নির্মিত হলেও যথোপযুক্ত তত্বাবধান করা হয় না।

এখনও কোন শহীদ স্মৃতি নির্মিত হয়নি বর্তমান সদর উপজেলা পরিষদের (মুক্তিযুদ্ধকালীন মিলিটারি পুলিশ হেড কোয়ার্টার) ভেতরের শিমুলতলায়। তালিকা হয়নি গণকবরে শায়িত শহীদদের। সংরক্ষিত হয়নি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি। শুধুমাত্র বিশেষ দিন পালন ও শহীদদের স্মরণের মধ্যেই কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রাখলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলে যাবে বলে মন্তব্য করেন তারা।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিলেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু শতবর্ষে – দেবেশ ঠাকুর এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে