পরের বউ (পর্ব-০৬)-তন্ময় ইমরানের গল্প (প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)

0
419
Porar-bou
পরের বউ (পর্ব-০৬)-তন্ময় ইমরান (প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)

এক.
গরীব লোকটার ঘরে শয়তান দরবেশের বেশ ধরে একরাত কাটাবার প্রস্তাব দিল। প্রথমেই শয়তানের পায়ের দিকে গরীব লোকটার চোখ চলে গিয়েছিল। তার মনে হলো- ওটা মনে হয় খুড়, পা নয়। কিন্তু সে কিছু বললো না। ভয়ও পেল না। বরং শয়তানকে চিনতে পেরে বাঁধবে বলে ঠিক করলো।

এই শয়তানের প্ররোচনাতেই জমিদার, রাজা, উজির তাদের মতো লোককে ঠকায়। তারা গরীব হয়ে থাকে। আর সে নিজে তো এতোটাই গরীব যে একটা বিয়ে পর্যন্ত করতে পারেনি!

লোকটা পরিকল্পনা করলো দরবেশরূপী শয়তানকে ঠিকঠাক মতো আটকাতে পারলে পৃথিবীবাসীর জন্য একটা বড় উপকার হবে। আর এজন্য শয়তানকে আপ্যায়ন করতে হবে। তাই সে তার একমাত্র মোরগটাকে জবাই করলো। শয়তান তাতে অত্যন্ত পরিতৃপ্ত হলো৷ লোকটাকে আশীর্বাদ করলো- তুই পৃথিবীর বুকে নিজের নাম রাখবি, সবাই তোকে মনে রাখবে। শয়তান দুপুরের সেই মোরগ ভোজ শেষে ভাতঘুম দিতে গেল।

ওদিকে লোকটা শয়তানকে আটকে রাখতে বাজার থেকে শেকল কেনার পরিকল্পনা করলো৷ আর এজন্য তার অর্থ জোগাড় করতে হবে। অথচ একটা ডিম পাড়া মুরগি ছাড়া তার কাছে আর কিছুই ছিলনা বিক্রির জন্য৷ লোকটা সেই মুরগি নিয়ে বাজারে বিক্রি করে শেকল কিনে বাড়ির দিকে আসতে আসতেই পথিমধ্যে তার অন্য খেয়াল হলো। সে ভাবলো- আচ্ছা শয়তানকে বাঁধার পর সেতো মুক্তির শর্ত দিয়ে শয়তানের কাছ থেকে বেশ কিছু জিনিস আদায় করে নিতে পারে। এই যেমন কিছু টাকা পয়সা, একটা সুন্দরী বউ, কিছু উর্বর জমি…।

এমন ভাবতে ভাবতে সে নিজ ঘরে পৌঁছে দেখলো শয়তান তখনো ঘুমাচ্ছে। লোকটা চুপিচুপি শয়তানকে বেঁধে ফেললো। শয়তান কিছুই টের পেল না। ঘুম থেকে উঠলো সন্ধ্যায়। এই পুরো সময়টা গরীব লোকটা খুব ছটফট করে কাটিয়েছে- সে আসলে কী চাইবে শয়তানের কাছে, কতোটা চাইবে, সে যা চাইবে শয়তান কী আসলেই তা দেবে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
শয়তান যখন ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বাঁধা অবস্থায় পেয়ে ঘাবড়ে গেল। গরীব লোকটার কাছে ইনিয়েবিনিয়ে মুক্তি চাইতে লাগলো। লোকটা তো এই মওকার অপেক্ষায়ই করছিল। এতোক্ষণ ধরে সে কতো কিছু ভেবে রেখেছে- কী কী চাইবে।

শয়তানকে সে হড়হড় করে বললো- তার কী কী লাগবে! তালিকায় থাকলো ডজনখানেক ঘোড়ার গাড়ি, দুটো প্রাসাদ, বেশি না মাত্র শ একর ধানি জমি, রাজকন্যার মতো একটা বউ, প্রচুর স্বর্ণমুদ্রা ইত্যাদি ইত্যাদি।
তালিকা শুনে শয়তান যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। বললো- যাক বাবা বাঁচালে।

গরীব লোকটা বললো- হুম আমি তো আসলে বেশি কিছু চাইনি। ফলে তুমি এগুলো আমাকে সহজেই দিতে পারবে। আর মুক্তিও পাবে। সেই অর্থে তুমি বেঁচেই গেলে আরকি!

শয়তান বললো- তা যা বলেছ। কিন্তু বৎস, এই যে তুমি লোভ করলে তার কারণে তো আমি আগেই মুক্তি পেয়ে গেলাম। তোমাকে কিছু না দিয়েই! দেখো তোমার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখ আর আমার পায়ের দিকে তাকাও!

বলে শয়তান হো হো করে হাসতে লাগলো। গরীব লোকটা দেখলো- তার পা দুটো খুড় হয়ে গেছে, আর দরবেশরূপী শয়তানের পা দুটো মানুষের পায়ের মতো।

আর এভাবেই গরীব লোকটাকে শয়তানের আশির্বাদ মতো পৃথিবীর মানুষ মনে রাখলো- লোভী আর শয়তান হিসেবেই!
***

ঘড়ি দেখলো ইমরুল কায়েস। মোট ২৭ মিনিট লেগেছে মোবাইলে লিখতে। মোবাইলে লিখলে সময় কাটে ভালো।

সকালে সাজেকে মুরগি সাপ্লাই দিতে এসে ফিরে যাচ্ছিল। এই হোটেলের মালিক তাকে বসিয়েছে। বললো- ইমরুল ভাই, কিছু তরিতরকারি আপনার জন্য তুলে রেখেছি। দাঁড়ান নিয়ে আসি।

তখনই স্নিগ্ধা ও তন্দ্রা হোটেলে ঢোকে। সকালের নাস্তা করতে এসেছে। দীর্ঘদিন পরও স্নিগ্ধাকে দেখে চিনতে পারে ইমরুল কায়েস। ইউনিভার্সিটি জীবনের একমাত্র ভালোলাগা। একটা দুটো কবিতা পাঠানো হয়েছে, চিঠির আকারে। কিন্তু সেসবে নাম লেখা হয়নি। স্নিগ্ধা সোশোলজিতে পড়তো। সে আরবি-তে। তাদের পরিচয় ছিল। বন্ধুদের সার্কেলও লতাপাতায় একই ছিল। কিন্তু স্নিগ্ধাকে কখনও বলা হয়নি, তাকে দেখলে ইমরুল কায়েস- দুর্বল হয়ে পড়ে, পা চিন চিন করে। খুব কাছে বজ্রপাত হলে বুকের ভেতর যেরকম ধুকপুকানি হয়, স্নিগ্ধাকে দেখলে তার ঠিক তাই হতো! হতো বললে ভুল হবে আজও হচ্ছিল।

মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শিক্ষিতদের মধ্যে প্রাচ্য বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো ভাষার সাহিত্যের কোনো শিক্ষার্থীর ন্যূনতম চাহিদা তো দূরে থাক, বরং তাদের নিয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তবে হ্যা ওয়েস্টার্ন সাহিত্য পড়া লোকের ব্যাপক কদর আছে দুনিয়ার এ প্রান্তে।

ইমরুলের অভিজ্ঞতা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়েও আরবি-তে পড়ে শুনলে লোকে সাথে সাথে তাকে ক্লাস-ডিসক্রিমিনেশনের মধ্যে ফেলে দিত। মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন ছিল যে, আরবি পড়া ছেলেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্ত জায়গায় পানের পিক ফেলে বেড়ায়। এরা কোনও প্রেম-ট্রেম বোঝেনা, কেবল ধর্মশিক্ষার পেছনে ছুটে বেড়ায়। এদের মধ্যে কোনও ক্ষোভ, বিক্ষোভ, অ্যাডভেঞ্চার, রোমান্টিসিজম নেই; আছে কেবল পরকাল চর্চায় কোরান-হাদিস গবেষণা।

স্নিগ্ধাকে দেখার পরপরই ইমরুল কায়েস দেখা করে পরিচয় দিয়ে কথা বলার জন্য উঠে যাচ্ছিল। কিন্তু তখনই সে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেই নার্ভাসনেসের মুখোমুখি হয়।

এই পাহাড়ে ব্যবসা করতে এসে তাকে সামরিক বাহিনী সামলাতে হয়েছে, সামলাতে হয়েছে এখানকার স্বায়ত্তশাসনের দাবিরত বিভিন্ন সশস্ত্র রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের। ইমরুল ভেবেছিল, মায়ের মৃত্যুর পর সে যে সুফিজমের রাস্তায় হেঁটেছিল, সেটা অনেকটাই হাসিল করতে পেরেছে। বিশেষত তার স্নায়ু হয়ে গিয়েছিল- ফ্রিজে রাখা কাচা কুসুমের মতো ঠাণ্ডা। অন্তত স্নিগ্ধাকে দেখার আগে তাই ধারণা ছিল ইমরুলের।
স্নিগ্ধাকে চিনতে পরে উঠতে গিয়ে ইমরুল সামনে রাখা হাতে বানানো কালো কফির গ্লাস উল্টে ফেলেছিল (এটি তাকে অ্যাপায়ন করার জন্য হোটেল মালিক রেখেছিল)। কফি গিয়ে পড়েছিল তার পায়ের সাদা পায়জামায়। এই পায়জামা সে বিশেষ অর্ডায় দিয়ে বানায়। চেইন আছে। পকেট আছে- প্যান্টের মতোই পায়জামা। আর পাঞ্জাবিটা আসলে ছিল এক সাদা ফতুয়া। সে যাই হোক, কফি এবং পায়জামার সাদা রং মিলেঝুলে একটা অমার্জিত জায়গার বড় অংশ জুড়ে একটা অশ্লীল ইঙ্গিতের দাগ তৈরি করলো। ইমরুলের মনে হলো- এটা একটা ইশারা। তাকে অপেক্ষা করালো নিয়তি। হয়তো শুরুতেই ছুটে গেলে সে এমন কোনো পরিস্থিতির শিকার হতো, যা হতো অনাকাঙ্ক্ষিত।

সুফিতত্ত্বে ৪০ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা। নবী মুহাম্মদ চল্লিশ বছরে নবুয়্যত পান, ইব্রাহিম ৪০ দিন আগুনের ভেতর ছিল, আরেক নবী মুসা চল্লিশদিন তার দলবল নিয়ে মরুভূমিতে ছিল…। তাই ইমরুল সিদ্ধান্ত নিল ৪০ মিনিট পরেই সে দেখা করবে। সে কারণেই সুফি গল্পটা লিখতে বসা। সাজেক আসতে আসতে মাথায় গল্পটা ঘুরপাক খাচ্ছিলো। একঢিলে দুই পাখি মারা। গল্পটাও লিখে ফেলা হলো, স্নিগ্ধার সাথে কথা বলার জন্য ৪০ মিনিট অপেক্ষার প্রহরও দ্রুত কাটলো।

কিন্তু সেই সুযোগ স্নিগ্ধা ও তন্দ্রা তাকে দিল না। ঠিক ৩৩ মিনিট পর তারা খেয়ে বিল মিটিয়ে হোটেল ছেড়ে বের হয়ে গেল। ইমরুল কায়েস কেবল তারা বেরিয়ে যাওয়ার পর পিছু পিছু কোন কটেজে গিয়ে উঠেছে তা দেখে এলো।

তারপর ফিরে আসলো সেই খাবার হোটেলটার কাছে। হোটেল মালিক কিছু সজিনা, কিছু কলা, আনারস, জুম চাষের কিছু চাল এবং পেঁপে তার জন্য মুরগি সরবরাহ করার গাড়িতে রেখেছে। ইমরুল কেমন একটা ঘোর লাগা ভাব নিয়ে গাড়িতে ওঠে, হোটেল মালিককে ধন্যবাদ দিতে বা বিদায় জানাতে পর্যন্ত ভুলে যায়।

তার মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে স্নিগ্ধা। মাস্টার্স পরীক্ষার আগে আচমকা মায়ের মৃত্যু হলে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল ইমরুল। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাওয়া হয়নি। জীবন উল্টে গিয়েছিল, অথচ স্নিগ্ধা থেকে গিয়েছিল মনের এক গহীন কোণে।

তারপর স্তিতধী হয়ে সে ঠিক করলো আরবি সাহিত্য অনুবাদ করবে আর সুফি গল্প লিখবে। বাংলায় এ নিয়ে খুব বেশি কাজ হয়নি। প্রথম মৌলিক সুফি গল্প লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলে খুব একটা খারাপ হয় না। সুফিজমের প্রতি ছোট থেকেই টান ছিল ইমরুলের। কাজেই শুরু করে দিল সুফি জীবনযাপন।

বাজার অর্থনীতির এ যুগে সুফিজম, সাহিত্য কোনোটাই তো পেট চালাবে না। তাই বাছাই করে নিল মুরগি সাপ্লাইয়ের ব্যবসা। সাজেক থেকে দীঘিনালা পর্যন্ত দীর্ঘ নির্জন রাস্তা ড্রাইভারের পাশে পাড়ি দিতে দিতে ইমরুল কায়েসের মনে স্নিগ্ধাকে নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। উত্তরও সে নিজে নিজেই দেয়।

স্নিগ্ধা কি বিবাহিত?
উত্তর দেয়, অবশ্যই। বত্রিশের বেশি বয়স বিবাহিত না হয়ে কোথায় যাবে! শেষ দেখা চব্বিশে হয়তো। এখন স্নিগ্ধা চব্বিশেও নেই, বত্রিশেও নেই। তার বয়স মনে হয় সাতাশ!

ও কয়দিন থাকবে?
আবারো নিজেকে উত্তর দেয়, কয়দিন আর। সাজেকে মানুষ বড়জোড় দুদিন থাকে।

আচ্ছা ওর হাজবেন্ডকে তো দেখলাম না?
আরে, আছে… আছে। ননদ বা বোন নিয়ে খেতে এসেছে। হাজবেন্ড ঘুমাচ্ছে কটেজে।

ইমরুল কায়েস মৃদু হাসে। সে সুফিজমের চর্চা করে, আর ভাবছে পরের বউ নিয়ে! আচ্ছা পরের বউ নিয়ে ভাবা কি পাপ? কেন পাপ? পাপ আসলে কী? সে তো লোভ করছে না! আরেকজনের সুখের সংসার ভেঙে বউ ভাগানোর চিন্তা করছে না।

জঙ্গলের ভেতর কোন ঘরে আলো জ্বললে জঙ্গলে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিও তো আলো দেখে! না চাইতেও ঘরের ভেতরের দৃশ্যকল্প তার ভাবনায় আসে। সেটা তো পাপ নয়।

কাল কি ইমরুল আবার আসবে? আবার এসে কোনও লাভ হবে কি? মনে হয় না। সাজেকে মানুষ খুব স্বল্প সময়ের জন্য ঘুরতে আসে। আর তাছাড়া ইমরুল কায়েসদের তকদির বরাবরই খারাপ হয়। হঠাৎই ইমরুল কায়েসের চিন্তা চলে যায়, প্রাক-ইসলামিক যুগের কবি ইমরু আল কায়েস (বাংলায় যিনি ইমরুল কায়েস নামেই পরিচিত!) এর দিকে।
সে স্বগতোক্তি করে- ‘আহ ইমরু আল কায়েস! তার নামে নাম আমার। তার মতোই কি প্রেয়সীর বিষাক্ত প্রেমময় জামা পরিধানে মৃত্যু হবে আমার ভেতরের সুফি সত্তার’;

ভাবতে ভাবতে সাদা পায়জামায় কফির দাগ লাগা অংশটুকুতে চোখ যায় ইমরুল কায়েসের। নিজের মনেই আওড়ে ওঠে প্যালেস্টাইনের জাতীয়তাবাদী কবি মাহমুদ দারবিশের ‘কফি’ কবিতার শেষের কয়েকটি লাইন-

“…লিলকাহওয়াতি ওয়াফউলুল শাহরিয়ুন ফি ইসলাল জাকিরাতে
ওয়ালকাহুয়াতু কালহাবি ফালিলুন মিনহুলায় ওয়ারয়ে ওয়াকাফিরুন মিন হুলায় উশবা ওয়ালকাহওয়াত জিকরায়াত
জিকরায়াতি মান শারিবুহা ম্যায়ানা ফি মাকানিন মা মুসতাইন বিলহানিন।”

{স্মৃতিকে জাগানোর জাদু জানে কফি
প্রেমের মতোই- কফির সামান্য কিছুটা কেবল জল নয়, আর এর ক্যাফেইনের অনেকটাই মেশে না
এবং কফি মানে স্মৃতিপট।
যারা আমাদের সাথে বসে এটি খেয়েছিল, কোথাও না কোথাও তারা কফিতেই মিশে রয়।}*

দুই.
মেহেরের সাথে এক দশকের বেশি সময় পরে ফোনে কথা হলো। শ্রাবণ আবিষ্কার করলো- মেহের পাল্টায়নি। মেহের আবিষ্কার করলো শ্রাবণ পাল্টায়নি। অথবা এমন হতে পারে পুরনো প্রেম বহুদিন পর সামনে এলে, নি:সঙ্গতার কারণে মনে হয়, মনের কিছুই পাল্টায়নি- অবয়ব, সময় আর পৃথিবীটা ছাড়া- কিন্তু মানুষ তো বাস করে তার নিজের মনেই।

স্নিগ্ধাকে আনতে আগের রাতেই রওনা দিয়েছে জামিল। আর দীর্ঘদিন পর মেহেরকে মনে পড়ে তার ফোন নম্বর জোগাড় করেছিল শ্রাবণ। বিদেশ যাওয়ার আগে সামান্য বছর খানেক প্রেম ছিল। বিদেশ বিভুঁইয়ে শ্রাবণ আর মেহেরের প্রতি টান অনুভব করেনি। আউট অব সাইট- আউট অব মাইন্ড। ওদিকে মেহেরও আর অপেক্ষা করেনি। এটা তো পুরনো আমল নয়, একটাই ট্রেন চলবে লাইনে, কাজেই অপেক্ষা করতেই হবে! এখন একের পর এক ট্রেন আসতেই থাকে। ট্রেন যদি না থাকে তাহলে বাস থাকে, প্লেন থাকে। কাজেই শ্রাবণের জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর মেহের চড়ে বসেছিল অন্য ট্রেনে। না, না, ভুল হলো প্লেনে চেপে ছিল হয়তো!

জেলা সদরের ডাকসাইটে সেরা সুন্দরী ছিল সে। কাজেই গন্তব্যে যাওয়ার ব্যাপারে যে কেউ তার হাত ধরতে রাজি ছিল। শ্রাবণের বিদেশ সেটেল হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই মেহের বিয়ে করে ফেলেছিল এক মোটর বাইক ব্যবসায়ীকে। যেহেতু সে সুন্দরী ছিল, তাকে নিয়ে হিল্লি-দিল্লী হানিমুন, ব্যাংকক-পাতায়া, মালদ্বীপ-মালয়েশিয়া, কেরালা-কায়রো, ইউরোপ ট্যুর কিছুই বাদ রাখেনি মেহেরের বর। তাকে নিয়ে চালিয়েছে বন্ধুদের বাড়িদতে বাড়িতে হানা। গিয়েছে জমকালো পার্টিতে।

বছর সাতেক পর যখন অনেক ঘুরে ঘুরে দুজনেই কিছুটা ক্লান্ত হলো- তখন মেহের আর তার বর মিলে একটা বাচ্চা নেয়ার পরিকল্পনা করে ফেললো। সাত বছর পর বাচ্চার পরিকল্পনা মানে দাম্পত্য জীবনের অনেকটাই গুছিয়ে নেয়া।

বরের ব্যবসা তরতর করে বাড়ছিল। এদিকে শিশু আসবে বলে একটা খুশির আমেজও কাজ করছিল। বাচ্চাটা যথারীতি হলো। খুশিতে-ব্যস্ততায়, মিষ্টিতে, অভিনন্দনে, আপ্যায়নে আর স্বপ্ন নিয়ে কেটে গেল বেশ কয়েকটি দিন।

মাস চারেক পর মেহেরের ডান স্তন ফুঁড়ে হঠাৎ একটা ফোঁড়ার উদয় হলো। ডাক্তারের কাছে গেল এবং ডাক্তার তাকে জানিয়ে দিল জবাব- ওটা একটা ফোঁড়া নয়, বরং ক্যান্সার- স্তন ক্যান্সার। এক বছর কেমোর পর ডান স্তন হারালো মেহের। আর এর কিছুদিন পর আবিষ্কার হলো- মেহেরের বর আসলে তাকে নয়, এমনকি তার বাম স্তনকেও নয়, কেবলই ডান স্তনকেই ভালোবাসতো! সেটি যেহেতু নেই, কাজেই একসাথে দুজনের না থাকাই ভালো।

অবশ্য একেবারে নির্দয় নয় সে, মেহেরকে প্রচুর অর্থ দিল। আর পোলান্ডের ওয়ারশ শহরে থাকার বন্দোবস্তও করে দিল। যাওয়ার দিন বিমানবন্দরে দেখা করতে এসে- দুই বছর বয়সী মেয়েকে অনেক আদর করে মেহেরকে বললো- মেহের, থ্যাংক ইউ ফর কাইন্ড কোম্পানি।
এতোসব কথা শ্রাবণের সাথে এক রাতে হলো মেহেরের। দশ বছরের গল্প বলতে দশ ঘণ্টাও লাগেনি। শ্রাবণের মনে হলো মেহেরের বর নয়, মেহেরের সাথে অন্যায় করেছে আসলে সে নিজে।

মেহের একটা বিউটি শপে কাজ করে। করোনাভাইরাসের কারণে তার ছুটি ছিল বলেই এতো কথা বলতে পারলো। ইউরোপের অবস্থা ভয়াবহ। সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মেহের অবশ্য খুশি- চার বছরের মেয়েকে খুব সময় দিতে পারছে। মেয়ের নাম রেখেছে- তিথী।

ভিডিও কলে তিথীকেও দেখলো শ্রাবণ। ভাঙা ভাঙা পোলিশ শুনে প্রাণ খুলে হাসলো। দশঘণ্টার বেশি ফোনালাপ শ্রাবণ আর মেহেরের মধ্যে এর আগেও হয়েছে- প্রেমের শুরুতে সবারই এমনটা হয়। তবে এবারেরটা ফোনালাপটা হলো অন্যরকম। শ্রাবণকে ভিডিও কলে রেখে মেহের নানা কাজ সারলো। শ্রাবণও নানা কাজ সারলো। নেটওয়ার্ক প্রবলেমে যে দু-তিনবার ফোন কাটলো, সেটাও বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না। আবার সংযোগ হলো। মেহের আর তিথীর সাথে অনেকদিন পর একটা দারুণ প্রাণবন্ত সময় কাটালো শ্রাবণ।

মেহের বললো- জানো, ডিভোর্সের পরে একটা ফেইক অ্যাকাউন্ট করে তোমার সাথে যোগাযোগের খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু একটা বাচ্চা সমস্ত ফেইক অ্যাকাউন্টের জন্য জমানো সময় খেয়ে দেয়।

শ্রাবণকে মেহের জিজ্ঞাসা করলো তার বিয়ের কথা। শ্রাবণ স্নিগ্ধার কথা জানালো। তারপর বললো- দ্যাখো বিয়ে তো আমরা করিনি। একসাথে থাকবো বলে ঠিক করেছিলাম। এখন আমার বাচ্চা চাই, ওর হয়তো প্রয়োজন নাই। ফলে…পুরোটা না হয় আরেকদিন শুনো।

মেহেরের বাচ্চাটা একটা জলজ্যান্ত পরী। তাকে খুব হাত দিয়ে ধরতে ইচ্ছা করছিল শ্রাবণের। ভেতরে ভেতরে লুকিয়ে থাকা ‘বাপ’-টা তাকে পুড়িয়ে মারছিলো। সে কথা মেহেরকে বেশ কয়েকবার বললো। কিন্তু শ্রাবণ যেটা বলতে পারলো না সেটা হলো- মেহেরের স্তনশূন্য ডান বুকটাও একটু দেখতে ইচ্ছা করছিল।

কোনওদিন দেখা হয়নি এমন একটা মেয়ের সাথে হয়তো অল্প পরিচয়ের পর তার সম্মতিতে নুড চাওয়া যায়, কিংবা সুযোগ হলে বিছানাতেও যাওয়া যায়; কিন্তু পুরনো প্রেমিকা- যার সাথে এক দশক পর কথা বা দেখা- তাকে হুট করেই পুরনো দিনে ফেরত নেওয়া যায় না। এমনকি তার সবটা দেখা হলেও, সবটা জানা হলেও, তাকে হুট করে নগ্ন হতে বলা কঠিন।

মেহেরের এক স্তনশূন্য বুক দেখার ইচ্ছাটা গোপন রেখেই শ্রাবণকে ফোন ছাড়তে হয়েছিল। কেউ হয়তো স্তনের অভাবে ছেড়ে যায়, কেউ হয়তো ওই শূন্যস্থানেরই আকর্ষণে পড়ে।

তিন
সারারাত ছবিটবি তুলে সকাল ১১টার কোনোমতে কিছু একটা খেতে রেস্তোরাঁয় গিয়েছিল স্নিগ্ধা ও তন্দ্রা। ইমরুল কায়েস যখন কোণার টেবিলে বসে স্নিগ্ধার সাথে কথা বলবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল- তখন দুই বোন আসলে নিজেদের মধ্যে একটা গুরুগম্ভীর আলোচনা করছিল।
আগের রাতে স্নিগ্ধা একটা সিচুয়েশন দিয়ে তন্দ্রার কাছে জানতে চেয়েছিল- যে ছেলেটির সাথে মেয়েটি জঙ্গল পাড়ি দিচ্ছে, তার সাথেই দেওয়া উচিত- নাকি পরের দিন যে ছেলেটি আসবে- তার জন্য অপেক্ষা করা উচিত।

খিচুড়ি আর ডিম উল্টানো খেতে খেতে তন্দ্রাই প্রসঙ্গটা তুললো।
বললো- আপু আমার মনে হয় অবশ্যই নতুন কিছু ট্রাই করা উচিত। পুরানো জিনিস বা ব্যক্তির প্রতি মায়া জন্মালেও, যদি কেউ আগে থেকেই জানে এক সময় মায়া কাটাতেই হবে বা ছাড়তেই হবে, তাহলে নতুন কিছুই বেছে নেয়া উচিত। তাতে অন্তত সুখস্মৃতি আর মায়াগুলো বোঝা হয় না। যদিও আমরা অনিশ্চয়তাকে ভয় পাই, তবুও অনিশ্চয়তাতেই রয়েছে প্রকৃত সুখ। যেমন মৃত্যু অনিশ্চিত বলেই, জীবন এতো সুন্দর। প্রেমের পরিণতি অনিশ্চিত বলেই প্রেমের সময়টুকু মধুর।

এ উত্তর দেয়ার আগে তন্দ্রা জানতো- স্নিগ্ধা শ্রাবণকে চিরতরে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে তাকে রূপক আকারে গল্পটা বলেছে। তবু তার যেটা মনে হয়েছে, সেটাই সে বলে দিল।

ওদিকে স্নিগ্ধাও বুঝতে পারলো- শ্রাবণ আর তার সম্পর্কের প্রতীকি ব্যাপারটা বুঝেই তন্দ্রা বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দিচ্ছে। তখন তার একটু চাপ চাপ কষ্ট হলো। তন্দ্রার প্রতি মনের কোথাও একটা ছোট্ট তিক্ততা জন্ম নিল। তবে সেটা পরিমাণ এতোই ক্ষুদ্র যে তাৎক্ষণিকভাবে খোদ স্নিগ্ধাও একটা অস্বস্তি ছাড়া আর কিছু টের পেল না।

খাওয়া শেষ করে দুইবোন আবার কটেজে ফিরে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে স্নিগ্ধা বসেছিল আগের রাতের তোলা ছবি নিয়ে। কি সুন্দর, পায়রার মতো রয়েছে এখনো তার শরীর; অথচ মনটা! নিজের নগ্ন দেহ দেখতে দেখতে স্নিগ্ধা জীবনে এই প্রথম আবিষ্কার করলো- ধর্ষিত হওয়ার পর থেকে তার শ্রাবণকে নিয়ে তো বটেই, অন্য কোনোকিছু নিয়ে তার জীবনের কোনও লক্ষ্য নেই।

মানুষের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হচ্ছে তাকে সবসময়ই জীবনের কোনো না কোনো নতুন লক্ষ্য ঠিক করে এগোতে হয়। একটা গরুর, একটা চামচিকার, একটা মায়াহরিণের, একটা পেঙ্গুইনের- কিংবা প্রাণী জগতের আর কারও সম্ভবত প্রতিনিয়ত জীবনের লক্ষ্য ঠিক করা লাগে না। মানুষ লক্ষ্যহীন হলে তার সামনে থেকে মুছে যায় অলৌকিক পৃথিবীর সব শস্যভাণ্ডার, লুকিয়ে থাকা ঐশ্বর্য।

স্নিগ্ধার মনে হয়, তার জীবনটা একটা খুব ধীরে ডাউনলোড হতে থাকা মুভি। পিটপিট করে কয়েক বাইট ডাউনলোড হচ্ছে, আবার থামছে… উফ কি ক্লান্তিকর!

স্নিগ্ধা আবারও তার নুড ও সেমি নুড ছবিগুলো দেখে। তারপর তার মনে পড়ে সত্তুর ও আশির দশকের এক পর্নো সিনেমার নায়িকার কথা। ওই সময়টাকে পর্নো ইন্ডাস্ট্রির গোল্ডেন এইজ বলা হয়। আর সেই ইন্ডাস্ট্রির নম্বর ওয়ান নায়িকা ছিল কে পারকার। শ্রাবণই তাকে চিনিয়েছিল। আচ্ছা সেই নায়িকা এখন কোথায়?

ইন্টারনেটে ‘কে পারকার’ লিখে সার্চ দিয়ে খুঁজে বের করে স্নিগ্ধা। আশ্চর্য মহিলা এখনও বেঁচে আছেন! আর সে এখন আধ্যাত্মিক শিক্ষার গুরু হয়ে উঠেছে।

স্নিগ্ধা বেশ কয়েক জায়গায় তার ইন্টারভিউ পড়ে। লস অ্যাঞ্জেলসে একাই থাকেন। কোনও পরিবার সন্তান নেই। ব্রিটেনে জন্ম এই নায়িকা সম্ভবত একুশ বছর বয়সে আমেরিকা চলে আসে। তারপর পর্নো মুভিতে জড়িয়ে যায়। অন্যান্য পর্নোতারকাদের চেয়ে বেশি বয়সে সিনেমা করেও, ইন্ডাস্ট্রিতে নাম্বার ওয়ান ছিল কে পারকার।

মজার ব্যাপার হলো- সে যতজনের সাথে ডেইট করেছে তাদের সবাই কমবেশি পর্নো ইন্ড্রাস্টির সাথে জড়িত। তবে কে পারকার জড়াননি কারো সাথে। ইন্টারনেটে অনেক সার্চ করার পরও কে পারকারের কোনও পারিবারিক পরিচয় পাওয়া গেল না। আশ্চর্য গোপনীয়তায় যেন তুলে রাখা হয়েছে সব। এই ভদ্রমহিলার পরিচয় ইন্টারনেটে দেওয়া- মেটাফিজিক্যাল কাউন্সেলর এবং মেন্টর হিসেবে। এখন কে পারকার মানুষকে বাঁচতে, তাকে মোটিভেট করে পুনরায় জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত। ২০০১ সালে তার একটা আত্মজীবনী বের হয়- Taboo: Sacred, Don’t Touch.

স্নিগ্ধা বইটার নাম আমাজনে সার্চ দেয়। দাম দেখে দমে যায়- দুইশ ডলার দেখাচ্ছে।

দাম দেখার পরপরই তার চিন্তা হয় আচ্ছা একজন পর্নো স্টারের পেছনে ছুটেছে কেন সে! তারপর মনে হয়, আসলে সে জামিলের সামনে নিজেকে খোলামেলা আবেদনময়ী হিসেবে তুলে ধরার পর কোথায় যেন একটা বাঁধো বাঁধো ব্যাপার ঠেকছে। মনের কোথাও একটা সংস্কার পীড়া দিচ্ছে। হয়তো কোনও পর্নোস্টারের শরীর ও মন নিয়ে ব্যাখ্যা তাকে কিছুটা প্রশান্তি দিবে বলে অবচেতন মন কে পারকার নিয়ে পুরো মাথাকে ব্যস্ত করে রেখেছে। সত্যি তো একজন পর্নো স্টার নারী কিভাবে শরীর এবং মনকে আলাদা রাখে। তার প্রেমিকের জন্য শেষ পর্যন্ত সে কী জমিয়ে রাখে? এই যে কে পারকার যাদের সাথে প্রেম করেছে, তারা তো তার সাথে অজস্রবার সঙ্গম করেছে বিনা প্রেমেই। কিংবা তাদের সাথে প্রেম করা অবস্থাতেই কে পারকারের অজস্রবার অন্য কারো সাথে সেক্স করা লেগেছে। তাহলে মানুষে মানুষে প্রেমের মূল জায়গাটা কোথায়।
স্নিগ্ধা সিদ্ধান্ত নেয় কে পারকারের আত্মজীবনীটা সে কিনবে। তারপর হঠাৎই স্নিগ্ধা ঘুমিয়ে পড়ে।

ওদিকে, তন্দ্রাও ফ্রেশ হয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে করোনা মহামারীর সবশেষ আপডেইট দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সে স্বপ্ন দেখে- পৃথিবী এক অদ্ভুত মহামারীর কবলে পড়েছে। সেই অসুখটা খুবই ছোঁয়াচে এবং এ অসুখ হলে মানুষের খুব সুড়সুড়ি অনুভব হয়। সে হাসতে হাসতেই মারা যায়…। তন্দ্রা বাড়ির সবকিছু বন্ধ করে, অন্ধকার করে বসে আছে। সে হাসতে হাসতে মরতে চায় না!

ঘুমের মধ্যেই তন্দ্রা ভাবতে থাকে, কি অদ্ভুত অসুখ। মানুষ সারাজীবন হাসতেই চায়; অথচ এখন সবাই হাসির মহামারী থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে! মৃত্যুভয়ের কাছে হাসিখুশি জীবন কি তাহলে কিছুই নয়? অথচ হাসতে হাসতেই লোকে মুক্তির জন্য যুদ্ধ করে প্রাণ দেয়!

***

জামিল সাজেক পৌঁছায় বিকাল পাঁচটায়। কটেজের ঠিকানা তার কাছে ছিল। সেটি খুঁজে বের করতে করতে আরও মিনিট দশেক লাগে। এর মাঝে স্নিগ্ধার ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে। কিন্তু ধরেনি। স্নিগ্ধা আসলে ফোন সাইলেন্ট করে ঘুমিয়েছিল। কটেজ ম্যানেজারের সাথে জামিলের বাইরেই দেখা হয়, কোথায় যেন যাচ্ছিল!

তার কাছে দুজনের কথা জিজ্ঞাসা করায়- সে দেখিয়ে দেয় রুম। বলে, কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসছে। তন্দ্রার রুম আগে ছিল। জামিল সেটাতেই নক করে। বেশ কিছুক্ষণ নক করার পর তন্দ্রা ঘুম ঘুম চোখে দরজা খোলে।

জামিল বিস্মিত হয়ে যায়। সাদা একটা ট্যাংটপ পরা, খাকি হাফপ্যান্ট কোনওমতে উরু ঢেকেছে। ব্রা নেই বলে স্তনের ছোট্ট নিপলগুলোর ডানদিকেরটা আবছা আভাস দিচ্ছে। আর বামদিকেরটা ঢাকা কালো চুলে। কারো কারো কথা যেন ঠোঁটের ফোটে, কোনও কণ্ঠস্বর লাগে না। এ মেয়েটার ঠিক তাই।

প্রথম দেখাতেই মেয়েটার প্রেমে পড়ে যায় জামিল। কামে নয়, স্রেফ প্রেমে। বুকের মধ্যে কিছু একটা বলে উঠে- এর জন্যই তুমি হয়তো অন্য কোথাও জড়াওনি।

জামিল নার্ভাস বোধ করে। তন্দ্রা খুব ঘুম জড়ানো অথচ সাবলীল ভঙ্গিতেই বলে- আপনি নিশ্চয়ই জামিল ভাই। আপু আপনার কথা বলেছে। দাঁড়ান আপু পাশের রুমেই।

বলতে বলতে তন্দ্রার বামদিকের চুলও সরে যায়। সে রুম থেকে বাইরের বেরোনোর সময় সুগঠিত দুই স্তনের দুটো গোলাপি নিপলই বিকালের সূর্যের আলোয় ফুটে উঠে। শ্রাবণ আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করে, কোনও কাম নয়, বরং বুকের কোথাও এই মেয়েটাকে একটা আগলে রাখার ফিলিংস তৈরি হচ্ছে।

স্নিগ্ধা ভাবির টানেই এতোদূর আসা। অথচ সে কিনা এসেই প্রেমে পড়লো এই মেয়েটার!

(চলবে)

*স্বল্প আরবি বিদ্যা এবং ইংরেজি থেকে মাহমুদ দারবিশের কবিতাটির অনুবাদ অধমের করা।

*নানা ঘটনায় লেখাটায় একটা গ্যাপ গেছে। তাছাড়া স্টোরি টেলিংটাও একটু পরিবর্তনের দরকার ছিল। বেশ খানিকটা পড়তেও হয়েছে। কাজেই দেরি হয়ে গেল।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধউল্লাস এক স্বপ্ন সাধের – কবি কাজী আতীক এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে জাতীয় তৃণমূল প্রতিবন্ধী সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে