পুনর্জনম বা পুনরুত্থান

0
722
Mahabub Khandakar

খন্দকার মাহাবুবুর রহমান : পুন=মানে আবার? জনম=মানে জন্ম? পুনঃ+উত্থান=পুনরুত্থান? উত্থান=মানে সঞ্জীবিত বা জাগ্রত? এক কথায় আবার জীবিত বা জাগ্রত করা বোঝায়? পুনরুত্থান এক চলমান পক্রিয়া?
মৃত্যুর পর কেয়ামতের পূর্বেই একটি আত্মার, কর্মফল অনুসারে তার উপযুক্ত পরিবেশে একাধিকবার পুনরুত্থান ঘটে? নাকি দুনিয়া ধ্বংসের পরেই পুনরুত্থান ঘটবে? বিষয়টা পুরোটা কিরকম?

এই পুনরুত্থান একটি চলমান পক্রিয়া? পবিত্র কোরআনে আছে “তোমরা মৃত ছিলে, আমি তোমাদের জীবিত করেছি” সৃষ্টিহীন অবস্থাকে কখনও মৃত বলা যায় না? মানুষ আত্মার বাহন? এই আত্মা যখন দেহ থেকে বের হয়ে যায় তখনই কেবল “মৃত” শব্দটা ব্যবহার করা যায়? সৃষ্টিই যদি না হয় তবে মৃত বলার যুক্তি আছে?

পবিত্র কোরআনে আছে, প্রত্যেক নফসকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে! অর্থাৎ প্রত্যেককেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে তথা মরতে হবে। সুতরাং এই আয়াত থেকেই কি বোঝা যায়? মারা যাওয়ার ব্যাপারটা জন্মানোর পরে হয়? যে ব্যক্তির এখনও জন্মায়নি সে আবার মৃত থাকে কিভাবে?

আয়াতে একই আত্মার তিনবার জন্মানোর কথা বলা হয়েছে? এটাই পুনরুত্থান? আমরা কি বিশ্বাস করি যে মৃত্যুর পর পুনরুত্থান হবে? আমরা বিশ্বাসের একটা যায়গায় ভুল করি? শুধুমাত্র কেয়ামতের সময় পুনরুত্থান হবে? এই পুনরুত্থান আসলে একটি চলমান পক্রিয়া? আত্মা ও জীবন বা প্রান এক? আত্মা কি অজৈব, অশরীরী ও সূক্ষ ও চৈতন্যময় শক্তি?

তার প্রকাশ জীবন, প্রান ও স্থুল পার্থিব চতুর্ভূতের জগতে? চতুর্ভুত ছাড়াও আত্মা আপনা আপনি শূন্যে ভ্রমন ও বিরাজ করতে পারে? আত্মা একই সময় ভৌতিক দেহের ভেতরে ও বাহিরে যে কোন সময় বিরাজ করতে পারে?
আগুন, পানি, মাটি ও বাতাস পরিবর্তনশীল বা ধংসশীল? আত্মার কিছুই হবে না? আত্মা অপরিবর্তনশীল অভিভাজ্য অভঙ্গুর অবিনশ্বর অক্ষয় ও চিরন্তর? এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আসমানী কেতাব পর্যালোচনা শুরু করি।

“কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ। অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন, আবার মৃত্যু দান করবেন। পুনরায় তোমাদেরকে জীবনদান করবেন। অতঃপর তারই প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে।” [ সুরা বাকারা ২:২৮ ]

আল্লাহ প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি পুনরায় সৃষ্টি করবেন। এরপর তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। [ সুরা রূম ৩০:১১ ]

তিনি মৃত থেকে জীবিতকে বহির্গত করেন জীবিত থেকে মৃতকে বহির্গত করেন, এবং ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। এভাবে তোমরা উত্থিত হবে। [ সুরা রূম ৩০:১৯ ]

তারপর, মরে যাবার পর তোমাদিগকে আমি তুলে দাঁড় করিয়েছি, যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নাও। [ সুরা বাকারা ২:৫৬ ]

এ ব্যাপারে যে, তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের মত লোককে নিয়ে আসি এবং তোমাদেরকে এমন করে দেই, যা তোমরা জান না। [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৬১ ]

তোমরা অবগত হয়েছ প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে, তবে তোমরা অনুধাবন কর না কেন? [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৬২ ]
তারাই মানে, যারা শ্রবণ করে। আল্লাহ মৃতদেরকে জীবিত করে উত্থিত করবেন। অতঃপর তারা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। [ সুরা আন’য়াম ৬:৩৬ ]

তোমাদের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি মাত্র প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের সমান বৈ নয়। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন। [ সুরা লুকমান ৩১:২৮ ]

বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি, তাদের মধ্যে কার মন্দ প্রতিফল রয়েছে আল্লাহর কাছে? যাদের প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন, যাদের প্রতি তিনি ক্রোধাম্বিত হয়েছেন, যাদের কতককে বানর ও শুকরে রূপান্তরিত করে দিয়েছেন এবং যারা শয়তানের আরাধনা করেছে, তারাই মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতর এবং সত্যপথ থেকেও অনেক দূরে। [ সুরা মায়েদা ৫:৬০ ]

তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে। অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাদের জন্যে আট প্রকার চতুষ্পদ জন্তু অবতীর্ণ করেছেন। তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে। তিনি আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা, সাম্রাজ্য তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ? [ সুরা যুমার ৩৯:৬ ]

শপথ জনকের ও যা জন্ম দেয়। [ সুরা বা’লাদ ৯০:৩ ]

আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ। [ সুরা আরাফ ৭:১৭৯ ]

যেমন, আমি পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রসূল, যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না। [ সুরা বাকারা ২:১৫১ ]

আর যে মৃত ছিল অতঃপর আমি তাকে জীবিত করেছি এবং তাকে এমন একটি আলো দিয়েছি, যা নিয়ে সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে। সে কি ঐ ব্যক্তির সমতুল্য হতে পারে, যে অন্ধকারে রয়েছে-সেখা ন থেকে বের হতে পারছে না? এমনিভাবে কাফেরদের দৃষ্টিতে তাদের কাজকর্মকে সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে। [ সুরা আন’য়াম ৬:১২২ ]

তারা দুইবার পুরস্কৃত হবে তাদের সবরের কারণে। তারা মন্দের জওয়াবে ভাল করে এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। [ সুরা কাসাস ২৮:৫৪ ]

বলুন হে ইহুদীগণ, যদি তোমরা দাবী কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু-অন্য কোন মানব নয়, তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও। [ সুরা জুম’য়া ৬২:৬ ]
তারা নিজেদের কৃতকর্মের কারণে কখনও মৃত্যু কামনা করবে না। আল্লাহ জালেমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। [ সুরা জুম’য়া ৬২:৭ ]

বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে, অতঃপর তোমরা অদৃশ্য, দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন সেসব কর্ম, যা তোমরা করতে। [ সুরা জুম’য়া ৬২:৮ ]

মনের আঙিনায় উপরের ঐ প্রশ্নগুলোর উত্তরের সন্ধান যখন আমি করি, তখন এই আয়াতগুলো সঠিকভাবে পর্যালোচনা করার চেষ্টা করি, তখনই আমি আশ্বস্ত হই।

Advertisement
উৎসMahabub Khandakar
পূর্ববর্তী নিবন্ধচলনবিলে কৃষকের জমির ধান কাটলেন জেলা প্রশাসক
পরবর্তী নিবন্ধগুরুদাসপুর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান কাটা শ্রমিক প্রেরণ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী উপহার প্রদান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে