বর্ণরাজা -(সূচনা পর্ব,ভাষণ পর্ব,ভ্রমণ পর্ব,কবির আগমন পর্ব)- কামাল খাঁ’র ছড়া গুচ্ছ

0
411
www.natorekantho.com

বর্ণরাজা-কামাল খাঁ

(সূচনা পর্ব)

এক যে আছে বর্ণরাজা অচিনপুরে বাস,
এই জগতের বর্ণসকল সেই রাজারি দাস।
কিন্তু রাজা কোথায় থাকেন কেউ রাখে না খোঁজ,
তবু রাজার আদেশ মেনে রাজ্য চলে রোজ।
কী উপায়ে করেন শাসন, কেমন নিয়ম কানুন?
সে সব খবর দিচ্ছি আমি বিস্তারিত জানুন।

বর্ণ থেকে বাক্য হয়ে শব্দ গঠন হয়,
শব্দগুলো লেখার ভেতর নিরব বসে রয়।
এসব কিছুর মুলে আছে রাজার আদেশ জারি,
ভাষার দে‌শে হুকুম চলে সব ক্ষমতা তারি।
দাঁড়ি-কমা সেমিকোলন শৃংঙ্খলার এক দেশ,
চলুন দেখি তার ভেতরে কেমন পরিবেশ।

সি়ংহাসনে বর্ণরাজা আসেন যখন সেজে,
চতুর্দিকে সৈন্যঘিরে বাজনা ওঠে বেজে।
আসেন রাজা ধীরে ধীরে পাশেই সেনাপতি,
সান্ত্রী সেপাই উজির নাজির দক্ষ সবাই অতি।
রাজা-রাণী সবাই হাজির একে একে সব,
রাজমহলে সাজ-সজ্জায় মধুর কলরব।

সর্বপ্রথম বাদ্যবাজে চলে ভাষার গান,
নিরবতায় শ্রদ্ধা জ্ঞাপন সব শহিদের দান।
তাদের প্রতি প্রথম থাকে শ্রদ্ধা নিবেদন,
এর পরে সব একে একে শোনেন আবেদন।
রাজ্যসভায় বর্ণরাজা করেন গ্রহন আসন,
একটু পরে দাঁড়িয়ে রাখেন নাতিদীর্ঘ ভাষণ।

বর্ণরাজা

( ভাষণ পর্ব)

বর্ণরাজা মঞ্চে এলো ফুলের জামা গা’য়,
দরবারে তার উপস্থিতি তালি বেজে যায়।
শুরু করে মহান রাজা ছড়ায় লেখা ভাষণ,
তিল ধারনের ঠাঁই মেলেনা শূন্য নেই আর আসন।
সবার প্রিয় রাজার বাণী শুধতে সবাই অধীর,
হৃদয় দিয়ে ধারন করেন কর্ণ যাদের বধির।

হাসিমুখে ছড়ান তিনি বাক্য-বিনিময়,
রাজার কথা হয় না এমন মিষ্টি চিনিময়।
ভাষার মাসে সবাই থাকুক শব্দ-সচেতন,
বাক্যগুলো সঠিক থাকুক কাটুক অচেতন।
ইচ্ছে করে আনছে যারা কথায় অনাচার,
প্রচলিত আইনে হবে কঠিন বিচার তার।

হাসি শব্দ খুশি শব্দ আনন্দ উচ্ছ্বাস,
আরো যতো শব্দ ছড়ায় হর্ষ ও উল্লাস।
সবাই যেনো সুস্থ থাকে থাকে অবিচল,
থাকতে হবে সদা সজাগ কঠিন মনোবল।
দেশের ভেতর শব্দ-দূষণ করতে হবে দূর,
শব্দ যাতে না হয় কারণ বেদনা-বিধুর।

কিছু শব্দ ভাঙতে হবে আনতে হবে নব,
উপায় আমি বলে দিবো আস্তে ধীরে ক’ব।
ভাষণ দিয়ে রাজামশাই আসন করেন খালি,
বাদ্যবাজে মুহুর্মুহু উল্লাসে করতালি।
প্রজাবর্ণ ফিরে ঘরে রাজার আদেশ নিয়ে ,
স্বপ্ন সবার দেশ গড়িতে মায়ের ভাষা দিয়ে।

বর্ণরাজা

( ভ্রমণ পর্ব )

বর্ণরাজা আগে আগে পিছনে যায় সেনা,
ভ্রমণকালে খুব সাধারণ বেশ-ভূষা লাগেনা।
পদযোগে দীর্ঘ বহর পাশেই সেনাপতি,
সবাই মিলে নজর রাখে রাজার না-হয় ক্ষতি।
কেমন রাজার দেশ-জনপদ ঘুরেফিরে দ্যাখেন,
পাশে রাজার মূখ্য সচিব অবস্থা সব লেখেন।

বিষাদভরা শব্দগুলোর পাশে রাজা দাঁড়ান,
তারপরে খুব দরদ নিয়ে হাতটা তিনি বাড়ান।
হতচ্ছাড়া শব্দগুলো কোথায় তারা থাকে,
নিজেই রাজা আসতে কাছে ইশারাতে ডাকে।
মাটির ঘরে ঢুকেন রাজা পাতার প্লেটে খান,
দুস্থ কারুর খবর পেলে দ্রুতই ছুটে যান।

গ্রামে গেলে মজেন তিনি সিংহাসনও ভুলেন,
ঘাসে হাঁটেন খালি পায়ে নকশি জুতো খুলেন।
নানান ফুলের প্রজাপতি ফড়িং ধরেন রোজ,
জলে নামেন সাঁতার কাটেন করেন পাখির খোঁজ।
আসর বসান মাঠে গানের দু’হাতে দেন তালি,
পাশে এসে বসেন রাজার বন্ধু বনমালি।

শিশুর সাথে খেলায় মেতে অনেক সময় পার,
ফেরার কথা কেউ বলেনি রাজাকে একবার।
সেনাপতি কাছে এসে ফেরার কথা বলেন,
বর্ণরাজা বলেন হেসে- যাবেন যখন চলেন।
অনেকখুশি সঙ্গে নিয়ে বাড়ির দিকে সব,
বাড়ির কথায় সবার মনে পাখির কলরব!

বর্ণরাজা

( কবির আগমন পর্ব )

বর্ণরাজার সাথে যখন কবির দেখা হয়,
দু’য়ের মনে কী যে দারুণ মিষ্টি হাওয়া বয়।
ফুলেরা সব হাসতে থাকে আনন্দে খিলখিল,
দীঘি ভরা শান্ত জলও হাওয়াতে ঝিলমিল।
জলে হাওয়ায় কানাকানি কবির আগমনে,
খুশিতে সব নাচানাচি লাফায় একেক জনে।

কবির হাতে বর্ণ-বীজে অঙ্কুরিত চারা,
হাতের ছোঁয়ায় জীর্ণ-নদী বইতে থাকে ধারা।
কবির কলম বর্ণ মিলায় বুনে ভাষার জাল,
বাক্য দিয়ে এই জগতের ধরেন সকল কাল।
মৃত শাখায় কবি যেন ফোটান শতফুল,
সেই কারণে আজকে সবাই এমন হুলুস্থূল।

রাজমহলে কবির বরণ সম্মান ও আদর,
পরিয়ে দিলেন কবির গায়ে অপূর্ব এক চাদর।
বর্ণগুলো স্থবির থেকে ভাবে-ভাষায় ভরা
যত্নে কবির পুষ্প-পত্রে ভুবন মনোহরা।
কবি জাগে সবার আগে দুঃখে ও দূর্যোগে,
সব মানুষের মনের কথা কাব্য-অভিযোগে।

বর্ণরাজার পাঠাগারে কবির পরিচয়,
সোনার ফ্রেমে বাধা ছবি ওপর দিকে রয়,
কবির এমন খ্যাতি বিশেষ কারণটা কি তার?
বিস্তারিত লিখেন রাজা পড়েন বারম্বার,
হাওয়া থেকে আওয়াজ পেয়ে বর্ণে করেন ধারন,
প্রথম লেখায় ভাষার জীবন কবি মূখ্য কারণ।

( চলবে )

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“বিস্মৃত পথ” কবি সুপ্তি জামান‘এর কবিতা (ভিডিও সহ আবৃত্তি)
পরবর্তী নিবন্ধll চাঁদার হাট ও বারোভাজার কাহিনি ll-অমিতকুমার বিশ্বাস

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে