বড়াইগ্রামের চান্দাইয়ে বিপন্ন ছোট খাটাশ উদ্ধার ও অবমুক্ত

0
578

বড়াইগ্রামের চান্দাই দেখা মিলল বিপন্ন প্রজাতির ছোট খাটাশের; করা হয়েছে অবমুক্ত

নাটোর কণ্ঠ, বড়াইগ্রাম:
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় দেখা মিলল বিপন্ন প্রজাতির ছোট খাটাশের। যদিও এ প্রাণীটি এই এলাকার মানুষের কাছে কৈলঘুট এবং বাঘডাশা নামে বেশ পরিচিত। আবার কেউ কেউ প্রাণীটিকে বলছেন মেছো বাঘ। তবে এদেশে ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের রক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকার তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

শনিবার (০২ জানুয়ারি) সকালে বিপন্ন প্রজাতির এই ছোট খাটাশ নামক প্রাণীটিকে উপজেলার চান্দাই এলাকার উত্তরপাড়া বিলে অবমুক্ত করা হয়েছে।

রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও স্বপ্নচূড়া ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী জানান, বিপন্ন প্রজাতির ছোট খাটাশ বা কৈলঘুট নামে পরিচিত এই প্রাণীটি শুক্রবার দুপুরে উপজেলার চান্দাই গ্রামের মরহুম হোসেন মোল্লার বাড়ির একটি ঘরে ঢোকে। প্রাণীটি দেখে বাড়িতে অবস্থানরত লোকজন মেছো বাঘ ভেবে ভয়ে চিৎকার শুরু করে। চিৎকার শুনে পার্শ্ববর্তী লোকজন এসে প্রাণীটিকে একটি ঘরে আটকে রাখে। পরে আমাদের উপস্থিতিতে ঐ ঘর থেকে রিপন নামের এক যুবক প্রাণীটিকে ধরে খাঁচায় ভরে। এসময় গ্রামের প্রায় ৩ থেকে ৪শতাধিক উৎসুক জনতা প্রাণীটিকে দেখতে ঘটনাস্থলে আসে। প্রাণীটিকে বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শে শনিবার সকালে চান্দাই নদীপাড়ের জঙ্গলে অবমুক্ত করা হয়েছে।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. উজ্জল কুমার কুন্ডু জানান, বিপন্ন প্রজাতির ঐ প্রাণীটির নাম ছোট খাটাশ। প্রাণীরটি এখন দেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই প্রাণীটির আর দেখাই মেলে না। ছোট খাটাশ গাছে চড়তে ওস্তাদ। মাটিতেও সমান সচল, ভালো দৌড়বিদ এবং অল্প জায়গায় আত্মগোপনে পারদর্শী। ছোট খাটাশ ‘গন্ধগোকুল’ নামেও এলাকাভেদে পরিচিত। ইংরেজি নাম Small indian civet। বৈজ্ঞানিক নাম Viverlculla indica। ওজন তিন থেকে পাঁচ কেজি। শরীরের মাপ লেজ বাদে ৯০ থেকে ৯৩ সেন্টিমিটার, লেজ ৩০ সেন্টিমিটার।

তিনি জানান, ছোট খাটাশের পশ্চাদ্দেশে বাড়তি একটা সুগন্ধি গ্রন্থি আছে। দুর্গন্ধি গ্রন্থি তো আছেই। এরা নিশাচর প্রাণী। বাঁচে ১০ থেকে ১৫ বছর। বয়স ৮-৯ বছর হলে ওজন বেশ বাড়ে। আকারে ছোট হলেও খাদ্যতালিকা এদের বিশাল। প্রায় সব ধরনের ফল, বিভিন্ন ছোট প্রাণী ও পতঙ্গ, তাল-খেজুরের রস ইত্যাদি। নিজেরা গর্ত করে আশ্রয়স্থল বানায় এবং সেখানেই বাচ্চা প্রসব করে। ছানারা জন্ম নেয় চোখ খোলা অবস্থাতেই। বাদামি শরীরে এদের ছাই ও হালকা হলুদাভ আভা থাকে। পিঠের ওপর ও দুই পাশে টানা পাঁচ-ছয়টি বাদামি কালো রেখা। শরীরের উভয় পাশে গোল গোল একই রঙের বুটি আঁকা। বয়সভেদে লেজে পাঁচ-সাতটি চওড়া বলয় থাকে। কান থানকুনি পাতার মতো। চোখ দুটি সদ্য খোসা ছাড়ানো পাকা বৈচি ফলের মতো। ঘাড়ে দুটি ও গলায় তিনটি কালো রেখা আছে।

ডা. উজ্জল কুমার আরও জানান, শৈশব-কৈশোরে প্রাণীটির সঙ্গে দেখা হতো প্রায় নিত্যই, আজ আর ওদের দেখাই পাওয়া জায়না বলতে গেলে। প্রাণীটিকে আমার পরামর্শে উপজেলার চান্দাই এলাকার জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধউত্তরা গণভবন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ও প্রত্যাশা – সুখময় রায় বিপলু
পরবর্তী নিবন্ধসিংড়ায় মেয়র প্রার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস প্রচারাভিযান শুরু করলেন বঙ্গবন্ধুর সমাধি জিয়ারতের মধ্য দিয়ে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে