“রাবেয়া বসন্তে “- মৃন্ময় চক্রবর্তী’র অনুগল্প

0
320
কবি এনকে

রাবেয়া বসন্তে ।। মৃন্ময় চক্রবর্তী

এই বটের তলায় দাঁড়ালি হাওয়া যেদিক পানে ছোটে সেদিকি সাধু ভোলাচাঁদের মঠ ছেলো। এই বট কতদিনের? তা কে বলতি পারে। পাঁচশো বছর হবে! আমার দাহুজুর মনিরুদ্দিন পুরকাইত সাধুর ভক্ত হইছেলো। সে থেকেই আমরা ফকির। এখানে কি কোনো নদী ছিল? লদী ঠিক লয়, দ ছেলো একটা। লোকে বলে রাবেয়ার দ। মাঘ পুন্নিমায় এসো, আমি এখানে রাবেয়া বিবির গান দিই। সাধু ভোলাচাঁদের গল্প লোকে ভুলে গেছে মনে হয়। আপনার কাছে না এলে জানাই হত না। তা ভুলে গেচে একপোকার। সাধু আসলে হুই মাঠের ভেতর মঠ বানিয়ে থাকত। তার ধর্ম ছেলো সহজ। সে বলত ঈশ্বরের আবার জাত কি। গান বাঁধত আর গাইত। আমার দাহুজুর সেই ডাকে সাড়া দে পেথম শিষ্য হল তার। তারপর রাবেয়া। রাবেয়া? খুব দুঃসাহস ছিল তার নিশ্চই। তা বলা যায়। হাজি সোভানের বউ। তার সঙ্গে আসলে ভোলাচাঁদের আসনাই ছেলো। লুকিয়ে রাতের বেলা রোজ মঠে যেত বিবি। শোভান একদিন জানতি পারে। সে জমিদার দরপো চৌধুরীরে নালিশ করে। তারপর এক অমাবশ্যার রাতে জমিদারের পাইক আর শোভানের দলবল ভোলাচাঁদ আর রাবেয়াকে খুন করে দ-য় পুঁতি দেয়। মঠ ভেঙে মিইশে দেয় মাটিতে। ওই যে ঢিপি, ওটাই সেই মঠ। খুব ভয়ানক কাহিনী। তা বটে। মাঠে ধানের নাড়ার খোঁচা মাড়িয়ে নুর আলম আর লোকগবেষক অনুপম কর্মকার এগিয়ে চলে দহের দিকে। হাওয়ায় বাতাবির মিষ্টি সুবাস। বসন্ত এসেছে। সামনে তাকাতেই অনুপম দেখতে পায় ঢিপির উপর একটি মেঘছোঁয়া সুন্দর গোলাপি রঙের মঠ। মঠের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাধু ভোলাচাঁদ, আর বাগানের ফুলগাছে সাদা করবী তুলছে তার স্ত্রী রাবেয়া।

কলকাতা,ভারত।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“মিথিলা সংক্রান্ত জটিলতা-৬”-সালেহীন বিপ্লবের কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধ“সমাধীক্ষেত্র ” – মনির জামানের কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে