রাসূল (সা.) অবমাননার পরিণাম ও শাস্তি: মুসলমানের করণীয়: রাজু আহমেদ

0
289

রাসূল (সা.) অবমাননার পরিণাম ও শাস্তি: মুসলমানের করণীয়: রাজু আহমেদ

আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে রাসূল প্রেরণ করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ব মানবগোষ্ঠীর জন্য সর্বশেষ রাসূল। তিনি সকল জনগোষ্ঠীর জন্য প্রেরিত নবী। আরবী, অনারবী, সাদা-কালো নারী, পুরুষ সবার জন্য তিনি নবী ও রাসূল। তিনি সকল নবী ও রাসূলেরও নেতা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

অবশ্যই আল্লাহ মুমীনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াত সমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল।(সূরা আলে ইমরানঃ ১৬৪)

বর্তমানে বিভিন্নভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবমাননা করা হচ্ছে, অথচ আমরা জানি না যে, এর পরিণাম কত ভয়াবহ। এ বিষয়ে আমাদের সঠিক জ্ঞান থাকা খুবই জরুরী। আলোচ্য প্রবন্ধে রাসূলুল্লাহ সা. এর অবমাননার পরিণাম ও শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

রাসূলু (সা.)এর সম্মান ও মর্যাদাঃ

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ তা‘য়ালা নির্ধারণ করেছেন। তাই ইচ্ছা করে তার মর্যাদা কেউ বাড়াতে বা কমাতে পারবে না। তারা নবী (সা.) নিয়ে যতই কটূক্তি এবং অবমাননা করেছে আল্লাহ ততই তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। আল্লাহ্ বলেন

আর আমরা আপনার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি। (সূরা আল-ইনশিরাহ-৪)।
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের আযানে বিশ্বব্যাপী মসজিদে মসজিদে তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। মুয়াজ্জিন ঘোষণা দিচ্ছে,

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।

নিম্নে তাঁর সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো…

১। উত্তম চরিত্র ও মাধুর্যপূর্ণ আচরণের অধিকারী
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন উত্তম চরিত্র ও মাধুর্যপূর্ণ আচরণের অধিকারী। এ বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহ তা‘য়ালা প্রশংসা করে বলেন
আর অবশ্যই তুমি মহান চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। (সূরা আল-কালামঃ ৪)।
অনুরূপভাবে আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
নিশ্চয় আমি মহৎ চারিত্রিক গুণাবলীর পূর্ণতা দান করার উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়েছি।(সুনান বায়হাকীঃ ২০৫৭১)

২। তিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ,

আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শুধু মানবমণ্ডলী নয় সকল সৃষ্টিকুলের জন্যই রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
আর আমি তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্যে কেবল রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।(সূরা আম্বিয়াঃ ১০৭)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

আবু সালেহ বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডেকে বলতেন, নিশ্চয় আমি উপহার স্বরূপ প্রদত্ত রহমত বিশেষ। (মুসতাদরাক লিল-হাকিমঃ ১০০)

৩। তিনি শেষ নবী সা.

তাঁর বৈশিষ্ট্যের অন্যতম একটি দিক হচ্ছে, তিনি হচ্ছেন নবী পরস্পরা পরিসমাপ্তকারী-শেষ নবী। তারপর আর কোনো নবী আসবেন না। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেন,

মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আর আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।(সূরা আল-আহযাবঃ ৪০)

৪। সকল নবী-রাসূলদের উপর তাঁকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে

যুগে যুগে যেসব নবী ও রাসূল আগমন করেছেন তাদের উপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

ছয়টি দিক থেকে সকল নবীদের উপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। আমাকে জাওয়ামি‘উল কালিম তথা ব্যাপক অর্থবোধক সংক্ষিপ্ত বাক্য বলার যোগ্যতা দেওয়া হয়েছে, আমাকে ভীতি (শত্রুর অন্তরে আমার ব্যাপারে ভয়ের সঞ্চার করা) দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে, গনীমতের মাল (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) আমার জন্যে বৈধ করা হয়েছে, আমার জন্যে সকল ভূমিকে পবিত্র ও সিজদার উপযুক্ত করা হয়েছে, আমি সকল মানুষের তরে প্রেরিত হয়েছি এবং আমার মাধ্যমে নবুওয়ত পরস্পরা শেষ করা হয়েছে। (সহীহ মুসলিমঃ১১৯৫)

৫। তাঁকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসা ঈমানের দাবী।

যে ব্যক্তির মধ্যে রাসূলের ভালবাসা থাকবে না, সে কোনো দিন মুমিন হতে পারবে না। এমনকি নিজের জীবন থেকেও তার প্রতি বেশি ভালবাসা থাকতে হবে। কুরআনুল কারিমে বলা হয়েছে

নবী সা.মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। (সূরা আল-আহযাবঃ ৬)

এ বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণঃ

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার সন্তান, পিতা ও সমগ্র মানুষ হতে প্রিয়তম হবো।” অর্থাৎ সবার চেয়ে তাকে বেশি ভালবাসতে হবে। (সহীহ বুখারীঃ ১৪)

৬।তাঁর শাফা‘আত কবুল হবে।

কিয়ামাতের কঠিন মুসিবতের দিনে আল্লাহ তা‘আলার অনুমতিক্রমে তিনি গুনাহগার উম্মাতের জন্য শাফা‘আত করবেন। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

কিয়ামতের দিন আমি সকল আদম সন্তানের নেতা। এতে কোনো গর্ব-অহঙ্কার নেই। সেদিন আমার হাতে প্রশংসার ঝাণ্ডা থাকবে তাতে কোনো গর্ব-অহঙ্কার নেই। আদম থেকে নিয়ে যত নবী-রাসূল আছেন সকলেই আমার ঝাণ্ডার নীচে থাকবেন। আমি হচ্ছি প্রথম সুপারিশকারী এবং আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম কবুল করা হবে। এতে কোনো গর্ব-অহঙ্কার নেই। (ইবন মাজাহঃ ৪৩০৮)

৭। তিনিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি।

তিনিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি হবেন। এ বিষয়ে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
জান্নাতের দরজায় আমিই সর্বপ্রথম করাঘাত করব, তখন খাযেন (প্রহরী) জিজ্ঞেস করবে, কে আপনি? আমি বলব, মুহাম্মাদ। সে বলবে, আপনার জন্যেই খোলার ব্যাপারে নির্দেশিত হয়েছি, আপনার পূর্বে কারো জন্যে খুলব না।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধদেবাশীষ সরকার‘এর একগুচ্ছ কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধবনপাড়া হাইওয়ে থানার উদ্যোগে কমিউনিটি পুলিশিং ডে অনুষ্ঠিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে