আমি চাই, সবাই কবিতা লিখুক!- আজাদুর রহমান

0
751
Azadur

আমি চাই, সবাই কবিতা লিখুক!- আজাদুর রহমান

মনে আছে ক্লাস ওয়ানে যে সকল সহপাঠীদের সাথে পড়াশুনার হাতেখড়ি হয়েছিল, তাদের মধ্যে বড় জোর এক/দুই জন ভাল(!) চাকরি পেয়েছে। বেশিরভাগ কোন মতে মেট্রিকুলেশন পাশের পর পড়া ছেড়ে দিয়েছে, কেউ কেউ তার আগেই বাবার সাথে কৃষিকাজে বা নিদেন পক্ষে ভ্যান চালাতে শুরু করেছে, অনেকেই আবার বার বার ফেল করে পিড়া বাদ দিয়ে দিয়েছে। ইন্টারমেডিয়েটে গিয়েছে শতকরা দশ ভাগের মত। এরপর যা বল্লাম, শেষমেশ কেউ প্রাইমারি বা হাইস্কুলের মাস্টার, দু এক জন এনজিও, একাত জন পুলিশ কন্সটেবল…ইত্যাদি হয়েছে! হাতে গোনার যোগ্য নয়! দুই বা একজন ভালো(!) চাকরি পেয়েছে। তাহলে কি দাঁড়ালো! দু এক জন ছাড়া বাকিরা যেহেতু কাজের কাজ (!) কিছুই করতে পারেনি, সুতরাং সবার লেখাপড়া করার দরকার নাই! শুধু যে দু একজন ভাল ছাত্র(!), তারাই পড়বে!!!
না, সকলেই পড়বে, যারা ফেল করেছিল, যারা লেখাপড়া বাদ দিয়ে ভ্যান চালিয়েছিল, যারা কৃষিকাজ, দোকান অথবা ছোটখাট ব্যাবসায় যোগ দিয়েছিল-তারাও কমবেশি শিক্ষিত হয়েছে, আর মানুষ হয়েছে আরও বেশি, এমনকি চাকরি পাওয়া সেই দু একজনের চেয়ে বড় মনের মানুষ হয়েছে তারা। যে টুকু লেখাপড়া।তারা করতে পেরেছিল, তার উপর দাঁড়িয়েই তারা জমা করেছিল মানুষ হবার পুজি।

এবার আসুন কবিতায়, আমি মনে করি সকলের কবিতা লেখা উচিত, এটা সত্য যে, ভাল চাকরি পাবার মত দু এক জন হয়ত সত্যিকারের কবি হবেন! কিন্তু কবিতা লেখার আনন্দ সবার হোক। কবিতা যারা লেখে তারা বড়জোর হিংসুক হতে পারে, অন্তত হিংস্র বা খুনী হয় না। কবিতা লিখে ভাল কবি হবার দরকার নাই! ভাল কবি হয়ে ওঠার চেস্টার মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা আছে, আনন্দ নাই! বরং খারাপ ছাত্র (খারাপ কবি!!), ফেল করা ছাত্র( ফেল করা কবি!) তারাই কবিতা লিখে বেশি আনন্দ পায়! সবাই লিখুক না! ভুলভাল, অনুকরণ, নকল যা খুশি লিখে যাক, আনন্দ পাক, যে বড় হবার সে অন্যদের অতিক্রম করে সবলে এমনিতেই বৃক্ষ হয়ে উঠবে! তাছাড়া এসবে কি তেমন যায় আসে, আজ মরলে কাল দুই দিন! কে।কাকে প্রয়োজন ছাড়া মনে রাখবে! সবচেয়ে বড় কথা হলো, স্ট্যান্ডার্ড বলে কিছু তেমন নাই, দিন শেষে সব।সমান। কোন কিছুই আসলে তেমন কোন কিছু নাই। আমি চাই সবাই কবিতা লিখুক, কোন প্রকার পড়াশুনা ছাড়াই লিখুক, কম বেশি সকলেই কবি হয়ে উঠুক, সহজ আনন্দ পাক। প্রচুর চেস্টা করে ভাল কবি( ভাল ছাত্র!) হয়ে প্যারা নিয়ে কবিতা লিখে কপট আনন্দ পাওয়ার চেয়ে ফেল করা কবি( ফেল করা ছাত্র) হয়ে কবিতা লিখে সহজ আনন্দ পাওয়া শ্রেয়। কবিতা লিখে জিতে যাবার কিছু নাই, ক্ষমতাভাবাপন্ন ভাবার কিছু নাই, এমনকি সামান্য বিখ্যাত হবার আগের স্টেজটিও শান্তিময়, সুন্দর!!

না হয়, অনেকেই আমরা ফেল করা কবি ই হলাম!!
সুখের চেয়ে শান্তি ভাল, যারা বিরাট কবি হয়ে সুখ পেতে চান, তারা প্রচুর পড়াশুনা করুন, প্যারা নিন!

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধকাটতেছ ধান কাটো- কবি কামাল খাঁ এর সমকালীন ছড়া
পরবর্তী নিবন্ধমহামৃত্যু- আতোয়ার হোসেন এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে