শাহিনা রঞ্জু : সম্পাকে জিজ্ঞেস করলাম সমুদ্রে সূর্যোদয় দেখতে যাবে কিনা। সে সাথে সাথে আনন্দের সাথে বললো নিশ্চয়ই যাবো। আমরা দুজনে সাগর পাড়ে গিয়ে একটা দোকানের সামনে রাখা ইজি চেয়ারে বসলাম। দোকানদার কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছিলো। তার তরমুজগুলো একটা চাদর দিয়ে ঢাকা ছিল।
তখনো অন্ধকার কাটেনি। আমাদের বসতে দেখে একটা কুকুর এসে ঘেউঘেউ করতে শুরু করলো। আমাদেরকে চোর ভাবছিল মনে হলো। কয়েকবার ঘেউঘেউ করে অন্য কোন কুকুরের সাড়া না পেয়ে চলে গেলো। মনে হলো সংগী সাথী ডাকতে চলে গেলো।
গতকাল সন্ধ্যায় যেখান থেকে সূর্যাস্ত দেখেছিলাম নিশ্চয়ই তার বিপরীত দিক থেকে সূর্যোদয় দেখতে হবে। সৈকতে হাটা শুরু করলে পূর্বদিকে যাওয়া যাবে কিনা কাউকে জিজ্ঞাসা করা দরকার। কাউকে দেখেছিলামনা। দুরে কয়েকটি নৌকা ছাড়া কাউকে চোখে পড়লোনা।
কয়েক মিনিট পর দেখি একটা লোক মনে হচ্ছে নৌকা থেকে নেমে আসছে। আমরা এগিয়ে গিয়ে হাত ইশারায় ডাকলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম এখান থেকে হেটে পূর্ব দিকে হেটে যেতে পারবো কিনা? বয়স্ক মানুষ মাছ ধরে ফিরছিলেন। আমাকে বললেল আপনি যেতে পারবেন তবে সাগরের তীর ধরে হাটলে হবেনা।
ভিতরে রাস্তা দিয়ে ডানে বায়ে এবং কিছু জায়গার নাম বললেন। আমি বুঝতে পারলাম তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী পৌঁছানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের কে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানালো। তিনি সাথে সাথে আমাদের কে নিয়ে হাটা শুরু করল। মাইল দের এক হাটার পরে কাংখিত স্থান খুঁজে পেলাম।
একটা ভাঙা কাঠের বেঞ্চের উপরে তিনজন বসলাম। সাগরের মধ্যে নোংগর করা একটা জাহাজ দেখতে পেয়ে তিনি তাঁর ছেলের কথা মনে করলেন এবং বললেন তার ছেলে আলিম ৮ (আট) বছর ধরে নৌবাহিনীতে কাজ করছে। বাড়ী আসে কম। আমি আরও কয়েকটি প্রশ্ন করে পারিবারিক খবর নিলাম। তিনিও আমরা কবে এসেছি? কবে ফিরে যাব?
কি খাওয়া দাওয়া করছি খবর নিল। এখানে এসে আমাদের কষ্ট হচ্ছে কিনা খোঁজখবর নিলেন। ইতোমধ্যে কয়েকজন উপস্থিত হলো সূর্যোদয় দেখতে। ঐ ভদ্রলোকের নাম সোলেমান। তিনি বললেল – দেখেন মা ঐ যে সূর্য্য উঠছে।
আমরা দেখতে থাকলাম। যেন কোন অপরূপ রূপসী সুন্দরী কন্যা দেখতে এসেছি। আমি ভেবেছিলাম পানির উপর থেকে সূর্য্যটা উঠতেছে সেটা ডেখবো। কিন্তু দেখলাম যেখানে দিগন্ত তার কিছু উপরে সূর্যিমামা উঁকি দিচ্ছে। ছবি তুললাম অনেকগুলো।
কিন্তু মনে হলো কোন ছবি বাস্তবতার সাথে মিলছেনা। ভাবলাম আসলেই ক্যামেরা সব সত্য ধারন করতে পারেনা। সূর্যটা অল্প সময়ের মধ্যে অনেকখানি উপরে উঠে গেল। আমরা ফিরে আসতে শুরু করলাম।
আসতে আসতে তরমুজের খেত, টমেটোর খেত আর কি কি রবিশস্য এখানে হয় সেগুলো নিয়ে গল্প হচ্ছিল।
একটা সুন্দরী মেয়ে ঝারু দিচ্ছিল, তিনি পরিচয় করিয়ে দিলেন তার নাতবউ। আমি তার নাম জিজ্ঞেস করলাম। সে আস্তে করে কী নাম বললো বুঝতে পারলামনা। পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম না। ভিতরকার রাস্তা শেষ করে আমরা আবার সাগরের তীর ধরে হাটছি। ইতোমধ্যে কয়েকটা নতুন ট্রলার দেখতে পেলাম। সোলেমান সাহেব বললেন এগুলোই ছেড়া দ্বীপ নিয়ে যাবে।
খুব মনে পড়ছিল ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ থেকে নুসা পেনিদায় গিয়েছিলাম। এখানকার সাথে পার্থক্য শুধু ওখানে পাহাড় আছে এখানে তা নেই। তবে আমরা গিলি আইল্যান্ড দেখতে গিয়েছিলাম। গিলির সাথে অনেক মিল আছে আমাদের সেন্ট মার্টিন্সের।
তবে ওখানে বেড়াতে হয় ঘোড়ার গাড়িতে আর এখানে ভ্যানে। ভ্যানে বেড়ানোও মজার তবে লোকজন বেশী হলে সবই ম্যানেজ করা কঠিন। শুধু মনে হচ্ছিল এখানে এটা থাকলে ভাল হতো। ওখানে এটা করলে ভাল হতো। আর ভাবছিলাম আমি কেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক হলামনা। এখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কী করে? ওদের কোন প্লান আছে কীনা জানতে ইচ্ছে করছে।
এসব খোজ কিছুটা কাদেরের কাছ থেকে পাবো ভেবে আর কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলামনা। তবে ভাষা একেবারেই বুঝতে পারছিনা। বাংলা ভাষা যে এতোটা অপরিচিত হতে পারে এখানে না এলে বুঝতেই পারাতামনা। তবে লোকজন আমাদের সাথে কথা বলার সময় অত কঠিন ভাষা ব্যবহার করেনা।
আমার ছোটমেয়ে সেতো শেখার জন্য অস্থির। সে কাদেরকে বলেছিল “মামা আপনাদের কথা শিখতে হলে আমাকে কী করতে হবে?”
কাদের- এখানে ৫/৬ দিন থাকতে হবে।
আমরা কুটিরে ফিরে এসে দেখি তখনো কেউ ঘুম থেকে ওঠেনি। শেখ মুজিব স্যার ঘুম থেকে উঠলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আমরা ছেড়া দ্বীপ যাচ্ছি কিনা।
সমুদ্রে সূর্যোদয়
১৫/২/২০২০