নাটোর পৌরসভার মেয়র বরাবর খোলা চিঠি

0
346
nATORE KANTHO

মাননীয় মেয়র,
নাটোর সিটি কর্পোরেশন।

আমার শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন।
কেমন আছেন? নিশ্চয়ই খুব চাপের মধ্যে? আমার দৃঢ় বিশ্বাস ধৈর্য্য ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে আসবে। এখন নাটোর সম্পর্কে আমার অনুভুতি ও তদ্সংশ্লিষ্ট কিছুকথা আপনাকে জানাতে ইচ্ছা করছে। তাহলে জানাই।

নাটোর। ঐতিহাসিক নাটোর। আমার জন্মস্থান নাটোর। বিভিন্ন বয়সে বিভিন্নভাবে দেখা নাটোর কার্যোপলক্ষে প্রায় ১২ বছর বাইরে থাকায় নাটোরের সাথে ঘনিষ্ঠতা একটু আলগা হয়ে যায়। তবে যোগাযোগ ছিল। বর্তমানে নাটোরে অবস্থান করছি। এই পরিণত বয়সে নাটোরকে যেমনটা দেখলে ভাল লাগতো তেমনটা দেখছি না, তবু নাটোর ভাল লাগছে।

এর ধূলিকনার মধ্যেও আমার অস্তিত্বের ঘ্রাণ পাই। তাই নাটোর স্মৃতিময়, প্রাণময়। নাটোর যে অবস্থায়ই থাক না কেন আমার ভাল লাগবে, আমি যতটা দেখছি আপনি তার চেয়েও বেশি দেখছেন, কারণ কাউন্সিলারগণ নিজ নিজ এলাকার নানা সুবিধা অসুবিধার কথা আপনাকে জানাচ্ছেন।

সমস্যা সমাধানের জন্য আপনি চেষ্টাও করছেন। ইতোমধ্যে তা লক্ষ্যও করছি। উলে­খ্য, নাটোরের গোড়ার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পূর্বে রাজশাহীর চেয়ে নাটোরের গুরুত্ব বেশি ছিল। পরবর্তীকালে বন্যা কবলিত হওয়ায় নাটোরে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়।

তা থেকে পরিত্রান পাবার জন্য ও প্রশাসনিক সুবিধার্থে ব্রিটিশ সরকার নাটোরের চেয়ে রাজশাহীর গুরুত্ব বেশি দেয়। ’৪৭ এর স্বাধীনতার পর রাজশাহী গুরুত্ব বেশি পায়। এতদ্সত্বেও নাটোরের গুরুত্ব কমেনি। যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব ও উত্তরা গণভবনের জন্য নাটোরের গুরুত্ব বেড়েছে।

তাছাড়া অর্ধবঙ্গেশরী রাণী ভবানী ও বনলতা সেনের কথা তো ইতিহাস-সাহিত্যে ছড়িয়েই আছে। নাটোর সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু নাটোর একটা বর্তমানে নোংরা ও আবর্জনাময় শহরে পরিণত হয়েছে। এটা দুঃখজনক। আরও দুঃখজনক ও বিব্রতকর আপনার অবস্থা।

কারণ এই রকম একটা অবস্থায় আপনি দায়িত্ব পেয়েছেন। তবে আমরা নাটোরবাসী আশাবাদী। এই আশাবাদের কারণ এই প্রথম মেয়রের পদ অলঙ্ক্ত করেছেন একজন নারী- আপনি। শ্রীশ্রী চন্ডীতে পড়েছি মহাশক্তি শ্রী শ্রী দুর্গা সকল নারীর মধ্যেই অবস্থান করছেন। সেই মহাশক্তি আপনার মধ্যে বিকশিত হোক।

দশহাতে নাটোরবাসীর সেবায় আত্মনিয়োগ করুন। উপকৃত হোক নাটোরবাসী। এই আশাবাদের আরও একটা কারণ আছে। আপনি একজন জ্ঞানী বড় মানুষ বাবু শ্রীঁ শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরীর কন্যা যিনি পরার্থে জীবন উৎসর্গ করেছেন। ক্ষমতা, অর্থ-বৈভব কোন কিছুর প্রতিই আপনার আকাক্সক্ষা নেই। জনসেবাই আপনার একমাত্র উদ্যেশ্য।

নির্বাচনপূর্ব বহু বক্তৃতায় আপনি একথা বলেছেন এবং আমরাও সেটা বিশা¦স করি। আমরা এটাও বিশ্বাস করি আপনি শান্ত অথচ দৃঢ়চিত্তে সমস্যা সমূহ চিহ্নিত করে কাজে নেমে পড়েছেন। তবে চলতে ফিরতে দেখা ও কানে শোনা বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকমের কথা ও মনোভাব বিশ্লেষণ করে নাটোরের একটি চিত্র আপনার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

আচ্ছা, চেষ্টা করি আপনি যাতে স্বচক্ষে দেখতে পান।আপনি ব্যস্ত মানুষ। কাজেই হেঁটে বা গাড়ীতে চড়েও শহরটা দেখা কঠিন। বিপদও আছে। গাড়ীর চাকা বহুদিনে সঞ্চিত পচা ক্লেদযুক্ত উন্মুক্ত ড্রেনের মধ্যে পড়ে যেতে পারে। অথবা বহুদিনের অযতেœ থাকা ভাঙ্গা বাড়ী হুড়মুড় করে গাড়ীর উপর পড়তে পারে।

অথবা কোন ধনী ব্যক্তির স্কুলে-না-যাওয়া ছেলের অপ্রয়োজনীয় আবদার রক্ষার্থে কেনা মটরসাইকেল অদক্ষ হাতে দ্রুত চালানোর কারণে আপনার গাড়ীর সাথে ধাক্কা খেতে পারে। অথবা গাড়ীর উপর উঠে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে সবার অথবা কারও শ্মশান বা গোরস্থানে শেষ যাত্রা করার সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

বিপদ এখানেই শেষ নয়। চার্জ বাহিত রিক্সা বা অটো অদক্ষ চালকের কারণে গাড়ীর সাথে ধাক্কা খেতে পারে। আবার কোথাও অপেক্ষা করতে হতে পারে সাইড পাবার জন্য। কারণ ড্রেন তৈরী হচ্ছে অথবা কোন ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে মাল খালাস করা বা ভর্তি করার জন্য।

কোথাও বা বাড়ী নির্মাণ সামগ্রী যেমন ইট, বালু, সিমেন্ট, ইটের খোয়া প্রভৃতি পড়ে রয়েছে, যেগুলো রাস্তাটি (রাস্তা নয় লেন, বাই-লেন, বাই-বাইলেন) চলাচলের অযোগ্য করে ফেলেছে। এমনি এক অবস্থায় হয়তো কান্ডজ্ঞানহীন কোন রিক্সাচালক/অটো চালক/মটর সাইকেল চালক উভয়দিক থেকে ঢুকে পড়ে যানজটের সৃষ্টি করেছে।

আবার কোথাও এমন জায়গাও পাবেন যেখান দিয়ে যেতে আপনার কোমর ও মাথা ঝাঁকী ও ঠক্কর খেতে খেতে বেদনা যুক্ত হতে পারে। কোমড়ের ব্যাথাটা স্থায়ীও হয়ে যেতে পারে। আর রিক্সায় যাওয়া যে কী কঠিন তা সহজেই অনুমেয়। আবার দিনমাস না দেখে বের হওয়াও ঠিক হবে না।

কারণ শুক্রবার পূর্বাহ্নে কিছু বাড়তি লোকের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। ভাবছেন এরা আসে বাজার করতে বা কাজের সন্ধানে। না, এরা আসে ভিক্ষা করতে। কেউ কেউ দু একটা পয়সা দেয়, কেউ মাফ চেয়ে নেয়। এরা ভিক্ষা করে কেউবা শখে নাতি-নাতনীদের হাতে কিছু দেবার জন্যে।

কেউবা নেশায়, কেউবা পেশায়, আবার কেউবা ছেলে নেশাখোর, বাবা-মাকে ভাত দেয় না তাই এই সহজ পথ বেছে নিয়েছে। তবে মনে হয় সত্যি সত্যিই কিছু আছে যারা মানুষের কাছে দাবী রাখে সাহায্য-সহযোগিতা পাবার। তবে স্থলপথে শুধু আংশিক চিত্র পাওয়া যায় নাটোরের। তাও নানাবিধ অসুবিধার মধ্য দিয়ে।

জলপথে ঘুরবেন? সেখানেও সমস্যা। জলাশয়গুলো পরস্পর সংযুক্ত নয়। লালদীঘি ও জয়কালী দীঘি বলে পরিচিত এই দুটি দীঘিতে জলপথে বের হলেও নাটোরের আংশিক চিত্র পাওয়া যায়। উভয় পাড়ের বাসিন্দারা যাদের একটু আর্থিক সামর্থ আছে তারা তাদের জায়গা বৃদ্ধির লোভ সামলাতে পারেনি। তাই দীঘিগুলি সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে।

বাড়ীর বর্জ্য পদার্থ বের হবার ড্রেন দীঘির সাথে সংযুক্ত। মৎস্য চাষ হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে। ফলে জল অব্যবহার্য হয়ে পড়েছে। সাংসারিক ধোয়া-মাজা কাজ দূরে থাকুক, উঠতি-বয়সের ছেলে-মেয়েরা সাঁতার শিখতে বা কাটতে পর্যন্ত পারে না। সচরাচর দেখা যায় পুকুর, দীঘি, নদীর পাড়ের ছেলে-মেয়েরা সংগত কারণেই সাঁতার শিখে।

যারা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাদের কেউ কেউ সুবিধা পেলে নিজের তাগিদেই শিখে। সাঁতার শিখা মানে বাঁচতে শিখা। পত্রিকা খুললেই প্রায়ই দেখা যায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছেলে-মেয়েরা কোথাও বেড়াতে গিয়ে জলে ডুবে মারা গেছে। দূরে কেন এই শহরেই দু’একজন পিতার করুণ মুখ প্রায়ই চোখে পড়ে।

একজনের ছেলে ঢাকায় পড়তো। বুড়িগঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে ডুবে মরেছে। আরেক জনের ছেলে মামার বাড়ী বেড়াতে গিয়ে নদীতে স্নান করতে ডুবে মরেছে। যারা অন্তত স্কুলে পড়েছে তারা জানে ‘বাবু ও মাঝি’র গল্প। মাঝি মূর্খ তাই তার জীবনের বার আনাই মিছে। আর বাবু সাঁতার জানে না জন্য তার ষোলো আনাই মিছে।

তাই সাঁতার শিখা জরুরী প্রয়োজন, সাঁতার শিখা সম্ভব এমন প্রত্যেকের। তাই সিটি কর্পোরেশন এবং জেলা প্রশাসনের পরিচালনায় একাধিক সুইমিং পুল থাকা দরকার যেখানে যথাসম্ভব সকল বয়সের নারী-পুরুষ বিশেষ করে উঠতি-বয়সের ছেলে-মেয়েরা সাঁতার শিখতে পারে।

ওহো! আমি তো ধান ভাঙ্গাতে শিবের গীত গাইতে বসেছি। আসল কথায় যাক।তাহলে দেখা যাচ্ছে জলাশয়গুলো পরস্পর সংযুক্ত না থাকা, জলের বাজে গন্ধ এড়ানো ও শুধু আংশিক চিত্র পাওয়া যাবে জন্য এপথও গ্রহন যোগ্য নয়। যে পথেই যাই না কেন আততায়ী কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে আপনার।

তবে আকাশ পথই অপেক্ষাকৃত কম বিপদ-সংকুল এবং স্বল্প সময়ে ঘোরা যায়। কিন্তু আকাশযানে ঘোরা ব্যয়-সাপেক্ষ। তাহলে উপায়? উপায় আছে। সেটা ঋষি (সকল ধর্মীয় মতে যাঁরা সত্যদ্রষ্টা) আবি®কৃত উপায়। সত্য দ্রষ্টারা এশক্তি অর্জন করে ব্যবহারও করেছেন।

এটা হচ্ছে শরীরটাকে নিরাপদে রেখে সুক্ষè শরীরে বের হওয়া এবং কার্যশেষে পুনরায় স্থূলদেহে প্রবেশ করা। প্রয়াত সত্যদ্রষ্টারা প্রয়োজনে সুক্ষè শরীর ধারণ করে আবার বিলীন হন। সাধারনের জন্য এ উপায় দুঃসাধ্য তবে অসাধ্য নয়। তবে আমার এ শক্তি নেই। কাজেই এই উপায়ও বাতিল করতে হচ্ছে।

সর্বশেষ একটি উপায় আছে। এতে থাকবো আমরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে এবং অল্প সময়েই আমাদের কাজ হাসিল হবে। আমরা মন-হেলিকপ্টরে চড়ে মানসচোখে গোটা শহরটা প্রদক্ষিণ করবো আর হৃদয় দিয়ে তা উপলব্ধি করবো। ঠিক এখনি যাত্রা শুরু করি। চোখবদ্ধ করুন।

দেখুন আপনার অফিসের পাশেই মৃত নারদ নদের লাশ। পচা দূর্গন্ধযুক্ত। মশা-মাছিসহ নানা রোগ জীবানুর প্রসূতি। দেখুন বড় পোষ্ট অফিসের সামনে পাবলিক টয়লেট। অব্যবহার্য্য। ঐ যে ড্রেনটা দেখা যাচ্ছে পূর্বদিকে ওটা প্রায় ২’-২ গভীর, অত্যন্ত পচা-দূর্গন্ধময়-ক্লেদপূর্ণ।

সন্ধ্যার পর কোন গাড়ী আসতে দেখে কেউ যদি সাইড দিতে থাকে তখন গাড়ীর আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গেলে বেখেয়ালে আচমকা তার পা ড্রেনে পড়ে যেতে পারে (পড়েছেও)। তখন তার বাকী জীবনটা স্ক্রাচে ভর দিয়ে তাকে হাঁটতে হতে পারে, এমন সম্ভবনা আমরা অস্বীকার করতে পারি না।

এবার আমরা উত্তরদিকে ঘুরি। কানাইখালী মাঠ। গরু-ছাগলের খাদ্যের যোগান দিচ্ছে। সংস্কার নেই। মাঝে মাছে দু-চারজন ফুটবল প্রাকটিস করে। এগিয়ে চলি। ঐ দেখুন গোরস্থানের পাশে খাল-নর্দমা, বাজারের রাস্তা, পুরানো বাসস্ট্যান্ড ও গলির অবস্থা। এবার পশ্চিম দিকে এগিয়ে চলি।

ডান দিকে বঙ্গোজলের মোড়। ড্রেন গুলির অবস্থা দেখুন। রাস্তার ডানদিকে ‘মনোবীনা সংঘ’ ও তার সামনে উন্মুক্ত ড্রেন। দেখুন কালী দীঘি ও লালদীঘির অবস্থা। জয়কালী দীঘির পশ্চিমে ঐ যে দু-একজন ঢুকছে ও বের হচ্ছে। সারদিনই এখানে কিছুলোক যাতায়াত করে। ওখানে গিয়ে তারা যা খায় তার নাম লোকে বলে চুয়ানী।

এটা ষ্টমাক, লীভার, কিডনী, হার্ট প্রভৃতির বারোটা বাজিয়ে জলীয় বর্জ্য পদার্থ হিসাবে নির্গত হয়। পঞ্চাশোর্ধ মানুষের কথা বাদ দিলাম, উঠতি-বয়সের ছেলেদের চরম ক্ষতি হয়। মানব শরীর দেহ, মন ও আত্মা নিয়ে গঠিত। এটা গ্রহনে এইগুলির সুষম বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

এমনিতেই আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থায় মানুষ তৈরীর শিক্ষা নেই। আছে সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষা। শুধু পড়ে-শুনে, জেনে জীবনকে তৈরী করা যায় না। যায় এর অনুশীলনে। এই শিক্ষা অর্জনের কারণে দেশের এ সার্বিক অবস্থা। তাই বুদ্ধিমান ও মেধাবী ছেলে-মেয়েরা সহজেই বিপথে চলে যায়।

ভুল আদর্শে এরা সহজেই জড়িয়ে পড়ে। এদের জীবন খড়, বালু দিয়ে তৈরী বাড়ীর মতো। হালকা বাতাসে সহজেই উড়ে যায়। শক্ত পদার্থে তৈরী বাড়ীর মত যদি সুস্থ আদর্শে অনুশীলিত হয়ে জীবন তৈরী হতো তাহলে অতো সহজে তাদের বিপথে নিয়ে যাওয়া যেতো না।

আর ঠিক এ কারনেই জীবন কীভাবে তৈরি করতে হয়, কীভাবে যাপন করতে হয়, মানবজীবনের লক্ষ্য কি, উদ্দেশ্য কি, এসব না জেনে বোকার মতো টাকা ও পার্থিব ধন-সম্পদের পিছনে মানুষ ছুটছে। আসল শিক্ষা পেলে এরা বুঝতো, উপলব্ধি করতো, এগুলির প্রয়োজন কতটুকু, কতদিন। তাই শুধু জানা নয়, হওয়াই হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।

শরীর গঠনের জন্য ব্যায়াম, যোগ-ব্যায়াম প্রভৃতি এবং স্বাস্থ্য ও বিনোদনের জন্য সব রকমের আউটডোর ও ইনডোর খেলাধুলা প্রয়োজন। ‘শ্রীশঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী’ স্টেডিয়ামে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার প্রশিক্ষণ হয়। এটা আশার কথা। তবে প্রচার কম, ব্যাপকতা দরকার।

তবে নাচ-গান প্রভৃতি বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হয়। বিনোদন ও শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে নাটক-থিয়েটার ‘সাকাম’ ও ‘ইঙ্গিত’এর উদ্দ্যোগে মোটামুটি নিয়মিত হয়। নাচ-গান, নাটক, থিয়েটার মঞ্চায়নে এই প্রতিষ্ঠানগুলি বেশ সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলেছে।

এই দেখুন আবার অন্যদিকে চলে গিয়েছি। ফেরা যাক আসল উদ্দেশ্যে।ঐ দেখুন চৌকিরপাড় এলাকার পাশ দিয়ে খালটি বন্ধপ্রায়। আবার দীঘিগুলির অতিরিক্ত জল বের হবার পথগুলি সব বন্ধ হয়ে গেছে।

দক্ষিনে চলি, দেখুন বিহারী-জিউ আখড়ার পিছনের পুকুরটি জ্যোৎস্নারাতে সবুজ মাঠে একটু বিশ্রামের আশায় কেউ গেলে কাদার পাঁকে পড়ে সাহায্যের জন্যে তার ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চীৎকার শুনে আশেপাশের বাসিন্দাদের ছুটে আসতে হতে পারে। এই পুকুর নিয়ে নাকি মামলা-মোকদ্দমা চলছিল, মিটেছে।

শহরের সৌন্দর্য্য কীভাবে নষ্ট হচ্ছে। এখন পূর্ব দিকে যাই। দেখুন পুরানো ঢাকা বাসস্ট্রান্ড ও পাশের ড্রেনের অবস্থা। ঐ যে একাধিক তালাবিশিষ্ট বাড়ীগুলি দেখছেন, এগুলো নানা পেশায় নিয়োজিত বুদ্ধিজীবিদের বাড়ী। কিন্তু অনেকের বাড়ীর সামনের ড্রেন উন্মুক্ত, ময়লাযুক্ত।

কারণ এটা নিজের নয়, সিটিকর্পোরেশনের। কী আত্মকোন্দ্রিকতা! আগেই যেটা দেখানো উচিৎ ছিল, হয়নি। সেটা হচ্ছে ঐ যে দেখা যাচ্ছে লালবাজারে অবস্থিত দুই দীঘির মাঝখানে একতলা বড় ভবনটি। সেটা রী শ্রীশ্রী জয়কালী মাতার মন্দির। এই মন্দিরটির ভিতরের ড্রেনটিও প্রায় নর্দমা হয়ে পড়েছে।

পরিস্কার করা যায় না। কারণ জল বের হবার যে পথ তা মন্দিরের এক কোনা দিয়ে বের হয়ে সামনের রাস্তার তল দিয়ে মসজিদের সামনে দিয়ে লালদীঘির সাথে মিশেছে। সেইপথ কী যেন কারণে বন্ধ হয়ে যায় যা প্রকৌশলীরাই ভাল বলতে পারবেন।

এটা ঠিক করাতেও নাকি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। ব্যয়বহুলও বটে। জানা যায় এই মন্দির ভবনটি বাদে দেবোত্তরের সব সম্পত্তি খাস হয়ে গেছে। কারণটা অস্পষ্ট। শুনেছি সরকার এই জয়কালী দিঘি লিজ দেয়। তাও আবার দীর্ঘ মেয়াদী। শুনেছিলাম বর্তমান সরকারের গত টার্মে এটা বাতিল হয়েছিল।

হইকোর্টে আবার স্টে হয়েছে। এদিকে দেবোত্তরের খরচ বাবদ সরকারী বাৎসরিক বরাদ্দ মাঝে মধ্যেই বন্ধ হয়। আবার ৮/১০ বছর পর কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেটা আবার আসতে থাকে। আবার বন্ধ হয়ে যায়। এই বন্ধ-চালুর খেলা চলছে ’৫০ সালের রাজা-জমিদারের সম্পত্তি অধিগ্রহণের পর থেকে।

উলে­খ্য, এই বাৎসরিক বরাদ্দ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ২০০০ সালে শ্রী কালীপদ বাদ্যকরের (সেই সময় এখানে ঢাক বাজাতো ৮০ বছর বয়স্ক একবৃদ্ধ আর আমি মন্দির সংলগ্ন বাসা থাকতাম) একান্ত অনুরোধ ও আকুতিতে বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর দরখাস্ত দিয়েছিলাম তারই ভাষ্যে।

তারপর সেই আবেদনপত্র প্রধানমন্ত্রী-ধর্মমন্ত্রণালয়-ভূমি মন্ত্রণালয়-জেলা প্রশাসক-শ্রী কালপদ বাদ্যকর এর নিকট চিঠিসহ আসে। চাওয়া হয় একটি স্পষ্ট কপি। উহা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট জমা দিলে উনি উহা ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠান। কয়েকবার আমি স্বয়ং মন্ত্রণালয়ে যাই ও প্রাণান্তকর চেষ্টার পর বরাদ্দ মঞ্জুর হয়ে প্রশাসকের নিকট আসে।

কয়েক বছর আগে বকেয়াও পায়। আবার অজ্ঞাত কারণে অনিয়মিত হয়ে যায় ২০০৪-০৫ অর্থ বৎসর থেকে কোন বরাদ্দ আসেনি। সম্ভবত ২৪/১২/১২ ইং তারিখে সহকারী কমিশনার (ভূমি), নাটোর সদর থেকে পত্র গিয়েছে। তারপরে আর চিঠি দেয়া হয়েছে কিনা সে তথ্য পায়নি।

তবে ২০০৪-০৫ হতে ২০১৫-১৬ অর্থ বৎসর শেষ হয়ে ২০১৬-১৭ অর্থ বৎসর আরম্ভ হয়েছে। সর্বশেষ ১৫/০১/২০১৩ ইং তারিখের পত্র মোতাবেক এই (এ্যানুউটি) বাৎসরিক বরাদ্দ মঞ্জুর করার দায়িত্ব ধর্ম মন্ত্রণালয়ে স্থানস্তরিত হয়েছে। তারপরে কি হয়েছে সে-বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ অন্ধকারে আছি।

’৫০ সালে অধিগ্রহণের পর সরকারের সাথে রাজার যে চুক্তি হয়েছিল এবং তাতে যে বাৎসরিক বরাদ্দ ধার্য্য হয়েছিল তা ছিল তখনকার প্রেক্ষাপটে। যে কেউ শুনলে প্রথমে খুব হাসবে, তারপর প্রচণ্ড কষ্ট পাবে। এই মন্দিরের পুরোহিতের বর্তমান বেতন মাসিক ৫২ টাকা।

কাজেই বাৎসরিক বরাদ্দ বর্তমানোপযোগী করে নিয়মিত করতে হবে। এই সমস্যাটি খুবই জরুরী সমাধানের দাবী রাখে। সেই সময় যিনি যুগ্ম সচিব ছিলেন, যতদূর মনে পড়ে, তার নাম জনাব নাজমুল হুদা। দায়িত্বশীল তো বটেই খুবই সদাশয় ব্যক্তি ছিলেন।

উনার সাথে আমার কিছু কথা হয়েছিল। এখানে সেটা উলে­খের দরকার নেই। শেষে উনি বলেছিলেন ‘‘নতুন ফাইল খুলে দিলাম। বকেয়াসহ নিয়মিত পাবেন। কয়েক মাস পর বৃদ্ধির জন্য আবেদন করবেন।’’ নানা কারণে সেসব হয়ে উঠেনি। তারপর অজ্ঞাত কারণে এই বরাদ্দ আবার বন্ধ বয়েছে।

উনার কাছে সমস্ত কাগজপত্রের ফটোকপি দেয়া হয়েছিল। ফাইলে থাকার কথা। কাজেই শেষ কথা হচ্ছে এই শুধু মন্দির ভবন বাদে দেবোত্তর সব সম্পত্তি খাস হয়ে যাওয়া যদি সরকারী নীতি-নির্ধারনে হয়ে থাকে তবে, বোধয়, কিছু বলার থাকেনা। তবে ভুলক্রমে হলে দ্রুত সংশোধনযোগ্য।

কারণ আমরা বাংলাদেশীরাই তো শাসনতন্ত্রসহ সমস্ত আইন-কানুন তৈরী করেছি, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের জন্য। তখন এই জয়কালী দীঘির আয় দিয়েই দেবোত্তর পরিচালনা সম্ভব। এখন চোখ খুলুন। বড় আশা নিয়ে আপনাকে এসব দেখালাম ও শোনাালাম।

আপনার কাউন্সিলর জেনাবেলদের নিয়েবসুন। সবকিছু পর্যালোচনা করুন। যেসব সমস্যা সরাসরি আপনার এখতিয়ারভুক্ত সেগুলোর ত্বরিৎ সমাধান করুন। যেগুলো নয়, সেগুলো সমাধানে সক্রিয় প্রচেষ্টা চালান ও পরামর্শ দিন।

নাটোরবাসীর আত্মাভিমানে বাধে যখন তারা শোনে তাদের পাশেই অবস্থিত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন দূষণমুক্ত পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রধানমন্ত্রী-পদক পেয়েছে তখন তারা ভাবে নাটোর সিটি কর্পোরেশনই বা পাবে না কেন।

এইসব সমাধানের কাজে সরকারী ও স্থানীয় বরাদ্দ দিয়েও যদি ব্যয় সংকুলান না হয় তবে স্থানীয় ধনীদের শুধু ধনী নয় যাঁরা একই সাথে ধনী ও বড়লোকÑ নিয়ে বসুন। তারা অবশ্যই সহযোগিতা করবেন।

কারণ সাধারণ মানুষের অর্থ দিয়েই ব্যবসায়িক বুদ্ধি বলে তারা ধনী হয়েছেন, সামর্থ্য অর্জন করেছেন। সবার সুবিধার্থে তাঁদের দায়িত্ব তারা অস্বীকার করতে পারেন না। উলে­খ্য, মাননীয় এম.পি. ও মাননীয় মেয়র উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক ও সার্বক্ষনিক যোগাযোগ নাটোরবাসীর কল্যাণ বয়ে আনবে।

আমরা আপনার কার্যকালীন সময়েই নাটোরের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়মুখী পরিবর্তনের প্রত্যাশায় রইলাম। স বশেষে আপনার নিজের, নিকট জনদের, আপনার কাউন্সিলরগণের ও সর্বস্তরের সহকর্মীবৃন্দের নিরাপদ, নীরোগ, সফল ও শান্তিময় জীবন কামনা করি।

ইতি-
সুহাস চন্দ্র চক্রবর্তী
নাটোরবাসীর পক্ষে।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন নাটোরে
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরের প্রমথনাথ বিশী

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে