“বস্ত্রহরণ “-অনুপম সৌরিশ সরকারের কবিতা

0
357
অনুপম এনকে

বস্ত্রহরণ
=অনুপম সৌরিশ সরকার

সদ্য বিধবা মেয়েটির সবটুকু চোখের জল
তখনো শুকিয়ে যায়নি ।
ছেঁড়া শাড়িটার আঁচলে তখনো মানুষটার কপালের ঘাম ।
ছোট্ট আট বছরের ছেলেটাকে বুকে চেপে
তখনো চলছিল কষ্ট চাপার চেষ্টা ।
এমন সময় দুর্যোধনের প্রতিহিংসা
আর দুঃশাসনের লাম্পট্য নিয়ে
মহাভারতের লজ্জাকে ওরা বিবসনা করতে এলো ।
পৃথিবীর যাবতীয় নষ্টামি ওদের শরীরী বীভৎসতায়,
পৃথিবীর সমস্ত কদর্যতা
ওদের হলদে দাঁতের আস্ফালনে,
পৃথিবীর সব দানবীয়তা ওদের কুৎসিত উপস্থিতিতে ।
বদ্ধ ঘরের চাপচাপ অন্ধকারে
কিলবিল করে উঠল পোকামাকড় ।
শুরু হলো বস্ত্রহরণ ।
সাদা শাড়িটা খসে পড়ল কলঙ্কের কালি মেখে ।
মেয়েটি কৃষ্ণের আগমন প্রার্থনায়
জোড়হস্ত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“হে কৃষ্ণ,প্রাণের ভগবান,
বাঁচাও আমার শেষ সম্মানটুকু ।”
ছেলেটা কৃষ্ণের প্রতীক্ষায় ব্যাকুল হয়ে
দরজার দিকে তাকিয়ে ।
বিকট আওয়াজে খুলে গেল দরজা ।
ঘরে ঢুকল কৃষ্ণ
মুখে তার ভরসাজোগানো হাসি,
“এই তোরা এখানে কী করছিস ?
হঠ যা নয়তো জিনা হারাম করে দোব ।”
দুর্যোধনেরা সরে দাঁড়াল ।
ছেলেটা হাততালি দিয়ে উঠল,
নেচে উঠল প্রজাপতির মতো ।
সদ্য বিধবা মেয়েটি কৃতজ্ঞতায় নম্র হতে হতে
পরে নিল শাড়ি ।
কিন্তু একি ! কৃষ্ণ শাড়িতে টান দেয় কেন ?
ছেলেটা দেখল তার অসহায়া মায়ের শাড়ি
গড়াগড়ি খাচ্ছে কৃষ্ণের পায়ে ।
ছেলেটা চীৎকার করে উঠল,
“কৃষ্ণ মায়ের শাড়ি ফিরিয়ে দে ।”
ছেলেটা ঝাঁপিয়ে পড়ল কৃষ্ণের উপর,
এলোপাথাড়ি আক্রোশে ঘুষি মারতে লাগল কৃষ্ণের মুখে ।
ঠিক তখনই কৃষ্ণের হাতে ঝলসে উঠল চক্র ।
চক্র চক্রাকারে ঘুরল বনবন—বনবন—।
বাচ্চাটা দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল।
নিরূপায় মায়ের আর্তনাদেও
যে কৃষ্ণের ঘুম ভাঙে নি,
দেয়ালের সেই কৃষ্ণ চমকে জেগে উঠলেন,
তাঁর মুখে ছিটকে পড়েছে
ছেলেটার গরম রক্ত ।
===অনুপম সৌরিশ সরকার

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“অতি অভিপ্রায়ে যখন প্রযুক্তি হয় অভিশাপ”-আজিজা রুপা
পরবর্তী নিবন্ধ“আর আমাদের অসুখ নেই”-কবি বেনজির শিকদার`এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে