সকল মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের প্রতি প্রত্যাশা ও কিছু কথা-রফিকুল ইসলাম নান্টু

0
313
Nantu

সকল মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের প্রতি প্রত্যাশা ও কিছু কথা-রফিকুল ইসলাম নান্টু

মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভৌগলিক নানা করণ নিয়ে অনেক প্রাজ্ঞ বিজ্ঞ আলোচক, লেখক, কলামিস্ট এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ বিষয় ভিত্তিক আলোচনা করেছেন, লিখেছেন বিস্তর। সেই সমস্ত আলোচনা এবং লেখার মাধ্যমে জনা যায, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল যে যে কারণে তার মধ্যে অন্যতম কারণ ছিল বঞ্চনা। যে বঞ্চনা রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা,স্বাস্থ্য সহ মানুষের মৌলিক অধিকারের। একটু পেছন ফিরে অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্ত্তি সময়টা স্মরণ করলে দেখা যায়, তৎকালিন এই পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলি পশ্চিমা শাসকদের দ্বারা বারবার রাজৈনতিক ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সাধারণ মানুষ শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে, শ্রমিক তার পাওনা মজুরী থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

বাঙ্গালী যোগ্য চাকরী প্রার্থী পশ্চিমা তাবেদার না হওয়ায় চাকরী পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে বাঙ্গালীরা সংখ্যা গোরিষ্ঠ হয়েও পশ্চিমা কোটার জালে আবোধ্য থেকেছে। একেবারে তৃণমূল থেকে সর্বস্তরে পশ্চিমাদের দ্বারা শোষিত হয়েছে এই পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানের বেশির ভাগ মানুষ। সেই বঞ্চিত মানুষের চোখে ছিলো মুক্তির স্বপ্ন আর হৃদয়ে ছিলো স্বাধীনতার আকাঙ্খা। অস্বিকার করা যাবেনা যে, বঞ্চিত মানুষের সেই কাঙ্খিত মুক্তি এবং স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলো এদেশের সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

তাই পূরোজাতি তাদের কাছে ঋণি। যে ঋণ পরিশোধের দায় রাষ্ট্রের। যারা পশ্চিম পাকিস্তানের তাবেদারি তোষামদি করেছে, শুধু তারা বাঙ্গালী হয়েও সুখ স্বাচ্ছন্দে ভালো থেকেছে। তাদের কাছে যেমন মুক্তিযুদ্ধের কোন গুরুত্ব ছিলোনা, ছিলোনা স্বাধীনতার আকাঙ্খা। ঠিক তেমনি তাদের প্রজন্মের কাছেও মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা গুরুত্বহীন, গুরুত্বহীন স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রাখা বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মান। আবার এরাই সময়ের সাথে সাথে রং বদলায়, হয়ে যায় সমাজ এবং রাষ্ট্রের কর্তা।এরাই কথায় কথায় অসম্মান করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।

ইনিয়ে বিনিয়ে বলে মুক্তিযোদ্ধারা তো কোন কিছু পাওয়ার আশায় যুদ্ধো করেনি। তার মানে কি? শুধুমাত্র আপনাদের সুখ স্বাচ্ছন্দ টিকিয়ে রাখবার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজের পরিবার পরিজন ও জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করেছিলেন? না, তারা যুদ্ধ করেছিলেন, বঞ্চনা থেকে মুক্তির জন্য, ন্যায্যতা পাওয়ার জন্য। এই বাংলার বঞ্চিত মানুষের আধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, স্বাধীনতার জন্য। এবং তারা সেটি অর্জন করেছেন- জন্ম দিয়েছেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামে একটি দেশ, একটি রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্রে মানুষ তাদের আধিকারের কথা বলতে পারছে আবলিলায়,ভোগ করছে স্বাধীনতার সুফল, যারা মুক্তিযুদ্ধে কোনই অবদান রাখেননি তারাও। শুধু যোগ্য সম্মান পায়নি এই রাষ্ট্রের জন্মদাতা বীর মুক্তিযোদ্ধারা এবং তাদের পরিবার। তাই রাষ্ট্রের দায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সকল দ্বায়িত্ব গ্রহণ করা এবং সাংবিধানিক ভাবে সর্বচ্চ সম্মানীত স্থানে অধিষ্ঠিত করা।

” কিন্তু আজ দুঃক্ষের কথা, দুঃক্ষের সাথে বলতে হয় ” স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় অর্ধশত বছর ছুঁই ছাঁই হলেও, এখনো রাষ্ট্র তার দায় মোচন করেনি! সাংবিধানিক ভাবে স্বিকৃতি দেয়নি – বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। যে স্বিকৃতি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যায্য আধিকার। যেই অধিকার অধরা রেখে একবুক হতাশা নিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে এক এক করে চলে যাচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের সেই অধরা সম্মান আদায়ের ভার এখন তাঁদের সন্তানদের উপড়। আর সেই সম্মান আদায় করতে প্রয়োজন সংগ্রাম।

তাই বাংলাদেশের সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের উচিৎ, সকল ভেদাভেদ ভুলে, কারো প্ররচণায় প্ররচিত না হয়ে, উদার ভাবে, সম্ভাবনাময় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে রাজনৈতিক সামাজিক প্রশাসনিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করতে স্ব-অবস্থান থেকে বাড়াতে হবে সহযোগিতার হাত। সকল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান একজোট হয়ে পরিণত হতে হবে সম্মিলিত শক্তিতে। আদায় করে নিতে হবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাওনা ন্যায্য সম্মান। আসুন, সকল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান একত্রিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধার সম্মান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জন্মদিয়ে আদায় করি আমাদের পাওনা ন্যায্য অধিকার,প্রমাণ করি সত্যই আমরা বীরের সন্তান, আমাদের শিরায় উপশিরায় বইছে বীরের রক্ত।

রফিকুল ইসলাম নান্টু
যুগ্ম আহ্বায়ক
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, নাটোর জেলা ইউনিট।

রফিকুল ইসলাম নান্টু এর ফেসবুক ওয়াল থেকে

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের নলডাঙ্গায় চিনাবাদাম চাষে সাফল্য
পরবর্তী নিবন্ধবর্তমান পেক্ষাপট ও ছাত্র রাজনীতি- জাকির তালুকদার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে