সিংড়ার আব্দুর রাজ্জাক খাঁ’র বিরুদ্ধে এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ

0
217

নাটোরের সিংড়ার ছোট চৌগ্রামের আব্দুর রাজ্জাক খাঁ’র বিরুদ্ধে এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ

নাটোর কণ্ঠ, সিংড়া: নাটোরের সিংড়ার ছোট চৌগ্রামের আব্দুর রাজ্জাক খাঁ’র বিরুদ্ধে এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই এলাকার জনৈক মাজেম মিস্ত্রী ওরফে মজনু। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি তিনি ঢাকাস্থ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তদন্ত সংস্থার কাছে একটি অভিযোগপত্র জমা দেন। এর আগে আব্দুর রাজ্জাক খাঁ’র বিরুদ্ধে এলাকায় তার শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী।

অভিযোগে জানা যায়, রাজ্জাক ১৯৭১ সালে সরকারি তালিকাভুক্ত রাজাকার ছিলেন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য রাজাকার বাহিনীতে তিনি ভর্তি হন এবং অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে চৌগ্রাম ইউনিয়ন এলাকায় ৮ সদস্য বিশিষ্ট রাজাকার বাহিনীর কমান্ডারের দায়িত্ব পান। সেই সময় ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে ক্যাম্প কমান্ডার হিসেবে পাকবাহিনী এবং শান্তি কমিটি কে সহযোগিতা করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করেছেন। সেসময় এলাকায় গ্রামের শান্তিপূর্ণ নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করেছেন আব্দুর রাজ্জাক খাঁ। দেশ স্বাধীনের পর রাজ্জাক কৌশলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নেতৃবৃন্দের সাথে সম্পর্ক তৈরী করে ঘাপলা মেরে থাকে। এরপরে একাত্তরের হারের প্রতিশোধ হিসেবে এখনো পর্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন রকম বিশৃংখলা দলাদলি অশান্তি সৃষ্টি করে আসছে। আব্দুর রাজ্জাক খাঁ সিংড়া উপজেলার মানিক চাপড় ইউনিয়ন পরিষদ ক্যাম্পের রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। পাকবাহিনীর নির্দেশে রাজাকার বাহিনী মানিক চাপড় গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা করে। গোলাগুলিতে আব্দুল করিম এবং অফিজ উদ্দিন নামে দুই রাজাকার ঘটনাস্থলে নিহত হলে আব্দুর রাজ্জাক পালিয়ে সিংড়া রাজাকার ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।

এই সময় এসে কেন তিনি এমন অভিযোগ করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মাজেম মিস্ত্রি ওরফে মজনু জানান, আব্দুর রাজ্জাক খাঁ এখন সরকারি দলে যোগ দিয়ে একাত্তর সালের হারের প্রতিশোধ নিচ্ছে। তাই সকলে চুপ করে থাকলেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে এটা মেনে নিতে পারিনা। তাই এই অভিযোগ দায়ের করেছি।

একই এলাকার আহাদ আলী জানান, আব্দুর রাজ্জাক খাঁ একজন দুর্ধর্ষ প্রকৃতির লোক। তার বিশাল বাহিনী আছে। সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থেকে নিরীহ মানুষকে বিচারের নামে ধরে নিয়ে এসে নির্যাতন করেন। ভয়ে কেউ মুখ খুলে না।

একই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, ৭১ সালে আব্দুর রাজ্জাক খাঁ এলাকার ত্রাস ছিল। অনেক মানুষ নির্যাতিত হয়েছে তার হাতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে,অভিযুক্ত আব্দুর রাজ্জাক জানান,মাজেমের অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমার বয়স তখন ছিল ১৫ বছর। আমি তখন হাইস্কুলে পড়ি। আমি জন্মগত আওয়ামী লীগ পরিবারের লোক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। আমার এলাকার যত মুক্তিযোদ্ধা আছে, তাদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন আমার ব্যাপারে। বিভিন্ন সময়ে মাজেমের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের কারণে বিচার সালিশ করায় আমার ওপর প্রতিশোধ নিতেই এই অভিযোগ আনা হয়েছে।

সোয়াইর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব জানান, আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন। রাজ্জাকের বয়স তখন মাত্র ১৪/১৫ বছর ছিল। সে কখনোই রাজাকারে যোগ দেয়নি। তারা পারিবারিক ভাবেই আওয়ামী লীগের অনুসারী।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চৌগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম ভোলা জানান, আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। এতে তার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করার জন্যেই এমন অভিযোগ আনা হয়েছে বলে মনে করি।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকেছে পথ-ঘাট! 
পরবর্তী নিবন্ধগুরুদাসপুরে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুকৌশলে চলছে অবাধে পুকুর খনন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে